শনিবার দুপুরে টিএসসির ঘটনার ভিডিও চিত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে শাহবাগ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আমাদের মুখ খোলা নিষেধ রয়েছে। তবে ঘটনার তদন্তের স্বার্থে পুলিশ প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য তিনি আহ্বান জানান।
শাহবাগ থানার অপারেশন অফিসার এ কে আজাদ জানান, ভিডিও চিত্র এবং এ জাতীয় কোন বিষয়ে মন্তব্য করতে পারবো না। তবে ভিডিও চিত্র দেখে যা বোঝা যাচ্ছে ঘটনার যেভাবে বর্ণনা দেয়া হয়েছে তার সাথে মিলছে না।
এদিকে ভিডিও ফুটেজ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্র ইউনিয়নের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, মিথ্যাচারের অভিযোগ করার অভিযোগ উঠেছে। ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা দাবি করছেন রাজু ভাস্কর্যের সামনে উদ্যানের গেইটের সামনের ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করছে না কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে সকল ভিডিও চিত্রই প্রকাশ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে টিএসসির ঘটনা নিয়ে বস্ত্রহরণের যে মর্মান্তিক দৃশ্যের অভিযোগ করা হয়েছে সে রকম কোন ঘটনাই ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়নি। এছাড়া ঘটনার দিন ছাত্র ইউনিয়ন ঢাবি সভাপতি লিটন নন্দী নিজের পাঞ্জাবি খুলে মেয়েটিকে জড়িয়ে দিয়েছিলেন সে রকম কোন ভিডিও দেখা যায়নি।
এদিকে লিটন নন্দী জানিয়েছেন, ওই দিন তিনি বিবস্ত্র মেয়েটির লজ্জা ঢাকতে নিজের পাঞ্জাবি খুলে তাকে পড়তে দিয়েছিলেন। ভিডিও ফুটেজ নিয়ে ছাত্র ইউনিয়ন এবং পুলিশ-বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ নিয়ে ক্যাম্পাসে ব্যাপক আলোচনার ঝড় উঠেছে।
তবে প্রাথমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশ প্রশাসন ধারণা করছেন যে ভিডিও চিত্রে যাদের চিহ্নিত করা হয়েছে তারা কেউ-ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয়।
চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের ছবি পোস্টার ও টেলিভিশন মিডিয়াতে ফলাও করে প্রচার করা হবে বলে জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ।
তিনি বলেন, ভিডিও ফুটেজে যাদেরকে চিহ্নিত করা হয়েছে তাদের ছবি আমার হাতে এসেছে। টেলিভিশন মিডিয়ায় অথবা পোস্টারিং আকারে তা প্রচার করা হবে। যাতে করে সন্ত্রাসীদের সবাই চিনতে পারে।
এদিকে গত তিন দিনেও কোন সন্ত্রাসীকে সনাক্ত করতে না পারায় এবং ঘটনা নিয়ে মিথ্যাচার করায় প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা। একই দাবিতে শনিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনও করে তারা।
ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি সভাপতি লিটন নন্দী বলেন, টিএসসির ঘটনা নিয়ে প্রক্টরের মিথ্যাচার, ঘটনার প্রবাহ অন্যদিকে ঘুরানো এবং ঘটনার তিন দিন পরও কাউকে সনাক্ত না করতে পারায় আমরা তার অপসারণ দাবি করছি।
এদিকে টিএসসির বস্ত্রহরণের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নারী নির্যাতন ও যৌন প্রতিরোধ কমিটি’র ওপর দেয়া তদন্তের কাজ এগিয়ে চলছে বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমাদ এ কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন।
তদন্ত সম্পর্কে তিনি জানান, তদন্তের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। তদন্তের কাজে সহায়তার জন্য সকলকে অনুরোধ করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে নারীরা ঘুরতে আসে। এসময় টিএসসি এলাকায় নারীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে কতিপয় সন্ত্রাসী। এসময় তারা একটি মেয়ের শাড়ি ধরে টান দেয়। এতে মেয়েটি রাজু ভাস্কর্যের সামনের রাস্তায় পড়ে যায়। পরে ওই সন্ত্রাসীরা মেয়েটির সাথে থাকা অন্য মেয়েটির প্রতিও অসৎ আচরণ করে এবং যৌন উদ্দীপ্ত বাক্য প্রয়োগ করে।
এ ঘটনা চোখে পড়ে ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি সভাপতি লিটন নন্দী ও তার কর্মীরা। পরে তারা সেখানে গিয়ে এর প্রতিবাদ করে এবং মেয়েদেরকে উদ্ধারের চেষ্টা করে। এসময় তারা সেখান থেকে দু’জন দুষ্কৃতিকারীকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয় ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীরা। কিন্তু পুলিশ ওই দুষ্কৃতিকারীদের ছেড়ে দেয় বলে অভিযোগ করেন ইউনিয়নের কর্মীরা। এ ঘটনার পর ঢাবিতে মিছিল, মিটিং ও সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সারাদেশে যৌন নির্যাতন বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়।