লালমনিরহাট প্রতিনিধি,১২ ডিসেম্বর ২০২২:
লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের কাছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারিরা জিম্মি হয়ে পড়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন ফান্ড ও স্লিপের টাকা উন্নয়ন ব্যয়ের নামে দুই কোটি টাকা হরিলুটের তথ্য মিলেছে।
কর্মকর্তাদের চাহিদা মতো অর্থ দিতে না পারলে নেমে আসে হয়রানি। প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষকরা জিম্মি হয়ে পড়েছে।
আরো পড়ুনঃপ্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার।। প্রধান শিক্ষক সমিতির শোক
জানা গেছে, জেলার আদিতমারী উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১২৬টি। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ৬৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকার অবকাঠামো সংস্কার, মেরামত, রং করা বাবদ প্রতিটিতে দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। মোট বরাদ্দের পরিমাণ প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ টাকা ( ২০২০ -২০২১ অর্থ বছরে পিইডিপি- ৪ এর আওতায় এডুকেশন ইন এ্যামারজেন্সি খতে বরাদ্দ)। আবার ১২৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্লিপ ফান্ডের টাকা বরাদ্দ আসে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫০ হাজার টাকা করে (রুটিন ম্যানটেন ফান্ড)। এই ৫০ হাজার টাকা দুই কিস্তিতে ২৫ হাজার, ২৫ হাজার টাকা করে ৬ মাস পর পর বরাদ্দ আসে।
আদিতমারী উপজেলায় এবারের বরাদ্দ আসে প্রায় ৭০ লাখ টাকা। এই বরাদ্দ ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে জন্য। ১২৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্লিপের প্রথম কিস্তির ২৫ হাজার টাকা করে বরাদ্দ পেয়েছে প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ইতোমধ্যে স্লিপের প্রথম কিস্তির ২৫ হাজার টাকা দেখিয়েছে প্রধান শিক্ষকরা। রেজুলেশনের মাধ্যমে সেই খরচের ভাইচার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটিকে জমা দিয়েছে। প্রতিটি ম্যানেজিং কমিটিতে খরচের ভাইচার প্রধান শিক্ষকরা জমা দিলে এই টাকা খরচের ভাইচার নিয়ে বিপত্তি সৃষ্টি হয়।
আদিতমারীর উপজেলার বাহাদুর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এডক কমিটির অভিভাবক সদস্য মো. নুর আলম জানান, এই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. আবরারা খানম বর্তমানে বদলি হয়ে টেপাপলাশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন। তিনি বদলিজনিত কারণে বিদায়ের প্রাক্কালে রেজুলেশনের মাধ্যমে স্লিপের প্রথম কিস্তির টাকা খরচের ভাউচার দিয়ে যায়।
তার নিজ হাতে লেখা ভাইচারের হিসাবে দেখান, উপজেলা শিক্ষা অফিসার টিও এবং সহকারি শিক্ষা অফিসার এটিও কে পাঁচ হাজার পাঁচ হাজার করে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছে। জাহাঙ্গীর ক্লাক পাঁচ শত ও হেড ক্লাক কে পাঁচ শত টাকা করে ঘুষ দিয়েছে। অফিস হতে বই বাবদ দুই হাজার টাকা ও বিদ্যালয় সজ্জিত করতে এবং পোয়াত ক্রয় বাবদ জনৈক আরিফের মাধ্যমে পাড়ার শিক্ষক মাধ্যমে অফিসকে ৬৫০০ টাকা খরচ দিতে হয়েছে। সোনালি ব্যাংকের এ্যাকাউন্টে ভ্যাট কেটে রেখে স্লিপের টাকা জমা হয় ২১ হাজার ৮৭৫ টাকা। এর মধ্যে ঘুষ ও অফিস কে খরচ দিতে হয়েছে ১৯ হাজার ৫০০ টাকা। অবশিষ্ট টাকা মাত্র এক হাজার ৩৭৫ টাকা ব্যাংক এ্যাকাউন্টে জমা রয়েছে। একই অবস্থা অবকাঠামো উন্নয়নের দুই লাখ টাকার। এই দুই লাখ টাকার অবকাঠামো উন্নয়নে প্রতিটি বিদ্যালয়ে ১০/১৫ হাজার টাকা খরচ করে বাকি টাকা কর্মকর্তাদের পকেটে চলে গেছে। এভাবে প্রায় দুই কোটি টাকা হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে।