প্রাথমিকে এক শিক্ষকের বিপরীতে শিক্ষার্থী ৩৪ জন

Image

দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো দেশে শিক্ষক শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:৩৪। অর্থাৎ, দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে গড়ে ৩৪ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদানের জন্য রয়েছেন একজন করে শিক্ষক। আর বর্তমানে দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকের সংখ্যা ৪ লাখের মতো।

বুধবার (১৪ জুন) রাজধানীতে জাতীয় শিক্ষা সংলাপের আলোচনায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। এ সময় প্রাথমিক ‘শিক্ষার্থীদের শিখন স্তরের বর্তমান অবস্থা ও শিক্ষার গুণগত মান অর্জন’ নিয়ে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়েভ ফাউন্ডেশনসহ চারটি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত গবেষণা তথ্য প্রকাশ করা হয়।

আরো পড়ুন: প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্রুতই চালু হবে ‘স্কুল ফিডিং প্রোগাম’

গবেষণা ফলাফলে দেখা গেছে, দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা গণিত বিষয় নিয়ে। গণিতের ভাগ অংশের অংক করতে পারেন না ৯৫ শতাংশের বেশি শিশু। এর মধ্যে ছেলে শিক্ষার্থীরা ৯৫.৮৫ শতাংশ এবং মেয়ে শিক্ষার্থীদের ৯৭.২০ শতাংশ শিক্ষার্থী ভাগ করতে পারেন না। জরিপে ৫-১৬ বছর বয়সী রাজশাহী ও খুলনা অঞ্চলের ১৫৩৩ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। জরিপে তাদের খুব সাধারণ কিছু বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছে। যা তারা বিদ্যালয় এবং অন্যান্য শিখন কালে চর্চা করে থাকে।

গবেষণা ফলাফলে জানানো হয়েছে, গণিতের একক অংক শনাক্ত করতে পারেনি তাদের ১৪ দশমিক ১৯ শতাংশ ছেলে শিক্ষার্থী এবং ১৩ দশমিক ০৬ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী। তবে, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বিয়োগ অংক করতে পেরেছে ১৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ ছেলে শিক্ষার্থী এবং ২২ দশমিক ২৪ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী।

অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৮৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ ছেলে শিক্ষার্থী এবং ৮২ দশমিক ৮৬ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী ইংরেজিতে গল্প পড়তে পারেন না। এছাড়া ইংরেজি বর্ণ পড়তে পারেনি ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ ছেলে এবং ১৫ দশমিক ২২ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী। তবে, ইংরেজি শব্দ চিহ্নিত করতে পেরেছেন ২৪ দশমিক ১০ শতাংশ ছেলে এবং মেয়ে শিক্ষার্থীদের ২৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ ছেলে শিক্ষার্থী—উঠে এসেছে গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলে।

এছাড়াও অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬১ দশমিক ৯৫ শতাংশ ছেলে এবং ৫৩ দশমিক ১৪ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী বাংলায় গল্প পড়তে পারেননি জানিয়ে গবেষণায় আরও দেখানো হয়েছে, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বাংলা বর্ণ পড়তে পারেননি ১০ দশমিক ২৮ শতাংশ ছেলে এবং ৮ দশমিক ৭১ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী। তবে, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বাংলায় শব্দ চিহ্নিত করতে পেরেছেন ২১ দশমিক ০৯ শতাংশ ছেলে এবং ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী।

গবেষণার ভিত্তিতে প্রাপ্ত এ ফলাফল উপস্থাপনকালে সমস্যার সমাধানে চারটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব জানানো হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক সংখ্যা বাড়ানো, বাজেটে শিক্ষা খাতের বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং তার যথাযথ বাস্তবায়ন, শ্রেণির পড়া শ্রেণিতেই শেষ করা এবং শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার কথা জানানো হয়েছে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত ক্লাসরুম ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন তথা স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করার প্রস্তাবও জানানো হয়েছে জাতীয় শিক্ষা সংলাপে।

আলোচনায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, সরকার দেশের প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে আন্তরিক এবং শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে দ্রুতই চালু হবে ‘স্কুল ফিডিং প্রোগাম’। করোনাসহ নানা সংকটে আমাদের শিখন ঘাটতি হয়েছে এবং এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সকলের মতামত নিয়ে কাজ করে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রাথমিকে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের হার ধরে রাখতে হবে এবং একই সাথে এখন আমাদের গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতে কাজ করতে হবে।

জাতীয় শিক্ষা সংলাপে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আগত অতিথিরা

সংলাপে সভাপতির বক্তব্যে রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, আমাদের এখন শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে কাজ করতে হবে। শুধুমাত্র আয় বাড়লে শিক্ষার উন্নতি হবে, তা নয়। তাহলে তো সিলেট সবচেয়ে এগিয়ে থাকার কথা। কিন্তু, তা হয়নি। এখানে গবেষণা ফলাফল তুলে ধরা হয়েছে। আমার আহবান, আগামীতে যেন গবেষণার পাশাপাশি সীমাবদ্ধতাগুলো তুলে ধরা হয়। কভিডকালে আমাদের যে শিখন ঘাটতি তা পূরণ করতে কাজ করতে হবে।

আমাদের শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে আমাদের দিনের পড়া দিনেই শ্রেণিকক্ষে শেষ করতে হবে; নতুন শিক্ষাক্রমে তা করা হয়নি। পাশাপাশি, শিক্ষায় সবার সমান অংশগ্রহণ ও সুযোগ নিশ্চিতে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। এটি শুধুমাত্র শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে হয়েছে, অন্য কোনো ক্ষেত্রে হয়নি।

আমাদের শিক্ষায় অংশগ্রহণ বেড়েছে, এখন আমাদের শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে কাজ করতে হবে। ওয়েব ফাউন্ডেশন শুরু থেকেই বিভিন্ন ধরনের কাজ করছে এবং এর অন্যতম একটি হলো শিক্ষা। আমরা সিভিতে লেখা দেখি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেখি কিন্তু, তিনি বাংলায় একটি বাক্য শুদ্ধ করে লিখতে পারেন না। আমাদের যুবদের দক্ষতা এবং যোগ্যতা বাড়াতে হবে এবং সেজন্য কাজ করতে হবে—মহসিন আলী, নির্বাহী পরিচালক ওয়েভ ফাউন্ডেশন

অক্সফ্যাম আইবিআইএস এবং স্ট্রিট চাইল্ড-ইউকে এর আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় ‘এডুকেশন আউট লাউড (ইওএল)’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে নাগরিক সমাজের সংগঠন ওয়েভ ফাউন্ডেশন। এ প্রকল্পের অন্যতম কর্মসূচি হিসাবে ‘নাগরিক কর্তৃক পরিচালিত মূল্যায়ন’ নামক একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়। এই জরিপের মাধ্যমে করোনা পরবর্তী শিক্ষার্থীদের শিখন স্তরের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। এ দিন জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ এবং স্থানীয় পর্যায়ে আয়োজিত সংলাপ থেকে প্রাপ্ত সুপারিশসমূহ সকলের সামনে তুলে ধরা হয়।

জাতীয় শিক্ষা সংলাপে অতিথিরা

wave

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশনের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী। সংলাপে ওয়েভ ফাউন্ডেশনের পক্ষে বক্তব্য রাখেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী। প্রকল্প ও জরিপ ফলাফল উপস্থাপন করেন প্রকল্পের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক লিপি আমেনা ও প্রকল্প কর্মকর্তা তুলিকা সরকার। উপস্থাপনার ওপর আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. এস. এম. জুলফিকার আলী।

এছাড়াও শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (আইন শাখা) মো. আতাউর রহমান, স্ট্রিট চাইল্ড, ইউকের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ইমতিয়াজ হৃদয় বক্তব্য রাখেন। জাতীয় এই সংলাপের সমাপনী বক্তব্য এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন নাসিফা আলী, উপ-নির্বাহী পরিচালক, ওয়েভ ফাউন্ডেশন। উদ্বোধনী অধিবেশনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ও সঞ্চালনা করেন কানিজ ফাতেমা, উপ-পরিচালক, ওয়েভ ফাউন্ডেশন। এছাড়া নাগরিক সমাজ, যুব ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিসহ অন্যান্য অতিথিরা সংলাপে উপস্থিত ছিলেন।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।