‘টাকার অভাবে’ ছাপানো বন্ধ, নতুন পাঠ্যবই নিয়ে অনিশ্চয়তা

Image

বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া গত কয়েক বছরে রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও তাতে ছেদ পড়া শুরু হয়েছে গত বছর থেকে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবারও যথাসময়ে নতুন বই তুলে দিতে পারবে কি না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

মোট ৩১ কোটি নতুন বইয়ের মধ্যে প্রাথমিক স্তরের সব শ্রেণির বই ছাপা প্রায় শেষ। ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির বই সময়মতো ছাপা নিয়ে বিপাকে এনসিটিবি। ষষ্ঠ-সপ্তমের দুটি বইয়ের পাণ্ডুলিপি এখনো ছাপাখানায় দেওয়া হয়নি। মাত্র শুরু হয়েছে অষ্টমের বই ছাপা। নবম শ্রেণির কোনো বইয়ের পাণ্ডুলিপি এখনো ছাপাখানায় পাঠানোই সম্ভব হয়নি।

পাঠ্যপুস্তক বোর্ড বলছে, বই ছাপার কাজের চুক্তির জন্য অর্থছাড় মিলছে না। ফলে ছাপাখানার মালিকদের টাকা দেওয়াও সম্ভব হয়নি। ছাপাখানা কর্তৃপক্ষ কাগজ কিনতে পারছে না। সবমিলিয়ে টাকার অভাবেই থমকে আছে নবম শ্রেণির বই ছাপা। বিভিন্ন শ্রেণির আরও কয়েকটি বই ছাপার কাজও একই কারণে বন্ধ।

ছাপাখানার মালিক ও কর্মীরা জানান, বই ছাপার ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী—৫০ দিন সময় বেঁধে দিয়ে চুক্তি করে এনসিটিবি। অথচ এ বছরের (২০২৩ সাল) বাকি আছে মাত্র ৩৭ দিন। এ সময়ের মধ্যে কোনো ছাপাখানা প্রতিষ্ঠানই এত বই ছাপিয়ে শেষ করতে পারবে না। টেন্ডার, কাজের চুক্তি, বিল পরিশোধ যথাসময়ে না করায় বই ছাপা নিয়ে লেজেগোবরে অবস্থায় পড়েছে এনসিটিবি।

আরো পড়ুন: ছাপার আগেই ভাইরাল অষ্টম-নবমের পাঠ্যবই

যথাসময়ে বই ছাপা নিয়ে যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে, তার জন্য বোর্ড চেয়ারম্যান ও কর্মকর্তাদের অযোগ্যতাকে দায়ী করছেন মুদ্রণশিল্প সমিতির নেতারা। তাদের অভিযোগ, পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে অনিয়ম-দুর্নীতি বেড়েছে। টেন্ডার শিডিউলের নিয়ম ভেঙে নানান কাজ করছেন বোর্ড চেয়ারম্যানসহ অন্য কর্মকর্তারা। বই ছাপার কাজের চুক্তি ও প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ে তারা নিজেদের পছন্দ গুরুত্ব দিচ্ছেন। নিজেদের অনিয়ম ও অযোগ্যতা ঢাকতে এখন অর্থছাড় না হওয়া এবং কাগজ সংকটের মতো ‘অজুহাত’ দেখাচ্ছেন।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ধরা হয়েছে তিন কোটি ৮১ লাখ ২৭ হাজার ৬৩০ জন। তাদের জন্য বই ছাপা হচ্ছে মোট ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭টি। প্রথম, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ছাপা হচ্ছে ৫ কোটি ৩৮ লাখ ৩ হাজার ৪২৩ কপি বই। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির বই সংখ্যা ৩ কোটি ৩৬ লাখ ১ হাজার ২৭৪টি। প্রাক-প্রাথমিকের জন্য ৬১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭৮ কপি বই ছাপা হবে।

ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৬ কোটি ৪৫ লাখ ৪৮ হাজার ৩০৮ কপি, সপ্তম শ্রেণির ৪ কোটি ৪৫ লাখ ৫৭ হাজার কপি, অষ্টম শ্রেণির জন্য ৫ কোটি ৩৪ লাখ ৮৪ হাজার ২৭১ কপি এবং নবম শ্রেণির জন্য ৫ কোটি ছয় লাখ ৮৪ হাজার ৫৭৩ কপি বই ছাপা হচ্ছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর (পাঁচটি ভাষায় রচিত) শিশুদের জন্য এবার মোট দুই লাখ পাঁচ হাজার ৩১ কপি বই ছাপা হচ্ছে। অন্য বইয়ের মধ্যে পাঁচ হাজার ৭৫২ কপি ‘ব্রেইল’ বই ছাপা হবে।

বই ছাপানোর কাজ করা ঢাকা, নোয়াখালী, বগুড়ার কয়েকটি ছাপাখানায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত সপ্তাহে অষ্টম শ্রেণির বইয়ের টেন্ডারের কার্যক্রম শেষে কার্যপত্রের চুক্তি হয়েছে। অষ্টম শ্রেণির ৮-৯টি বইয়ের পাণ্ডুলিপি তারা পেয়েছেন। সেগুলো ছাপার কাজ মাত্রই শুরু করেছেন। তবে নবম শ্রেণির কোনো বইয়ের পাণ্ডুলিপি ছাপাখানায় এখনো দিতে পারেনি এনসিটিবি। অষ্টম-নবম ছাড়াও অন্তত বিভিন্ন শ্রেণির পাঁচটি বই ছাপানোর কাজ এখনো বাকি। এর মধ্যে ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের পাণ্ডুলিপি এখনো হাতে পাননি ছাপাখানার কর্মীরা।

ছাপাখানা মালিকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ মুদ্রণশিল্প সমিতি’। সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন নেতা এনসিটিবির বই ছাপার কার্যক্রমের খোঁজ-খবর রাখেন। বিষয়গুলো নিয়ে ছাপাখানা মালিকদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন তারা।

মুদ্রণশিল্প সমিতির নেতাদের তথ্যমতে, এখনো প্রায় ১৫ কোটি বই ছাপা বাকি। এর মধ্যে অষ্টম ও নবম শ্রেণিরই প্রায় ৯ কোটি। ডিসেম্বরে এত সংখ্যক বই ছাপার কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না। ১ জানুয়ারি বই উৎসব করতে হলে এনসিটিবিকে গোঁজামিলের আশ্রয় নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের হাতে তিন-চার বিষয়ের বই ধরিয়ে দিয়ে কোনোমতে উৎসবের উদ্বোধন করিয়ে নিতে হবে। হয়তো জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ছাপার কাজ শেষ হবে। তখন পর্যায়ক্রমে বাকি বিষয়ের বইগুলো শিক্ষার্থীদের দেওয়া যাবে।

আরআর প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের স্বত্বাধিকারী ও বাংলাদেশ মুদ্রণশিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জহুরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘নবম শ্রেণির কাজের চুক্তিই তো ঠিকমতো হয়নি। পাণ্ডুলিপি পাওয়া দূরের কথা। অষ্টম শ্রেণির বইয়ের কাজ শুরু হয়েছে মাত্র। ১ তারিখে সব বই তো হবেই না। নবম শ্রেণির ন্যূনতম বইও সব শিক্ষার্থীর হাতে দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।’

সুত্রঃ জাগো নিউজ

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।