ঠাকুরগাঁওয়ের দুই সরকারি হাই স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হচ্ছেনা ॥ বিপাকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও ॥ আসন্ন শিক্ষা বর্ষে ঠাকুরগাঁও শহরের সরকারি বালক ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে কোন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছেনা। আর তাই অসংখ্য অভিভাবক দিশেহারা হয়ে ভালো বিদ্যালয়ে পড়ানোর লক্ষ্যে শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে ছুটছেন পাশর্^বর্তী রংপুর, নীলফামারী, পঞ্চগড় ও দিনাজপুরে। তাঁরা ওই জেলার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার কোচিং এর জন্য প্রতিদিন ভোরে কনকনে শীত উপেক্ষা করে পিতা মাতারা শিশু সন্তানদের নিয়ে ওইসব জেলায় যাচ্ছেন ও সন্ধ্যায় ফিরে আসছেন। কেউ কেউ সেখানেই অবস্থান করছেন।

শহরের রুমানা আক্তার রুমি নামে এক মাতা জানান, তাঁর সন্তান শহরের এক সরকারী প্রাথমিক স্কুল থেকে ৫ম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছে। ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করানোর উদ্দেশ্যে তিনি দুই বছর থেকে প্রস্তুতি নিয়েছেন। কিন্তু এখন সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি নিচ্ছেনা শুনে তাঁর মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। দু’বছর আগে তৃতীয় শ্রেণিতে তার সন্তান অল্পের জন্য ভর্তি হতে পারেনি। তিনি জানান, খুব ভোরে তিনি ছেলেকে নিয়ে পঞ্চগড় যাচ্ছেন। সেখানে ভর্তির কোচিং করিয়ে সন্ধ্যায় আবার ফিরে আসছেন। এরকম অনেক অভিভাবকের একই অবস্থা। অপর অভিভাবক, শাহেদা জাহান কলি জানান, শহরে যে কয়টি বেসরকারি হাইস্কুল রয়েছে সেখানে শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতনের হার অনেক বেশি কিন্ত তাতে শিক্ষার ভালো পরিবেশ ও আশাজনক ফলাফল পাওয়া যায় না । তাই তাদের অন্য জেলায় ছুটতে হচ্ছে।

সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আখতারুজ্জামান জানান, তাঁর স্কুলে ৫ম শ্রেণিতে প্রভাতি ও দিবা শাখায় মোট ২৪৯ জন ছাত্র পিএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। আশা করছি সবাই পাশ করবে। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে মোট আসন সংখ্যা রয়েছে ২৪০ টি। ভর্তি কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবার নতুন কোন ছেলে ভর্তি করার সুযোগ নেই। একই কথা বলেন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা বিলকিস সালাম। তিনি বলেন, আসন ফাঁকা না থাকায় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়েও কোন মেয়ের ভর্তির সুযোগ নেই। শুধু ৯ম শ্রেণিতে ২২ জন মেয়ে ভর্তি হবে। তিনি জানান, ক্লাস রুম ও শিক্ষকের সংখ্যা বাড়ানো হলে ৬ষ্ঠ শ্রেণির সেকশন বাড়িয়ে ভর্তি নেয়া যেতে পারে। এতে কোন বিধিনিষেধ নেই। যে কোন সরকারি স্কুলেই একাধিক সেকশন খোলা যেতে পারে। তবে শর্ত হলো পর্যাপ্ত কক্ষ ও শিক্ষক থাকতে হবে। কিন্তু ঠাকুরগাঁও শহরের দুটি সরকারি স্কুলের কোনটিতেই পর্যাপ্ত শিক্ষক ও কক্ষ নেই।

বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আখতারুজ্জামান জানান, স্কুলের উত্তরা ভবনের একটি কক্ষে ৪০ জনের বেশি ছাত্রের স্থান সংকুলান হয়না। অথচ সেখানে ৬০ জন ছাত্রকে গাদাগাদি করে বসতে হয়। এতে পাঠদান ব্যাহত হয় দারুন ভাবে।

এব্যাপারে ভর্তি কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আওয়াল জানান, আমি যতদূর জানি নতুন সেকশন খুলতে গেলে বোর্ডের পূর্বানুমতি প্রয়োজন। কিন্তু এই মুহূর্তে তা সম্ভব নয়। দুটি স্কুলেই শ্রেণি কক্ষ ও শিক্ষকের স্বল্পতা রয়েছে। তবে আগামী বছর থেকে আমরা পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করবো। তাছাড়া আমরা বেসরকারি স্কুলের লেখাপড়ার মান বাড়ানোর চেষ্টা করছি। এগুলির মান বাড়ানো হলে অভিভাবকরা বেসরকারি স্কুলেও সন্তানদের ভর্তি করাতে আগ্রহী হবে। সরকারি স্কুলের উপর ভর্তির চাপ কমবে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস জানায়, জেলায় এবার মোট ২৯,০৭৩ জন পিএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় পরীক্ষা দিয়েছে ১২,৪৩৩ জন।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।