বিমানের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও: পুলিশ

Image

প্রশ্নপত্রের বিনিময়ে যারা আগে টাকা দিতে পারেনি তাদের জমি ও বাড়ি লিখে নেওয়ারও চুক্তি হয়।
নিজস্ব প্রতিবেদক,২৩ অক্টোবর ২০২২:
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসে কোম্পানিটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ‘জড়িত’ থাকার কথা জানিয়ে পুলিশ বলছে, প্রশ্নপত্র বিক্রির বিনিময়ে দুই থেকে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে।

প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় বিমানের পাঁচ কর্মীকে গ্রেপ্তারের পর শনিবার সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান হারুন অর রশিদ।

তিনি জানান, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় নাম আসা সরকারি মালিকানার এয়ারলাইন্সটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, “প্রথম দিকে সাত লাখ, পরে দুই লাখে নেমে আসে প্রশ্নপত্রের দাম।

“শুধু তাই নয়, গরীব মানুষ যারা টাকা দিতে পারেনি তাদের জমি এবং বাড়ি লিখে নেওয়ার জন্য নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তি করে এই চক্র, যার কয়েকটি উদ্ধার করা হয়েছে।”

শুক্রবার বিকাল ৩টায় বিমান বাংলাদেশের ১০০ চালকসহ বেশ কয়েকটি পদে নিয়োগে এক ঘণ্টার এমসিকিউ পরীক্ষা ছিল। ওই পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়; এরপর বাতিল করা হয় পরীক্ষা।

গ্রেপ্তাররা হলেন- বিমান বাংলাদেশের এমটি অপারেটর জাহাঙ্গীর আলম (৩৬), মাহফুজ আলম ভূঁইয়া (৩১), এনামুল হক (২৭), অফিস সহায়ক আওলাদ হোসেন (২৯) ও হারুনুর রশিদ (৪০)।

সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা কর্মকর্তা হারুন বলেন, “যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তারা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিভিন্ন মর্যাদার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে থাকেন। চক্রটি এর আগেও নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত থেকে লাখ লাখ টাকা আয় করার কথা স্বীকার করেছে।”

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা কে কত টাকা পেয়েছেন, কোন কোন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ভাগ দিয়েছেন তা জানার চেষ্টা করা হবে বলে জানান তিনি।

বিমানের নিয়োগ পরীক্ষায় মহাব্যবস্থাপক ও উপ মহাব্যবস্থাপকদের নিয়ে গঠিত কমিটির সদস্যরা প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, প্রিন্ট, সংরক্ষণ, পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া এবং পরীক্ষা সম্পন্ন করা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে থাকেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

মহানগর ডিবি প্রধান বলেন, “কীভাবে কমিটির চোখ ফাঁকি দিয়ে ঢালাওভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস হল তার রহস্য উদ্ঘাটন করা হবে। একইসঙ্গে গ্রেপ্তার পাঁচজনকে রিমান্ডে এনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়সহ বিস্তারিত বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ৫-৭ জনের চক্রটি মাঠে নেমে পড়ে এবং কীভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস করবে, কার কাছে বিক্রি করবে, কত টাকা করে নেবে এসব পরিকল্পনা করে তারা এগোতে থাকে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা হারুন বলেন, “গ্রেপ্তারদের কাছে চারটি ডায়েরি পাওয়া গেছে যেখানে কার কাছ থেকে কত টাকা পেয়েছে, কার কাছে কত দিয়েছে তার হিসাব রয়েছে। এসব হিসাব হাতে লেখা।

“এছাড়া প্রশ্নের সফট হার্ডকপি, মোবাইল ফোন, নগদ দেড় লাখ টাকা, ব্যাংকের চেক, স্ট্যাম্প ও বিভিন্ন প্রার্থীর প্রবেশপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।”

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।