জোর দিতে হবে প্রাথমিকে, বাড়াতে হবে শিক্ষকদের বেতন মর্যাদা

ঢাকা: আজ যারা শিক্DU_VC_ষার্থী ভবিষ্যতে তারাই বিভিন্ন সেক্টরে নেতৃ্ত্ব দেবে। তাদেরকে মানসম্মত শিক্ষা দিতে পারলে তার সুফল পাওয়া যাবে সমস্ত সেক্টরে। সুতরাং শিক্ষাক্ষেত্রে বিনিয়োগ হচ্ছে মৌলিক বিনিয়োগ। তাই শিক্ষাখাতেই সবচেয়ে বেশি বাজেট বরাদ্দ রাখা উচিত। শিক্ষাবার্তাকে বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আআমস আরেফিন সিদ্দিক।

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করতে হলে সবার আগে জোর দিতে হবে প্রাথমিক শিক্ষায় এই মত দিয়ে তিনি বলেন, এজন্য নিয়োগ দিতে হবে মানসম্মত শিক্ষক, বাড়াতে হবে তাদের বেতন-ভাতা ও মর্যাদা।

তিনি বলেন, আমি প্রাথমিক শিক্ষার মানের কথা বলছি কারণ আমি চাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ে ভালো শিক্ষার্থী ভর্তি হোক।

একজন শিক্ষার্থীর মূল ভিত গড়ে ওঠে প্রাথমিক স্তরে। প্রাথমিকে তাকে মানসম্মত শিক্ষা দিতে না পারলে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সে বেশি দুর অগ্রসর হতে পারবে না, বলেন আরেফিন সিদ্দিক।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার কুদরত ই খুদা শিক্ষা কমিশনের মাধ্যমে প্রস্তাব করেছিলেন শিক্ষাখাতে মোট বাজেটের ৬৫ শতাংশই প্রাথমিক শিক্ষার জন্য বরাদ্দ রাখার। আর মাধ্যমিকে ২০ শতাংশ এবং উচ্চশিক্ষায় ১৫ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব ছিলো সেই কমিশনের। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার ‍পর সেটা আর বাস্তবায়ন হয়নি।

‘আমি মনে করি প্রাথমিকেই থাকা উচিত শিক্ষা বাজেটের ৬৫ শতাংশ বরাদ্দ,’ বলেন আরেফিন সিদ্দিক।

তিনি বলেন, একজন শিক্ষার্থী প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর পার হয়েই উচ্চ শিক্ষায় প্রবেশ করে। সেক্ষেত্রে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে তার মান ভালো না থাকলে উচ্চ শিক্ষায় প্রবেশ করা তার জন্য দুঃসাধ্য হয়ে যাবে, প্রবেশ করলেও তা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হবে।’

প্রাথমিক শিক্ষকতায় মেধাবীদের টেনে আনতে তাদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন ঢাবি উপাচার্য।

তিনি বলেন, একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের বেতন সরকারি অফিসের পিয়ন দারোয়ানের সমান। এই বেতন নিয়ে তিনি কিভাবে মানসম্মত শিক্ষা দেবেন। এ জন্যই মেধাবী ও যোগ্যতাসম্পন্নরা প্রাথমিক শিক্ষকতায় যেতে চান না।

অতীতের উদাহরণ টেনে অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেন, একটা সময় ছিল যখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে ছেলেমেয়েরা প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করতে গ্রামে চলে যেত। তখন বেতন-ভাতা বেশি না থাকলেও প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের একটা মর্যাদা ছিল। কিন্তু কম বেতন হওয়ায় মেধাবী ও যোগ্যরা প্রাথমিক শিক্ষকতায় না যাওয়ায় মর্যাদার সে জায়গাটিও আজ হারিয়ে গেছে।

প্রাইমারি শিক্ষকদের চাকরির মর্যাদা প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করার পরামর্শ দিয়ে ঢাবি উপাচার্য বলেন, তাহলেই মেধাবীরা শিক্ষকতায় আগ্রহী হবে এবং শিক্ষার্থীরা পাবে মানসম্মত শিক্ষা।’

‘আর প্রাথমিকে ভালো মানের শিক্ষা পেলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষায়ও তারা ভালো হবে। এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও পাবে ভালো শিক্ষার্থী। ফলে দেশের শিক্ষাব্যাবস্থা হয়ে উঠবে আন্তর্জাতিক মানের।’

তিনি বলেন, একটা সময় ছিল যখন শিশুদের স্কুলে ভর্তি করাটাই ছিল চ্যালেঞ্জ। এখন আর সে অবস্থা নেই।কারণ প্রায় শতভাগ শিশুই এখন স্কুলে ভর্তি হচ্ছে। বছরের প্রথম দিনে তাদের হাতে বই তুলে দেওয়া হচ্ছে। এটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। এখন সময় এসেছে প্রাথমিক শিক্ষার মানের দিকে নজর দেওয়ার।

এদিকে সম্প্রতি প্রকাশিত অষ্টম মজুরী বোর্ডে টাকার অঙ্কে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতন বাড়লেও মর্যাদা কমানো হয়েছে আগের চেয়ে দুই ধাপ। বাংলানিউজের পক্ষ থেকে বিষয়টি উত্থাপন করা হলে অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেন, এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শিক্ষকদের ওপর।

বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মনে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষকরাই হচ্চে জাতি গড়ার মূল কারিগর। তাদের মাঝে অসন্তোষ রাখা ঠিক হবে না। তাই বিষয়টি পুনর্বিচেনা করা হবে বলে আশা করছি।

আরেফিন সিদ্দিক বলেন, শিক্ষকদের আর্থিক সুবিধা বলতে তাদের বেতনটুকুই। অন্য সরাকারি কর্মকর্তা বা আমলাদের মত বাড়তি কোন আর্থিক সুবিধা তারা পান না। তাই বেতন ভাতা নিয়ে তাদের মাঝে অসন্তোষ সৃষ্টি হলে শিক্ষাক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য বলেও মত দেন তিনি।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।