ঢাকা: রেজিস্ট্রার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য প্যানেলে থাকা প্রার্থীদের নতুন করে সরকারি হওয়া বিদ্যালয়ে শূন্য পদে নিয়োগ দিচ্ছে সরকার।
শূন্যপদে নিয়োগ পেতে জটিলতায় পড়েছে প্যানেলর্ভুক্ত শিক্ষকরা। আর তাতে অনেইে আর নিয়োগ পাবেন না।
আগামী ১৫ জুনের মধ্যে প্যানেলর্ভুক্তদের মেধাক্রম অনুযায়ী নিয়োগপত্র ইস্যু করে তাদের জাতীয়করণকৃত বিদ্যালয়ে যোগদান নিশ্চিত করতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের সোমবার চিঠি পাঠিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
প্যানেল শিক্ষক ঐক্যজোটের সভাপতি রবিউল ইসলাম বলছেন, সরকার যে পদ্ধতিতে প্যানেল শিক্ষকদের নিয়োগের কথা বলেছে তাতে বড় জোর ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার প্রার্থী নিয়োগ পাবেন, যেখানে প্যানেল থেকে নিয়োগের অপেক্ষায় থাকবেন আরও প্রায় ২৩ হাজার। তারা আর সহজে নিয়োগ পাবেন না।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের চিঠিতে প্যানেল তালিকা থেকে যারা নিয়োগ পাননি তাদের মূল আবেদনপত্র, নিয়োগ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাগজপত্র যাচাই করে মেধাক্রম অনুযায়ী সদ্য জাতীয়করণকৃত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ দিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
হাই কোর্টের রায়ের আলোকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ১৮ মে প্যানেল শিক্ষকদের রেজিস্ট্রার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শূন্য পদে নিয়োগ দিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয়।
২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি ২৩ হাজার ৯৯৫টি রেজিস্ট্রার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারিকরণ করা হয়। ওইসব বেসরকারি বিদ্যালয়েই প্যানেলর্ভুক্ত শিক্ষকদের নিয়োগের কথা ছিল। কিন্তু তা পরে থমকে যায়।
বেশিরভাগ রেজিস্ট্রার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ হওয়ার এ তথ্য অধিদপ্তর মন্ত্রণালয়কে জানালে গত ২ জুন মন্ত্রণালয় জাতীয়করণ হওয়া বিদ্যালয়েই প্যানেলর্ভুক্তদের নিয়োগের নির্দেশনা দেয়।
১২৭ মামলা পরিচালনাকারী পুটুয়াখালীর সুলতান মাহামুদ বলেন, আমি গত ৩ বছরে প্রায় ৭ লাখ টাকা ব্যয় করেছি। কিন্তু এখন নিয়োগ পাচ্ছি না। কারণ ওই সকল স্কুলে আর সহজে পদ খালি হবে না আর আমিসহ অন্যরাও নিয়োগ পাবেন না।
তা হলে সরকার আমাদের এখন মেরে ফেলুক সেটাই ভালো।
ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার ৫৯৭৯ নম্বর মামলাকারী আলীম বলেন, আমাদের থানায় ১০ টি পদ খালি আছে। কিন্তু প্যানেলে রয়েছে ৩৫ জন শিক্ষক। তা হলে বাকি ২৪ জন আর নিয়োগ পাবে না। এতো দিন আসায় বুক বেধে ছিলাম যে, চাকরিটা হবে এখন দেখি আর চাকরি হচ্ছে না। আমার এখন বয়সও নেই কী করব বুঝতে পারছি না।
কারণ এ সকল স্কুলে আর সহজে পদ খালি হবে না।
শূন্য পদের বিপরীতে নিয়োগের শর্ত জুড়ে না দিলে প্যানেল থাকা ৯০ শতাংশ প্রার্থী একবারেই যোগদান করতে পারতেন বলেও জানান তিনি।
গতকাল প্রাথমিক আধিদপ্তরে নিয়োগ শাখার এক কর্মকর্তার কাছে জানতে চাওয়া হলো যে, কত জন শিক্ষকের পদ সারা দেশে শূন্য রয়েছে। তখন তিনি জানান, এ খবর আপনাদের দেওয়া হবে না। অথচ কয়েক দিন আগে তিনিই বলেছিলেন, সারা দেশে প্রায় ৩৫ হাজার শিক্ষককের পদ শূন্য রয়েছে। অরও জানিয়েছিলেন প্রতিদিন ১০০ জন শিক্ষকের পদ খালি হয় সারাদেশে স্কুলগুলোত।
আবার ১৩/৯/২০১৫ সালে রাষ্ট্রপক্ষ কোর্টে জানিয়েছিল রেজিস্ট্রি স্কুলে ১৭৪৫৪ টি পদ খালি আছে। অথচ প্রাথমিক অধিদপ্তর তা স্বীকার করছে না।
অধিদপ্তরের আইন শাখার কর্মকর্তা ড. মজিবুর রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হলো আপনাদেরকে কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে যারা মামলা করেছে তাদেরকে নিয়োগ দিতে। আর আপনারা নিয়োগ দিচ্ছেন মেধার বিত্তিতে তাহলে মামলাকারীরা তো নিয়োগ পাবে না অনেকে। তাহলে আপনারা তো কোর্টের আদেশ মানছেন না। তখন তিনি জানান, যাদের টাকা আছে তারা মামলা করছে। যাদের টাকানেই কিন্তু মেধা তালিকায়া এক নম্বরে আছে তাদের নিয়োগ না দিয়ে শুধু মামলাকরীদের নিয়োগ দিলে হবে না। আমরা সবাইকেই নিয়োগ দিতে চাই।
তখন আবার জানতে চাওয়া হলো এ ভাবে নিয়োগ দিলে বাকিরা কবে নিয়োগ পাবে। তখন তিনি জানান, সেটা আমরা জানি না। যে দিন খালি হয় সে দিন তারা নিয়োগ পাবেন।
রবিউল বলেন, “মেধাক্রম অনুযায়ী চাকরি দিলে দীর্ঘদিন ধরে যারা আন্দোলন-সংগ্রাম, হাই কোর্ট-সুপ্রিম কোর্টে মামলা পরিচালনা করলাম আমরা কিন্তু আজ চাকরি পাচ্ছি না। চাকরি পাচ্ছে যারা বাড়ি বসে ছিলন তারা।”
হাইকোর্টের রায়ের আলোকে প্যানেল থাকা সব প্রার্থীর চাকরি নিশ্চিতেরও দাবি জানান তিনি।
জাহিদুল ইসলা নামে এক প্যানেলর্ভুক্ত শিক্ষক বলেন, সকলকে এক সঙ্গে নিয়োগ দিলে বিদ্যালয়গুলোতে আর সহজে পদ খালি হবে না। প্রথমিক বিদ্যালয় গুলোতে আর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়াও যাবে না। তাই দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মন্ত্রী-এমপিরা পরবর্তিতে তাদের পছন্দের লোক-জনকে নিয়োগ দিতে পারবে না। ঠিক তেমনি ঘুষ বাণিজ্যও করতে পারবে না তারা। এ জন্য তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশও মানছে না। তাই তারা এতো তাল বাহানা করছে আমাদের সঙ্গে।
এ ব্যাপারে অধিকাংশ মামলা পরিচালনাকারী অ্যাড. সিদ্দিকুল্লা মিয়া জানা, ৮৭৫৮/২০১২ সালে সফিকুর রহমান রীট করলে সরকার হেরে যায়। পরে আপিল করলেও হেরে যায়া সকরার। এবং পরবর্তিতে সরকার লিপ টু আপিল করলেও হেরে যায়।
পরে নিয়োগ দিতে বলে শুধু কোর্টে রীট কারীদের। আন্যদের নয়। তবে সরকার যদি সকলকে নিয়োগ দেয় এক সঙ্গে সেটা ভালো। তাহলে সরকার ও নিয়োগ প্রত্যাশীরা একদিকে যেমন, ঝামেলা থেকে মুক্ত হতে পারবে অন্য দিকে উভয় পক্ষই অর্থ ব্যয় থেকে বেচে যাবে। তবে রীট কারীরা যদি নিয়োগ না পায় তা হলে আবার তারা যদি আইনের দারস্ত হয় তা হলে আমি তাদের পক্ষে আইনি সহায়তা দিব।
রেজিস্ট্রার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরি (নিয়োগ, পদোন্নতি, শৃঙ্খলা ও কল্যাণ) নীতিমালা ২০০৯ অনুযায়ী সহকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য ২০১০ সালের ২১ এপ্রিল বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সরকার।
ওইসব বিদ্যালয়ে পর্যায়ক্রমে নিয়োগ দিতে পরীক্ষার মাধ্যমে ২০১২ সালের ১১ এপ্রিল ৪২ হাজার ৬১১ জনের মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। এদের মধ্য থেকে এ পর্যন্ত ১০ হাজার ৫১৪ জন নিয়োগ পেয়েছেন।
২০১৩ সালে বেশিরভাগ রেজিস্ট্রার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ হলে প্যানেলে থাকা বাকিদের নিয়োগ ঝুলে যায়। এরপর আন্দোলনে নামে এসব প্রার্থীরা।
দীর্ঘদিন আন্দোলনে কাজ না হওয়ার প্রথমে প্যানেলর্ভুক্ত ১০ প্রার্থী হাই কোর্টে রীট করে নিজেদের পক্ষে রায় পান।
পরে এ বিষয়ে আরও ৪৯০টি রীট আবেদন হাই কোর্ট নিষ্পত্তি করে প্যানেলভুক্ত শিক্ষকদের নিয়োগ দিতে নির্দেশ দেয় কোর্ট।
হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল খারিজের পর তা পুর্নবিবেচনা চেয়ে করা রিভিউ আবেদনও গত ১১ ফেব্র“য়ারি খারিজ করে দেয় সর্বোচ্চ আদালত। এরপরেই প্যানেলে থাকা প্রার্থীদের নিয়োগের পথ খোলে।
পরে সরকার তাদের নিয়োগ দেয়। তাদের মধ্যে এক জন মারা জান। ২ জন যোগদান করেননি। বাকি ৭ জান যোগদান করে।
পরে শিক্ষামন্ত্রণালয় এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে মতামত চায়। আইন মন্ত্রণালয় আদালতের রায়ের আলোকে সবাইকে নিয়োগ দেয়ার বিষয়ে মত দেয়। তার পরে গণশিক্ষামন্ত্রণালয় এর স্থায়ী কমিটিও প্যানেলর্ভুক্তদের নিয়োগ দিতে সুপারিশ করে।
এরই আলোকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী প্যানেলর্ভুক্ত সবাইকে নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়।
কিন্তু গতকাল সোমবার দেখা গেল প্রতিটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে শুধু শূন্য পদে নিয়োগ দিতে নির্দেশন দেওয়া হয়। এতে অনেকে ক্ষব্ধ হয়। কেউ কেউ বলছে আমাদের নিয়োগ না দিলে আইনের আশ্রয় নিবো।
আবার কেউ কেউ আনন্দোলনের হুমকি দিয়ে বলেন, যেহতু শিক্ষাগত যোগ্যতা সমান এবং দেশে বেসরকরি স্কুল নেই তাই তাদের আগের স্কুলগুলোতে নিয়োগ দিলেইতো হয়। তা হলে সকলকে নিয়োগ দেওয়ার পরে আরও পদ খালি থাকবে।
by