সরকারি স্কুল-কলেজ নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

আছাদুজ্জামান : ঢাকা মহানগরীর ১১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৬টি মহাবিদ্যালয় স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের ভবনসহ অবকাঠামো নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির খবর পাওয়া গেছে। তার মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে, হাজারীবাগের শহীদ শেখ রাসেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, বেগম শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব সরকারি মহাবিদ্যালয়ের ভবন ও মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান সরকারি মহাবিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়েছে।

এসব স্থাপনার সীমানা প্রাচীরের নিচ থেকে সরে গেছে মাটি। যে কোনো সময় প্রাচীর ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে। পাশাপাশি হাজারীবাগের শহীদ শেখ রাসেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এবং একই এলাকার বেগম শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব সরকারি মহাবিদ্যালয়ের দেয়াল স্যাঁতসেঁতে ও জানালা ভাঙা। সরজমিন গিয়ে এই চিত্র পাওয়া গেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির সদস্যরা সরজমিন পরিদর্শনে গিয়ে এর সত্যতা পেয়েছেন।

এরপরও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন প্রকল্পের কর্মকর্তারা। নির্মাণ কাজ দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকল্প কর্মকর্তারা এ বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে (ইইডি) ব্যবস্থা নেয়ার দায় সেরেছেন শুধু সুপারিশ করেই। আগামী দেড় বছরের মধ্যে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়া নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া বিরোধপূর্ণ জমিতে তিনটি প্রতিষ্ঠান নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করায় মামলার জালে আটকে গেছে নির্মাণ কাজ।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভবনগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হবে কিনা জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব) স্বপন চন্দ্র পাল  বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য জেলা প্রশাসক নিষ্কণ্টক জমি বন্দোবস্ত দেয়নি। নির্মাণকাজ শুরু করতে গিয়ে অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। মামলার কারণে তিনটি প্রতিষ্ঠানের নির্মাণকাজ শুরুই করা যায়নি। আশা করছি, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি হবে এবং প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে। তিনি আরো বলেন, নির্মাণ কাজের অনিয়মের বিষয়ে ইইডিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া একটি ভবন বুঝে নেয়া হয়েছে। বাকি ভবন সঠিকভাবে নির্মাণ না হলে বুঝে নেয়া হবে না।

সূত্র জানায়, তিন দফা প্রকল্প সংশোধন করে ১৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মোট নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছে ২৯৩ কোটি ৫ লাখ ২৩ হাজার টাকা। ২০১০ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১৫৭ কোটি ৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। রাজস্ব খাত থেকেই প্রকল্পের সব অর্থ জোগান দেয়া হচ্ছে।

প্রকল্পের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্মাণ ও পূর্তকাজ তদারকির জন্য প্রকল্পের উপপরিচালক ড. মো. আমিরুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটির সদস্যরা গত ৬ সেপ্টেম্বর সরজমিন তিনটি প্রতিষ্ঠিান পরিদর্শন শেষে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, হাজারীবাগের শহীদ শেখ রাসেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের প্রাচীর প্রকল্পের ডিজাইন অনুযায়ী নির্মাণ করা হয়নি। যে কারণে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে।

স্কুলে প্রবেশের সড়কের নির্মাণ কাজেও ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। হাজারীবাগের বেগম শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব সরকারি মহাবিদ্যালয়ের ভবনের নাজুক পরিস্থিতি। ভবনের জানালার কাজ ঠিকমতো না করায় বর্ষার পানি ভেতরে ঢুকে কম্পিউটারসহ মূল্যবান আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। কলেজের পূর্ব পাশের সীমানা প্রাচীর ভেঙে পড়েছে। পশ্চিম পাশের দুটি গেটে শাটার লাগানো হয়নি। পেছনের সীমানা প্রাচীরের একাংশ ভেঙে পড়েছে। মাঠ ভরাটেও ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। অনিয়মের কারণ এবং সীমানা প্রাচীর ও মাঠ পুনর্নির্মাণের ব্যয়িত অর্থের সমন্বয় কীভাবে হবে তা ইইডি কর্তৃপক্ষকে প্রকল্প ও মাউশিতে জানাতে বলা হয়েছে।

মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান সরকারি মহাবিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণেও ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। ভবনের দেয়ালে শ্যাওলা ধরে স্যাঁতসেঁতে হয়ে গেছে। বৃষ্টির পানি ভবনের ভেতরে ঢুকে দেয়াল নষ্ট হয়ে গেছে। তৃতীয় তলার পূর্ব পাশের কক্ষ, দক্ষিণ পাশের দেয়াল ও চতুর্থ তলার আইসিটি ল্যাবসহ সব কক্ষের ভেতরে কালো ফাঙ্গাস পড়েছে। নিম্নমানের কাজ হওয়ায় ভবনের প্লাস্টার ধসে পড়েছে। ভবনের পানি নিষ্কাশনেরও ব্যবস্থা করা হয়নি। সব মিলিয়ে ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।

সরেজমিন ও প্রকল্প সূত্র জানায়, ভাষানটেক মহাবিদ্যালয়ে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে এবং গত বছর ভাষানটেক সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও সীমানা প্রাচীর ও অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মিত হয়নি।

যে কারণে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। চলতি বছর শেখ জামাল সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে জমি নিয়ে বিরোধের কারণে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। ইইডির প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালা বলেন, আমাদের শিক্ষামন্ত্রী একজন শিক্ষাবান্ধব মন্ত্রী।

তিনি আমাদের অত্যন্ত স্বচ্ছতার ভিত্তিতে প্রত্যেকটি ভবন নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রাচীর কেন পড়ে গেল জানতে চাইলে তিনি জানান, মাটি সরে যাওয়ায় প্রাচীর ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এতে ভবনের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা পেলে ঠিকাদারসহ সংশিষ্টদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।