শিক্ষকদের অবসরের বয়স বাড়বে, মিলবে ভ্রমণ ভাতা ও স্বাস্থ্য বিমা

অনলাইন ডেস্ক ॥ কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবসরের বয়স ৬০ থেকে ৬২ করার কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার নেতাজি ইন্ডোরের শিক্ষা সম্মেলনে তাঁর এই ঘোষণায় খুশির হাওয়া শিক্ষকমহলে। একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, তাঁর সিদ্ধান্ত অপছন্দ হলে শিক্ষকেরা সরাসরি সমালোচনা করতে পারেন। তবে যেন রাজনৈতিক রং না দেখেন, সংঘাতের পথে না যান। তাঁকে ভুলে না যেতেও অনুরোধ করেন মুখ্যমন্ত্রী।

ভরা ইন্ডোরে এ দিন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য একগুচ্ছ ‘উপহার’ ঘোষণা করেন মমতা। মঞ্চে উপস্থিত শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সামনেই সরকার ও বিরোধী শিক্ষক সংগঠনগুলির উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘‘আমার লাল, নীল, হলুদ, সবুজ দেখার প্রয়োজন নেই। আগে শিক্ষা, সংস্কৃতি, মাটি বাঁচবে।’’ শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতির ছোঁয়াচ বাঁচাতে তাঁর সরকার সচেষ্ট বলেও দাবি করে মমতা বলেন, ‘‘লাল, নীল, হলুদ, সবুজ এই দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখি না। আপনারাই পথ দেখাতে পারেন। এটা আমি বুঝি।’’ তাঁর আশ্বাস, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত শূন্য পদে ছ’মাসের মধ্যে নিয়োগ হবে।

শিক্ষকমহলের একাংশের মতে, এই সরকারের শুরু থেকেই শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতির অনুপ্রবেশ এবং শিক্ষক নিগ্রহের ঘটনা অব্যাহত। বারবার এই ধরনের ঘটনায় শাসক দল অভিযুক্ত হলেও সরকারের তেমন কোনও পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। শুক্রবারই প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতিতে সরবও হন তৃণমূল সাংসদ সুগত বসু। শিক্ষকমহলেও এ নিয়ে অসন্তোষ আছে। তা আঁচ করে এ দিন শিক্ষকদের এক সাথে নিয়ে চলার কথা বারবার উঠে এসেছে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে।

রাজ্যের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভূয়সী প্রশংসা করে তাঁদের নিয়ে বছরে একবার সম্মেলন করার ইচ্ছেও প্রকাশ করেন মমতা। সেই সঙ্গে জানিয়ে দেন, শিক্ষায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ তিনি কোনও ভাবেই বরদাস্ত করবেন না। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘শিক্ষায় রাজনৈতিক দল কোনও ভাবে হস্তক্ষেপ করে না। করুক, সেটা চাইও না।’’ মুখ্যমন্ত্রীর এই বার্তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যে রং না বিচারের কথা বলেছেন, আমরাও তা চাই। শিক্ষাবিদদের হাতে শিক্ষা থাকুক। আর্থিক অনুদানের জন্য সরকারের ভরসা করব ঠিকই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় চলুক স্বশাসিত ভাবেই।’’

এর পরেই নেতাজি ইন্ডোর জুড়ে প্রবল করতালির মধ্যে মমতা বলেন, ‘‘আপনাদের অবসরের বয়স ৬২ করে দিচ্ছি।’’ করতালি থামার আগেই বলেন, ‘‘আমার ভুল হলে বলবেন। রাগ করবেন। গালাগাল দেবেন। কিন্তু অভিমান করে সংঘাতে যাবেন না। আমাকে ভুলে যাবেন না।’’ তাঁর সরকারের প্রতি শিক্ষকদের আস্থা নিশ্চিত করতে মমতা ভ্রমণ-ভাতারও ঘোষণা করেন। বছরখানেক আগে রাজ্য সরকারি কর্মীদের দেশের ভিতরে এবং বিদেশে ঘোরার জন্য ভ্রমণ ভাতা (এলটিসি) ঘোষণা করেছিলেন মমতা। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য সেই ঘোষণা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বেড়াতে যাবেন আর আমাদের কথা মনে রাখবেন।’’ একটু থেমে আবার বলেন, ‘‘আমাদের মানে বলতে চাইছি, বাংলা যাতে ভাল থাকে, সে কথা মনে রাখবেন।’’ শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের জন্য স্বাস্থ্যবিমাও ঘোষণা করেছেন মমতা। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতোই স্কুলশিক্ষকদের নিয়েও তিনি কিছু দিনের মধ্যেই এমন সম্মেলন করবেন বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী।

শিক্ষকদের আস্থা অর্জনে একের পর এক উপহারের মধ্যেই এ দিন নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির কথাও ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ধাঁচে বোলপুরে বিশ্বভারতীর কাছে ‘বিশ্ব বাংলা বিশ্ববিদ্যালয়’ গড়ে তোলা হবে বলে জানান তিনি। এর জন্য ইতিমধ্যেই জমি চিহ্নিত হয়ে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় তৈরিতে কলকাতা, যাদবপুর, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় সাহায্য করবে বলেও তিনি জানান।

কিন্তু একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির পরেও তো এ ছাত্ররা বিদেশে চলে যাচ্ছে? এই আক্ষেপ ঘোচাতে মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছে, আগামী দিনে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা এমন মানে পৌঁছতে হবে যাতে হার্ভার্ড-সহ বিদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা রাজ্যে আসে। বাংলার মেধা যাতে বিদেশে চলে না যায়, তার জন্য শিক্ষকদেরই দায়িত্ব নেওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি শিক্ষার মানোন্নয়নের কথা বলার আগেই সম্মেলন-মঞ্চে উপস্থিত উপাচার্যরা বলতে থাকেন, গত পাঁচ বছরে রাজ্যে উচ্চশিক্ষার অগ্রগতি হয়েছে।

এ রাজ্যের বহু পড়ুয়াই যে ফি-বছর দেশের বাইরে পড়তে চলে যাচ্ছে, তা নিয়ে আগেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু এ দিন তাঁর কথায় স্পষ্ট, বিষয়টি আটকানো যায়নি। রাজ্যের বহু শিক্ষাবিদও মনে করেন, উপযুক্ত পরিকাঠামোর পাশাপাশি শিক্ষার পরিবেশ নিয়েও সমস্যা রয়েছে। যাদবপুরের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস এ দিন বলেন, ‘‘শিক্ষার মান বাড়াতে আমরা যেন পশ্চিমের দিকে না তাকাই।’’ অনুরাধা লোহিয়া বলেন, ‘‘পাঠ্যক্রমের বাইরেও প্রশ্নের ছাত্ররা প্রশ্ন করলে তার উত্তর দেওয়ার মতো দক্ষতা যেন আমাদের শিক্ষকদের থাকে।’’ শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য মুখ্যমন্ত্রী এ দিন শিক্ষামন্ত্রীকে একটি কমিটি গড়ার নির্দেশে দিয়েছেন। আর শিক্ষা দফতরের বক্তব্য, উচ্চশিক্ষায় আন্তর্জাতিক মানের পাঠ্যক্রম তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।