পাবিপ্রবির হলে আটকে তিন শিক্ষার্থীকে নির্যাতন ছাত্রলীগের, হাসপাতালে ভর্তি

Image

নিজস্ব প্র‌তি‌বেদক,৫ এপ্রিল ২০২৩:

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীকে রাত সাড়ে ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত হলে আটকে রেখে মারধর করেছেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে ওই তিন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়ে পড়েন। পরে হল প্রভোস্ট ও প্রক্টরের উপস্থিতিতে মারধরের শিকার তিন শিক্ষার্থীকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হলে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেছে শাখা ছাত্রলীগ।

বুধবার (০৫ এপ্রিল) রাতে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বাবুর নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে এ ঘটনা ঘটে। মারধরের ঘটনায় আহতরা বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

মারধরের শিকার শিক্ষার্থীরা হলেন- লোক প্রশাসন বিভাগের মাস্টার্স শেষ বর্ষের গোলাম রহমান জয়, ইংরেজী বিভাগের চতুর্থ বর্ষের আসাদুল ইসলাম এবং ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবদুল আজিজ। এর মধ্যে গোলাম রহমানের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে ওই তিন শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে আসেন। পরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের দেখে সন্দেহ হলে জিজ্ঞাবাদ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে নিয়ে আসা হয়। এরপর তিন শিক্ষার্থীকে হলের বিভিন্ন কক্ষে আটকে স্ট্যাম্প, হকিস্টিকসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে নির্যাতন করা হয়। হাতুড়ি, জিআই-পাইপ, তালা দিয়েও তাদের মারধর করা হয়। এ সময় ওই শিক্ষার্থীদের প্লাস দিয়ে হাত এবং পায়ের নখ তুলে নেন। পরে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য ওই তিন শিক্ষার্থীদের হাতে এবং পায়ে সুই ফুটানো হয়েছে।

আরও পড়ুন:রাতে ছাত্রীদের ভিডিও কল দিতেন শেকৃবি শিক্ষক

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বাবুর নেতৃত্বে পুরো ঘটনায় মাসুদ রানা সরকার (গণিত বিভাগ, ৮ম ব্যাচ), প্রান্ত (সমাজকর্ম বিভাগ, ৮ম ব্যাচ), শামীম (পদার্থ বিজ্ঞান, ৮ম ব্যাচ) শেহজাদ (বিবিএ বিভাগ, ১০ম ব্যাচ), হৃদয় (বিবিএ বিভাগ, ১০ম ব্যাচ), রেইন (পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ, ১০ম ব্যাচ), আপেল (গণিত বিভাগ, ১০ম ব্যাচ), সোহান (ইংরেজি ৯ম ব্যাচ), সালমান (ইংরেজি ৯ম ব্যাচ), শিবু (লোক প্রশাস বিভাগ, ১১তম ব্যাচ), লিখন (ইউআরপি বিভাগ, ১১তম ব্যাচ), আকিব (পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ, ১১তম ব্যাচ), অয়ন (বাংলা বিভাগ, ১১তম ব্যাচ), আশরাফুল (গণিত বিভাগ, ১২তম ব্যাচ) অংশ নেন।

তবে মারধরের পুরো ঘটনা অস্বীকার করেছে শাখা ছাত্রলীগ। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বাবু বলেন, ক্যাম্পাসে ১০-১৫ জন শিবিরেরকর্মী রাতে ঘোরাফেরা করছিলেন। শিক্ষার্থীরা বিষয়টি আমাদের অবগত করলে আমরা তাদেরকে ধরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হাতে তুলে দেই। তাদের কাছে শিবিরের রিপোর্টিংয়ের বই, সিম কার্ডসহ বেশকিছু জিনিসপত্র পাওয়া গেছে। তাদের মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. ওমর ফারুক বলেন, আমি গতকাল রাতে হলে ছিলাম না। শিক্ষার্থীদের ফোন পেয়ে দ্রুত এসে দেখতে পাই, তিনজন শিক্ষার্থীকে ঘিরে সবাই জড়ো হয়ে রয়েছেন। তারা আমাদের হলের শিক্ষার্থী না, অনাবাসিক। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, তারা শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তারা বাইর থেকে ক্যাম্পাসে এসে সরকারবিরোধী চক্রান্ত করছিলেন। পরে তাদের পুলিশে হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।

জানতে চাইলের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক কামাল হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, গভীর রাতে হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে বলে হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়। পরে আমরা সেখানে উপস্থিত হয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলি। তারা শিবির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানান। গোপন বৈঠককালে শিক্ষার্থীরা তাদের আটক করে।

প্রক্টর বলেন, তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলে জানতে পেরেছি, তারা বাংলাদেশ ছাত্র শিবিরের ১৫ জনের একটি দল হলে গোপন মিটিং করতেছিলেন। শিক্ষার্থীরা তাদের ধাওয়া করলে সবাই পালিয়ে গেলেও এ জন যেতে পারেননি। বিষয়টি আসলে কি হয়েছে, এটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, রাত ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কামাল হোসেন থানায় ফোন করে পুলিশে সহায়তা চান। তিনি জানান ক্যাম্পাসে শিবিরের কর্মী আটক হয়েছেন। তার ফোন পেয়ে আমরা সেখা উপস্থিত হয়ে দেখতে পাই, তিন শিক্ষার্থী রক্তাক্ত অবস্থায় রয়েছেন। পরে আমরা তাদের সেখান থেকে পাবনা জেনারেল হাসপাতাল নিয়ে আসি। সেখানে তাদের চিকিৎসা চলছে। তদন্ত সাপেক্ষ তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

এক শিক্ষার্থী নিখোঁজ

বুধবার সকাল ছয়টায় মেস থেকে বাসায় যাওয়া পথে শিবির সন্দেহে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউআরপি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছাব্বির হোসেন শাওন নামে এক শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে যায় ছাত্রলীগের কর্মীরা। ওই শিক্ষার্থীর বন্ধুরা জানান, পাবনা শহর থেকে ঝিনাইদ যাওয়ার বাস থেকে ছাত্রলীগের শেহজাদ, আপেল, হৃদয়, পিয়াস দুটি মোটরসাইকেলে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদের নামে শাওনকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে শাওনের কোনো খোঁজ মেলেনি।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।