জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় ভোগান্তিতে কোটি গ্রাহক

ডেস্ক রিপোর্ট : জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় নানা ভোগান্তি পোহাচ্ছে এক কোটি নাগরিক। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, জমি রেজিস্ট্রি, পাসপোর্ট করাসহ নানা কাজে ভোগান্তি হচ্ছে তাদের। স্মার্টকার্ড দেওয়ার কথা বলে নির্বাচন কমিশন দীর্ঘদিন ধরেই কাগুজে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়াও বন্ধ রেখেছে। বর্তমানে দেশে ১০ কোটি ভোটার হলেও ৯ কোটি ভোটারের হাতে দেওয়া হচ্ছে স্মার্টকার্ড। সে ক্ষেত্রে বাকি নাগরিকদের কাগুজে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হবে নাকি স্মার্ট— তাও পরিষ্কার করে বলছে না নির্বাচন কমিশন। এদিকে অনলাইন থেকে সাময়িক জাতীয় পরিচয়পত্র নেওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও অনলাইন কার্যক্রমের সেবা পাচ্ছেন না নাগরিকরা।

অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে সাময়িক জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য লগইন করে কোনো সাড়া পাওয়া যায় না। অনেক সময় বলা হয় অফিস টাইমে লগইন করতে, কিন্তু তাতেও কাজ হয় না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও অনলাইনেও মিলছে না সাময়িক জাতীয় পরিচয়পত্র। এমনকি বর্তমানে যারা ভোটার হচ্ছেন ইসির পক্ষ থেকে তাদের অনলাইন থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করার পরামর্শ দেওয়া হলেও অনলাইনের সেবা পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন অনেক নাগরিক।

২০১৪ ও ২০১৫ সালের হালনাগাদে অন্তর্ভুক্ত হওয়া নতুন ভোটারের হাতে জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় বিভিন্ন কাজে পরিচয়পত্র বিড়ম্বনায় পড়ছেন তারা। এসব নতুন ভোটারকে স্মার্টকার্ড দেওয়ার কথা থাকলেও ঢাকার ভোটারদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। আর গ্রামগঞ্জের ভোটারদের স্মার্টকার্ড পাওয়ার জন্য আগামী বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। তবে অনেকে আগামী বছরের মাঝামাঝিতে স্মার্টকার্ড হাতে পেতে পারেন। অনেকে আবার স্মার্টকার্ড পাওয়া থেকে বাদ পড়তে পারেন।

কেননা চুক্তি অনুযায়ী ৯ কোটি ভোটারের হাতে আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে স্মার্টকার্ড দেবে ইসি। এ ক্ষেত্রে ১০ কোটি ভোটারের মধ্যে ৯ কোটি স্মার্টকার্ড পেলে, বাকি ১ কোটি ভোটারের ভাগ্যে কী আছে তা কেউ জানে না। যদিও ইসি বলছে সরকারি তহবিল থেকে তাদের স্মার্টকার্ড দেওয়া হবে। তবে কবে নাগাদ তা অনুমোদন হবে, তাও বলতে পারছে না ইসি।

শফিকুল ইসলাম পড়েন একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভোটার হয়েছেন ২০১৪ সালে। এখনো জাতীয় পরিচয়পত্র পাননি। নির্বাচন কমিশনের থানা অফিস থেকে বলা হয়েছে, নতুন ভোটারদের স্মার্টকার্ড দেওয়া হবে। সেই আশায় আছেন তিনি। কিন্তু বর্তমানে জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া অনেক সেবাও নিতে পারছেন না। বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে একটি মোবাইল সিম কিনে ব্যবহার করছেন, বায়োমেট্রিকও করেছেন বারার নামে। এমনকি জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় কোনো ব্যাংক হিসাবও খুলতে পারছেন না এই শিক্ষার্থী। অন্যদিকে শহর-গ্রামগঞ্জের মানুষ জাতীয় পরিচয়পত্রের অভাবে মেয়ের বিয়ে থেকে শুরু করে জমি রেজিস্ট্রিসহ অনেক কাজ করতে পারছেন না।
জানা গেছে, ২০১৪ সালে হালনাগাদে ৪৭ লাখ নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এরপর সব মিলে ১ কোটি ভোটার নতুন হয়েছেন। তারা বলেন, স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ শুরু হয়েছে। ৪০০ দিনে মোট ৯ কোটি ভোটারের হাতে তুলে দেওয়া হবে উন্নতমানের এ কার্ড। কিন্ত বর্তমানে দেশে ভোটার রয়েছেন ১০ কোটি। বাকি ১ কোটি নাগরিকের হাতে কবে আসবে স্মার্টকার্ড? এ নিয়ে ভোটারদের মনে তৈরি হয়েছে সংশয়। ইসি কর্মকর্তারাও জটিলতায় পড়েছেন এ হিসাব নিয়ে। যদিও নির্বাচন কমিশন বলছে, ২০১৭ সালের মধ্যে দেশের সব ভোটারের হাতেই তুলে দেওয়া হবে স্মার্টকার্ড। স্মার্টকার্ড প্রস্তুত ও বিতরণের লক্ষ্যে ফ্রান্সের অবার্থুর টেকনোলজিস নামে এক সংস্থার সঙ্গে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার চুক্তি করে ইসি।

ইসি সচিবালয় বাস্তবায়নাধীন ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহেনসিং এক্সেস টু সার্ভিসেস—আইডিইএ’ প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ২০১৫ সালের হালনাগাদে যারা ভোটার হয়েছেন, সেসব নাগরিকও স্মার্টকার্ড পাছেন প্রথম পর্যায়ে। যদিও সংশোধিত চুক্তিতে যেই ৯ কোটি ভোটারের হিসাব ধরা হয়েছিল, সেখানে ঢাকার নতুন ভোটার সংখ্যা উল্লেখ ছিল না। তাহলে ঢাকার এই ভোটারদের জায়গায় বাদ পড়ছেন কারা— এমন প্রশ্নও রয়েছে ভোটারদের মনে। ইসি কর্মকর্তারা বলেন, বাকি ১ কোটি ভোটারের জন্য নতুন করে চুক্তি করবে নির্বাচন কমিশন। এর জন্য প্রাথমিক কাজও এগিয়ে নেওয়া হয়েছে। স্মার্টকার্ড পাওয়া থেকে একজন ভোটারও বাদ পড়বেন না এবং ২০১৭ সালের মধ্যেই সবাই তথা ১০ কোটি ভোটার স্মার্টকার্ড হাতে পাবেন। বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।