দোষী চার শিক্ষককে বদলির সুপারিশ

চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী সুরাইয়া সুলতানার (১৫) অপমৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এতে বিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষককে বদলি ও বিভাগীয় মামলাসহ ১০ দফা সুপারিশ করা হয়েছে।
ওই চারজন হলেন গণিত বিষয়ের সহকারী শিক্ষক হাসানুজ্জামান হেদায়েত, মাসুদুর রহমান ও রহিমা খাতুন এবং বাংলা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক ওয়াহিদা পারভীন।
জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস তদন্ত কমিটির সুপারিশমালা বাস্তবায়নের জন্য গত বৃহস্পতিবারশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বরাবর পাঠিয়েছেন। এ ছাড়া খুলনা বিভাগীয় কমিশনার, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

সুরাইয়া সুলতানা ৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা শহরের সবুজপাড়ায় বাসার নিজ কক্ষে আত্মহত্যা করে। এর আগে লেখা ‘সুইসাইড নোটে’ সে ওই দিন গণিত পরীক্ষা খারাপ হওয়ায় অনুত্তীর্ণের আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে।

সহপাঠীরা জানায়, ২০১৫ সালে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছিল সুরাইয়া। তার মৃত্যুর পেছনে সিলেবাস-বহির্ভূত গণিতের প্রশ্নপত্র, পরীক্ষার কক্ষে পাঁচ মিনিট দাঁড় করিয়ে রাখা ও কয়েকজন শিক্ষকের ‘প্রাইভেট-বাণিজ্য’সহ খারাপ আচরণ দায়ী।

অভিযুক্ত শিক্ষকদের শাস্তির দাবিতে সুরাইয়ার সহপাঠীসহ বিক্ষুব্ধ ছাত্রীরা ৪ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গা-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে। ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাককে আহ্বায়ক ও বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক এস এম আজগার আলীকে সদস্যসচিব করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হলেও তারা ১৪ ডিসেম্বর তদন্ত শেষ করে। পরে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।

তদন্ত প্রতিবেদনে সার্বিক মন্তব্যে বলা হয়েছে, নবম শ্রেণির গণিত প্রশ্ন কঠিন হয়েছে। এ জন্য প্রশ্নকারী শিক্ষক মাসুদুর রহমান ও রহিমা খাতুন এবং সমন্বয়কারী শামীম আরা ও জেসমিন আরা খাতুন দায়ী। ছাত্রীদের শিক্ষক হাসানুজ্জামান হেদায়েতের কাছে প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করার অভিযোগ ঠিক। মতিয়ার রহমান, হাসানুজ্জামান হেদায়েত, মজিবর রহমান, সুজিত কুমার ঘোষ ও মামুন অর রশিদ ক্লাসে ছাত্রীদের সঙ্গে অপ্রাসঙ্গিক আচরণ করে থাকেন। বিক্ষোভকারী ছাত্রীদের হুমকি ও আন্দোলন বেগবান করার জন্য শিক্ষক আমিরুল ইসলাম দায়ী। পরীক্ষার দিন শিক্ষক ওয়াহিদা পারভীন অনুমানের ওপর ভিত্তি করে সুরাইয়াকে দাঁড় করিয়ে রাখেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে ১০ দফা সুপারিশ করা হয়েছে।

সুপারিশমালার মধ্যে রয়েছে শিক্ষক হাসানুজ্জামান হেদায়েত, মাসুদুর রহমান, রহিমা খাতুন ও ওয়াহিদা পারভীনকে বদলিসহ তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা; মতিয়ার রহমান, মজিবর রহমান, সুজিত কুমার ঘোষ ও মামুন অর রশিদ ক্লাসে ছাত্রীদের সঙ্গে ভবিষ্যতে অপ্রাসঙ্গিক আচরণ করবে না মর্মে লিখিত নেওয়া; শামীম আরা, জেসমিন আরা ও আবদুর রহমানকে ভবিষ্যতে প্রশ্নপত্র সমন্বয় ও প্রশ্নপত্র প্রণয়নের আগে আরও যত্নশীল হতে সতর্ক করা; বিদ্যালয়ের শিক্ষকস্বল্পতা দূরীকরণ ও নিয়মিত পাঠদানের উদ্যোগ নেওয়া; প্রশ্নপত্র তৈরি ও সমন্বয় কমিটিতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষক ও ক্লাসে পাঠদান করান এমন শিক্ষকদের নির্বাচন করা ইত্যাদি।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।