ক্রীড়া ডেস্ক,১৭ ডিসেম্বর ২০২২:
ভারতের দেয়া ৫১৩ রানের লক্ষ্যে ৬ উইকেট হারিয়ে আড়াইশ পেরিয়েছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম টেস্টের চতুর্থ দিনের খেলা শেষে স্বাগতিকদের সংগ্রহ ২৭২ রান। সাকিব আল হাসান ৪০ ও মেহেদী হাসান মিরাজ ৯ রানে অপরাজিত। পঞ্চম ও শেষদিনে বাংলাদেশের জিততে প্রয়োজন আরও ২৪১ রান, আর ভারতের চাই মাত্র ৪ উইকেট।
অভিষিক্ত জাকির হাসানের সেঞ্চুরিতে লড়াই জমিয়ে তোলে বাংলাদেশ। তার বিদায়ের পরই আবার বিপদ আসে। অক্ষর প্যাটেল এক ওভারে মুশফিকুর রহিম ও নুরুল হাসান সোহানের উইকেট তুলে নিলে চতুর্থ দিনেই হারের শঙ্কা জাগে। সাকিব ও মিরাজের দৃঢ়তায় শেষ ঘণ্টা ভালো কেটেছে। অবিচ্ছিন্ন সপ্তম উইকেট জুটিতে এসেছে ৩৪ রান।
আরো পড়ুনঃ মেসি-এমবাপে: কার পাল্লা ভারী?
ওপেনিং জুটিতে বড় কিছুর আশা জাগিয়েছিল বাংলাদেশ। জুটি ভাঙার পর দ্রুত উইকেট হারালে আবার ব্যাকফুটে চলে যায় দল। নাজমুল হোসেন শান্ত ও জাকিরের জুটি ভাঙে ১২৪ রানে। চতুর্থ দিন লাঞ্চ বিরতির পর উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন শান্ত (৬৭)। তিনে নেমে ইয়াসির আলি চৌধুরী আবারও ব্যর্থ। ৫ রান করে বোল্ড হন এবারও।
দ্রুত ২ উইকেট হারানো বাংলাদেশের ভরসা হয়ে ওঠেন জাকির। অভিষেক রাঙান প্রত্যয়ী এক সেঞ্চুরিতে। অবশ্য তিন অঙ্ক ছুঁয়েই ফেরেন সাজঘরে। ২১৯ বলে ১৩ চার ও এক ছক্কায় সেঞ্চুরি করেছেন। প্রথম ইনিংসে করেছিলেন ২০ রান। দ্বিতীয় ইনিংসেই ছুঁয়ে ফেললেন শতকের গণ্ডি।
তামিম ইকবাল চোটের কারণে টেস্ট সিরিজ থেকে ছিটকে যাওয়ায় ভারতের বিপক্ষে সুযোগ পান জাকির। চতুর্থ বাংলাদেশি হিসেবে অভিষেকে এবং ওপেনার হিসেবে অভিষেকে প্রথম সেঞ্চুরি টাইগারদের কোনো ব্যাটারের। ভারতের বিপক্ষে অভিষেকে দ্বিতীয়বার ঘটল এমন ঘটনা।
অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি পাওয়া বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হলেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। ২০০০ সালে বাংলাদেশ দলেরও অভিষেক টেস্ট ছিল সেটি। ভারতের বিপক্ষে আমিনুল খেলেন ১৪৫ রানের ইনিংস।
পরে ২০০১ সালে শ্রীলঙ্কার কলম্বোয় মোহাম্মদ আশরাফুল করেন অভিষেকে সেঞ্চুরি। সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে অভিষেকে সেঞ্চুরির সেই রেকর্ড আজও অক্ষত। খুলনায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১০ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ১১৩ রানের ইনিংস খেলেছিলেন আবুল হাসান রাজু। অভিষেকে টাইগারদের তৃতীয় সেঞ্চুরি ছিল সেটি।
চা-বিরতি পর্যন্ত বাংলাদেশ তোলে ৩ উইকেটে ১৭৬ রান। বিরতির আগে লিটন দাস সাজঘরে ফেরেন ১৯ করে। কুলদীপ যাদবের বলে সহজ ক্যাচ দেন মিড অনে। তৃতীয় ও শেষ সেশনে উইকেট পড়ে আরও তিনটি। ৫০ বল খেলে মুশফিক করেন ২৩ রান। ৩ বলে ৩ রান করে ফেরেন সোহান।
আগেরদিন ২৫৪ রানে এগিয়ে থেকে ব্যাট করতে নামা সফরকারীদের টপঅর্ডার দেখায় দৃঢ়তা। ওপেনার শুভমন গিল ও চেতেশ্বর পূজারার সেঞ্চুরিতে ২ উইকেটে ২৫৮ রান তুলে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে লোকেশ রাহুলের দল। বিশাল লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ তৃতীয় দিন শেষে কোনো উইকেট না হারিয়ে তুলেছিল ৪১ রান।
দুই সেঞ্চুরি ভারতকে নিয়ে যায় চালকের আসনে। ১৫২ বলে ১০০ রানের ইনিংস খেলে মিরাজের বলে আউট হন শুভমন। ১৩০ বলে ১০২ রানে অপরাজিত থাকেন পূজারা। তৃতীয় দিনের পড়ন্ত বিকেলে বাউন্ডারি মেরে তিনি তিন অঙ্কে পৌঁছাতেই ইনিংস ঘোষণা করে ভারত।
তার আগে ১৫০ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। স্বাগতিকদের ফলো অন না করিয়ে আবার ব্যাটিংয়ে নামে ভারত। ৮ উইকেটে ১৩৩ রান নিয়ে তৃতীয় দিনের সকালে খেলতে নেমে দেড়শ ছুঁয়ে অলআউট হয় বাংলাদেশ। মেহেদী হাসান মিরাজ করেন ২৫ রান।
১০২ রানে ৮ উইকেট পড়ার পর মিরাজ ও ইবাদত হোসেন মিলে দ্বিতীয় দিন পার করেছিলেন। ১৪৪ রানে ইবাদত আউট হলে বিচ্ছিন্ন হয় জুটি। ৪২ রানের জুটিটিই বাংলাদেশের ইনিংসের সেরা ছিল। ইবাদতের অবদান ১৭ রান।
তৃতীয় দিন এক শিকারের দেখা পেলে ৫ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েন কুলদীপ যাদব। বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার আগেরদিন নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। পড়ন্ত বিকেলে জোড়া আঘাত হানেন তিনি। পেসার মোহাম্মদ সিরাজ ৩ উইকেট তুলে টপ ও মিডলঅর্ডারে ধস নামান। উমেশ যাদবের শিকার ছিল এক উইকেট।