পিরোজপুরে হিন্দু প্রধান শিক্ষককে হত্যার হুমকি, চাকরি থেকে অব্যাহতির চেষ্টা

বরিশাল:: পিরোজপুরের নাজিরপুরে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের এক প্রধান শিক্ষককে পদ থেকে অব্যাহতি পত্র নেয়ার অভিযোগ ওঠেছে সরকার দলীয় স্থানীয় তিন নেতার বিরুদ্ধে। তবে বিদ্যালয়ের একটি চুরির ঘটনা তার উপরে চাপিয়ে দেয়ার হুমকির কারণে তিনি বাধ্য হয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে অব্যহতি দিয়েছেন বলেও দাবী করেছেন আওয়ামীলীগের অপর একটি পক্ষ।

এ ঘটনাটি স্থানীয় সংসদ সদস্যকে অবহিত করে ওই শিক্ষকের ছেলে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সুশীল সমাজ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক সন্তোষ কুমার কুন্ডু অভিযোগ করে জানান, উপজেলার মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নে সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার তার পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত হাজী আব্দুল গণি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান পদে তিনি বিগত ২০০৪ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর যোগদান করেন। তিনি যোগদানের পর স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা শাহ আলম ফরাজী একটানা ৫ বছর ওই বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন কালে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তার কোন প্রকার অভিযোগ ছিলনা। পরবর্তীতে তিনি আর সভাপতি হতে না পেরে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিবিধ ষড়যন্ত্র শুরু করেন। রমজান উপলক্ষে গত জুন মাসের ৬ তারিখ থেকে জুলাই মাসের ৯ তারিখ পর্যন্ত বিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করা হয়। বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় প্রধান শিক্ষক সন্তোষ কুমার কুন্ডু পার্শ্ববর্তী কাউখালী উপজেলা সদরের বাসায় অবস্থান করছিলেন।

বিদ্যালয় বন্ধ থাকার সুযোগে গত ২৫জুন দিবাগত রাতে কে বা কারা বিদ্যালয়ের শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের তালা ভেঙ্গে ৮টি ল্যাপটপ চুরি করে নেয়। উক্ত চুরি বিষয় নিয়ে গত রবিবার দুপুরে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে পরিচালনা পরিষদের বর্তমান সভাপতি সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে স্থানীয়দের নিয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা চলাকালে ওই বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ আলম ফরাজীর নেতৃত্বে ওই ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি বখতিয়ার হোসেন ও বর্তমান সভাপতি শাহ নিয়াজ ফরাজী হিরুসহ ৭/৮জন বহিরাগত যুবক সভাপক্ষে প্রবেশ করে।

তখন তারা প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয়ের ল্যাপটপ চুরির ঘটনায় অভিযুক্ত করে চোরের অপবাদ দেয়। এ সময় তারা বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতিসহ ওই শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে তার কাছে বিদ্যালয়ের প্যাডে অব্যহতি পত্র লিখিয়ে নেয়। বিষয়টি তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য একেএমএ আউয়ালকে অবহিত করে নাজিরপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। যার নং-৩৭২, তাং-১০/০৭/১৬ইং।

অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করে আওয়ামীলীগ নেতা শাহ আলম ফরাজী বলেন, প্রধান শিক্ষক চুরির দায় স্বীকার করে এক মাসের মধ্যে মালামাল ফেরত দেয়ার অঙ্গীকার করেছে। সেই শর্তে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া যখন তিনি অব্যহতি পত্র লিখে দেন তখন সেখানে আমি ছিলাম না।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, চুরির বিষয়টি তদন্ত ছাড়া কাউকে দায়ী করা যাবে না। তবে অব্যাহতি পত্রে তিনি পারিবারিক সমস্যার কারণ উল্লেখ করেছেন।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।