যশোর ডিজিটাল বোর্ডে এনালগ কারবার

Image

১৬ হাজার নাম সংশোধনের আবেদন পড়ে আছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ৪ মার্চ: দেশের প্রথম ডিজিটাল শিক্ষাবোর্ড যশোর। অথচ ডিজিটাল এই বোর্ডে হচ্ছে যতসব এনালগ কারবার! অবস্থা এখন এমন পর্যায়ে গেছে যে, ডিজিটাল কারবারতো নেই-ই উপরন্তু এনালগ যুগকেও হার মানাচ্ছে।

বর্তমানে মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই যশোর বোর্ডে। এই বোর্ডে আনুমানিক ১৬ হাজার নাম সংশোধনের আবেদন পড়ে আছে। এক সচিবের আইডিতে পড়ে আছে ১৩০০ আবেদন! এসব আবেদন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নিষ্পত্তি করতে সময় লাগবে ৫ থেকে ৭ বছর। সেই পর্যন্ত ভোগান্তি পোহাতে হবে আবেদনকারীদের।

আরো পড়ুন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৭ মার্চ উদযাপনের নির্দেশ

যশোর শিক্ষাবোর্ডকে দেশের মধ্যে সর্বপ্রথম ডিজিটাল বোর্ড করতে বিভিন্নখাতে কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করা হয়। সাবেক শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খানের বাড়ি যশোরে হওয়ায় তার সহযোগিতায় বোর্ডকে ডিজিটাল করার কার্যক্রম শুরু হয়। তিনি যতদিন শিক্ষাসচিব ছিলেন ততদিন ডিজিটাল কার্যক্রমে কিছুটা হলেও গতি ছিল। তখন অনলাইনে সকল আবেদন জমা ও নিষ্পত্তি করা হতো বলে সূত্র জানিয়েছে।

মোল্লা আমীর হোসেন চেয়ারম্যান হিসেবে যশোর বোর্ডে যোগদানের কয়েকদিনের মধ্যে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, যশোর বোর্ডের সকল কার্যক্রম অনলাইনে সম্পন্ন হচ্ছে। একটি আবেদনও কোনো কর্মকর্তা চাইলেও তিনদিনের বেশি আটকে রাখতে পারবেন না।

সফটওয়্যার সেভাবে তৈরি করা হয়েছে। তিনদিন পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে আবেদন পরের কর্মকর্তার কাছে চলে যাবে এবং এভাবে নিষ্পত্তি হবে। যদি তাই হয় তাহলে নাম সংশোধনের আবেদন নিষ্পত্তি হলো না কেন? কেন মাসের পর মাস পড়ে থাকলো? এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর নেই।

কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির মামলা কাঁধে নিয়ে মোল্লা আমীরের বিদায়ের পর চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন প্রফেসর ডক্টর আহসান হাবীব। তার সাথে সচিব হিসেবে আসেন আব্দুল খালেক সরকার। বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তার দাবি, এই সময়ে বোর্ডের ডিজিটাল কার্যক্রম থমকে দাঁড়ায়। বিশেষ করে সচিব খালেক সরকার তার দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেননি। এ নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করেননি চেয়ারম্যান আহসান হাবীব। ফলে, সেবাপ্রার্থীরা সেবা পাওয়ার পরিবর্তে পদে পদে হয়রানির শিকার হয়েছেন এবং হচ্ছেন। তারই একটি উদাহরণ নাম সংশোধনের আবেদন।

সূত্র জানায়, হাজার হাজার মানুষ জরুরি প্রয়োজনে নাম সংশোধনের আবেদন করে মাসের পর মাস ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। এ কারণে অনেকের জরুরি কাজ আটকে রয়েছে।

বোর্ডের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে নাম সংশোধনের আনুমানিক ১৬ হাজার আবেদন আটকে আছে। সচিবের আইডিতে মাসের পর মাস পড়ে আছে ১ হাজার ৩শ’ আবেদন।

বিপুল সংখ্যক আবেদন কবে নিষ্পত্তি হবে সেই সম্পর্কে কেউ কিছুই বলতে পারছেন না। ডিজিটাল বোর্ডের এই এনালগ কারবার নিয়ে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। নাম সংশোধনের আবেদনের স্তুপকে এনালগ হিসেবে দেখছেন অনেকেই।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার অভাবে এমন অবস্থা তৈরি হচ্ছে। তাদের কারণে সম্মান নষ্ট হচ্ছে যশোর বোর্ডের। বর্তমানে কর্মচারী নেতাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে যশোর বোর্ড। চেয়ারম্যান তাদের কথার বাইরে যেতে পারছেন না বলে একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর দাবি।

অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের ইচ্ছেমতো কাজ করছেন। সেখানে চেয়ারম্যানের কিছু বলার মতো অবস্থা নেই। যা বোর্ডের সম্মানহানি ঘটাচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই।

এ বিষয়ে চেয়ারম্যান প্রফেসর ডক্টর আহসান হাবীব বলেন, ‘কাজের প্রেশার বেশি। এ কারণে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছি। নাম সংশোধনের ২০০ আবেদন নিষ্পত্তি হলে ৩০০ আবেদন জমা পড়ছে। ফলে, ধীরে ধীরে কাজ এগুচ্ছে।’

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।