ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে আবারও পরিবর্তন!

Image

আগামী বছরের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে আবারও পরিবর্তন আসছে। এর মধ্যে বড় রকমের পরিবর্তন হচ্ছে ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বিষয়ে। এই বিষয়ে ‘অনুশীলন’ ও ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ নামে দুটি বই দেওয়ার কথা থাকলেও সেখান থেকে সরে এসেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এখন এই বিষয়ে একটি বই হবে। আর বিষয়বস্তুতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। তুলনামূলক কম হলেও অন্যান্য বিষয়েও থাকছে পরিবর্তন। এনসিটিবি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রণয়ন করা চলতি বছরের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবই নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবি। ভুলভ্রান্তি ও বিতর্কের মুখে শিক্ষাবর্ষ শুরুর ১ মাস ১০ দিন পর এই দুই শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ নামে দুটি পাঠ্যপুস্তক প্রত্যাহার করে নিয়েছিল এনসিটিবি।

আরো পড়ুন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে কাল, ডেঙ্গু শঙ্কায় শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা

এরপর আবার শিক্ষাবর্ষ শুরুর চার মাসের মাথায় এ দুটি শ্রেণির বইয়ে বানান ভুল থেকে তথ্যগত ভুল মিলিয়ে অন্তত ৪৩১টি সংশোধনী দিয়েছিল সংস্থাটি। এখন আগামী বছরের পাঠ্যবইয়ে বিষয়বস্তুসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে আগামী বছর থেকে নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষার মতো বিভাগ বিভাজন থাকবে না। সব শিক্ষার্থীকেই মাধ্যমিক পর্যন্ত অভিন্ন বিষয় পড়তে হবে। বিভাগ বিভাজন হবে উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে। এখন পর্যন্ত নবম শ্রেণিতে ঠিক হয় কোন শিক্ষার্থী কোন বিভাগে পড়বে।

জানতে চাইলে এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বুধবার বলেন, সার্বিক দিক বিবেচনা করে আগামী বছরের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। ইতিমধ্যে পাঠ্যবই লেখার কাজও শেষ করা হয়েছে। এখন ছাপার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

গত জানুয়ারি থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়েছে। আগামী বছর দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে তা শুরু হবে। এরপর ২০২৫ সালে চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে চালু হবে। উচ্চমাধ্যমিকে একাদশ শ্রেণিতে ২০২৬ সালে এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে আগামী বছর থেকে নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষার মতো বিভাগ বিভাজন থাকবে না। সব শিক্ষার্থীকেই মাধ্যমিক পর্যন্ত অভিন্ন বিষয় পড়তে হবে। বিভাগ বিভাজন হবে উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে। এখন পর্যন্ত নবম শ্রেণিতে ঠিক হয় কোন শিক্ষার্থী কোন বিভাগে পড়বে।

নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শ্রেণির জন্যই ১০টি বিষয় (শ্রেণিভেদে বিষয়বস্তুতে ভিন্নতা আছে) রয়েছে। তবে বিভিন্ন ধর্মের বই মিলিয়ে প্রতিটি শ্রেণিতে মোট বইয়ের সংখ্যা আরও বেশি।
সার্বিক দিক বিবেচনা করে আগামী বছরের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। ইতিমধ্যে পাঠ্যবই লেখার কাজও শেষ করা হয়েছে। এখন ছাপার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
এনসিটিবির সূত্রমতে, চলতি বছরের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বিষয়ে প্রাচীন ইতিহাস ও সভ্যতার ওপর অনেক বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞানের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়ের ছবি ও বিষয়বস্তু নিয়ে বেশি বিতর্ক হয়। পরে দুই শ্রেণির এই দুটি বই প্রত্যাহার করে নেয় এনসিটিবি। ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইটি ছিল মূলত ‘রিসোর্স বই’।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী বছর থেকে এই দুই শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের বিষয়বস্তুতে প্রাচীন ইতিহাস ও সভ্যতার ওপর প্রাধান্য কমিয়ে দিয়ে আধুনিক ইতিহাসের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে শুধু ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি নয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণির জন্যও ‘অনুশীলন’ ও ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ নামে দুটি পাঠ্যপুস্তক থাকার কথা ছিল। কিন্তু এখন সব শ্রেণিতেই এই বিষয়ে একটি বই থাকবে। এখন শুধু বিজ্ঞান বিষয়ে ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ ও ‘অনুশীলন বই’ নামে দুটি পাঠ্যপুস্তক থাকবে।

এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, অন্যান্য বিষয়েও ছবিসহ বিষয়বস্তুতেও কিছু কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

ছবি পরিবর্তনের কথা বলতে গিয়ে এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, ছবিগুলো অংশগ্রহণমূলক করে সব শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে। কারণ, নতুন শিক্ষাক্রমের বই সাধারণ ধারার পাশাপাশি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও পড়বে।

এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, এই দুই শ্রেণির বই লেখার কাজও শেষ করা হয়েছে। এখন ইংরেজি ভার্সনের লেখার (অনুবাদ) কাজ চলছে।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।