পদোন্নতির নতুন বিধিমালায় হতাশ সহকারি উপজলা শিক্ষা কর্মকর্তারা

Image

শিক্ষাবার্তা ডেস্কঃ পদোন্নতির নতুন নীতিমালায় উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদের (এটিইও) মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারণে প্রাথমিকের শিক্ষা গতি হারাবে। পদোন্নতিতে সবসময় অভিজ্ঞতাকে মূল্যায়ন করা হলেও এবার সেটি করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, পিটিআই সুপারিনটেনডেন্ট, পিটিআই ইন্সট্রাক্টরের গ্রেড বৃদ্ধি হলেও কেবল এটিইওরাই রয়ে গেছেন আগের অবস্থানে। আবার নতুন নিয়োগ বিধিমালায় পদোন্নতির সুযোগ বৃদ্ধির পরিবর্তে কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে মাঠপর্যায়ে নেমে এসেছে হতাশা।

আরো পড়ুন: ‘সন্তান নিতে প্রধান শিক্ষকের অনুমতি লাগবে’, এটি গুজব

প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারে মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের সাথে মাঠপর্যায়ের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর সার্বিক কার্যক্রমের সমন্বয় ও সংযোগ ঘটে সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসারদের (এটিইও) মাধ্যমেই। তারাই মূলত মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রাথমিক শিক্ষাকার্যক্রম মনিটরিং করে থাকেন। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের গেজেটেড অফিসার ও নন-গেজেটেড কর্মচারীদের নিয়োগ বিধিমালা-২০২১-এ তাদের পদোন্নতির সুযোগ ৮০ থেকে কমিয়ে ৫০ শতাংশ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে প্রাথমিক শিক্ষায় মেধাবীরা আসতেন না। সম্প্রতি সে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কিন্তু প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন নতুন সিদ্ধান্তে মেধাবীদের আসার পথ আবারো বন্ধ হতে যাচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ পদে অভিজ্ঞদের পদোন্নতি না দিয়ে সরাসরি নিয়োগের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে মন্ত্রণালয়। আর এ ধরনের সিদ্ধান্তে মাঠপর্যায়ে হতাশা নেমে এসেছে।

জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের গেজেটেড অফিসার ও নন-গেজেটেড কর্মচারীদের নিয়োগ বিধিমালা-২০২১-এর কাজ চলমান। ইতোমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের কাজ শেষ করে তা আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘২৬ নম্বর ক্রমিকের উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার পদের নিয়োগপদ্ধতিতে ৮০ শতাংশ পদোন্নতি ও ২০ শতাংশ নিয়োগের মাধ্যমে এর পরিবর্তে ৫০ শতাংশ পদোন্নতি ও ৫০ শতাংশ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে প্রতিস্থাপিত হবে। এর ফলে সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসারদের পদোন্নতির সুযোগ সঙ্কীর্ণ হয়ে যাবে।

সূত্র জানায়, সর্বশেষ উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার (টিইও) পদে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার (এটিইও) পদ থেকে ৮০ শতাংশ পদোন্নতি দেয়া হতো। আর ২০ শতাংশ সরাসরি নিয়োগ দেয়া হতো। কিন্তু নতুন নিয়োগ বিধিমালায় টিইও পদে এটিইওদের মধ্য থেকে মাত্র ৫০ শতাংশ পদোন্নতির সুযোগ রাখা হয়েছে। বাকি ৫০ শতাংশ সরাসরি নিয়োগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, আমরা চাই নবীনের উদ্যম ও প্রবীণের অভিজ্ঞতা।দু’টিই আমাদের দরকার। এ জন্যই আমরা ৫০ শতাংশ পদোন্নতি ও ৫০ শতাংশ সরাসরি নিয়োগের বিধান রেখেছি। ৮০ শতাংশ পদোন্নতির স্থলে ৫০ শতাংশ করলে প্রাথমিক শিক্ষায় সেটি বিরূপ প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে যে ৮০ শতাংশ পদোন্নতির বিধান ছিল, সেটা একটা জাল রায় বা প্রতারণার মাধ্যমে করা হয়েছিল। এ জন্যই আমরা বিভিন্ন পর্যায়ের মতামত ও বিচার-বিশ্লেষণ করে আগের বিধান থেকে সরে এসেছি। বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন জানালে প্রাথমিক সচিব এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষার মাঠপর্যায়ে এটিইও পদটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারাই মূলত প্রাথমিক শিক্ষা মনিটরিংয়ের কাজ করেন। এ পদে যারা আসেন তারা দেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী। আর এ কাজ করতে গিয়ে যারা অভিজ্ঞতা অর্জন করেন, তাদেরই টিইও পদে শতভাগ পদোন্নতি দেয়া উচিত। কিন্তু মন্ত্রণালয় সেটা না করে উল্টো পথে হাঁটছে। এটিইও পদটি দ্বিতীয় শ্রেণীর। সরাসরি ও বিসিএসে নন-ক্যাডার থেকে এ পদে নিয়োগ দেয়া হয়। এখন যদি তাদের পদোন্নতির সুযোগ কমিয়ে দেয়া হয়, তাহলে অনেকেই আর পদোন্নতি পাবেন না। এতে মেধাবীরা আর এই পদে আসবেন না।

অন্য দিকে শুধু পদোন্নতিই নয়, এটিইওদের বেতন গ্রেডেও রয়েছে বৈষম্য। ১৯৯৪ সালের নিয়োগ বিধিমালায় বর্তমান এটিইও পদটি দশম গ্রেডে উন্নীত করা হয়। সে সময়ে প্রধান শিক্ষক পদটি ১৪তম গ্রেডে এবং সহকারী শিক্ষক পদটি ১৮তম গ্রেডে ছিল। প্রধান শিক্ষক পদটি তিন দফায় উন্নীত করার ফলে ২০১৪ সালে ১১তম গ্রেড এবং সহকারী শিক্ষক পদটি চার দফায় ২০২০ সালে ১৩তম গ্রেডভুক্ত হয়। একই সময়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পদটি নবম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেডে, পিটিআই সুপারিনটেনড্যান্ট পদটি নবম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেডে এবং পিটিআই ইন্সট্রাক্টর পদটি নবম গ্রেডে উন্নীতকরণ করা হয়েছে। কিন্তু ২৮ বছর ধরে সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার পদটি দশম গ্রেডেই রয়ে গেছে।

নাম প্রকাশ না করে একাধিক এটিইও জানিয়েছেন, এটিইও এবং টিইও দুই পদেই শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো ব্যবধান নেই। টিইও পদে যারা সরাসরি নিয়োগ পান তাদের মূলত এটিইওদের কাছ থেকেই কাজ শিখতে হয়। এখন মন্ত্রণালয় যদি নবীন কর্মকর্তাদের টিইও পদে চায় তাহলে এটিইও পদে চাকরির অভিজ্ঞতা কমিয়ে পদোন্নতির সুযোগ আরো সহজ করে দিক। তারা বলেন, শতভাগ পদোন্নতির দাবিতে ৩টি মামলা চলমান রয়েছে। তার মধ্যে ২টিতে স্থগিতাদেশ এবং একটি মামলায় স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে ‘এক্সটেন্ডেড টিল ডিসপোজাল’।

বাংলাদেশ সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এ এস রবিউল ইসলাম বলেন, টিইও পদ ৫১৩টি আর এটিইও পদ দুই হাজার ৬০১টি। সরকার যদি শতভাগ পদোন্নতিও দিত তাহলেও প্রতি পাঁচজনে একজন মাত্র পদোন্নতির সুযোগ পেতেন। কিন্তু সেটা না করে উল্টো পদোন্নতির সুযোগ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা যদি যোগ্যতার মাপকাঠিতে পিছিয়ে না থাকি তাহলে কেন আমাদের প্রতি এ অবিচার করা হচ্ছে? পুরো চাকরিজীবনে একটি পদোন্নতি চাওয়া কি আমাদের অন্যায়? রবিউল ইসলাম আরো বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তে আমাদের কর্মকর্তারা সংক্ষুব্ধ। এ জন্যই প্রস্তাবিত নিয়োগবিধির ওপর ইতোমধ্যে শত শত কর্মকর্তা রিট করেছেন। এ ছাড়া অন্য এক মামলায় টিইও পদে সরাসরি নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিতের আবেদন করলে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আদালত তাতে সম্মতি দিয়েছেন। আমরা অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকেও শিগগিরই কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব। তারপরও বলব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আমাদের অভিভাবক। আশা করছি তিনি আমাদের এই যৌক্তিক দাবির বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবেন।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।