খোজ মিলছে না নর্থ সাউথের আরো ২ শিক্ষার্থীর!

শিক্ষা ডেস্ক : গত ১ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে চার তরুণ নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিখোঁজরা একই দিনে নিখোঁজ হন। নিখোজ চার তরুণরা হলো- সাফায়েত হোসেন, জায়েন হোসেন খান পাভেল, সুজন ও মেহেদী।

এর মধ্যে সাফায়েত ও পাভেল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথের ছাত্র। বাকি দু’জনের মধ্যে সুজন বনানী এলাকার একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের কর্মরত ছিল। তবে মেহেদী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি। তারা চার জনই বন্ধু। তাদের বয়স ২২ থেকে ২৫-এর মধ্যে। এ ঘটনায় নিখোঁজ পাভেলের বাবা রাসেল খান বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং ১১৯) করেছেন। পুলিশ কর্মকর্তাদের সন্দেহ, নিখোঁজ তরুণরা স্বেচ্ছায় কোনও ধর্মীয় উগ্রপন্থী সংগঠনের সঙ্গে যোগ দিয়ে থাকতে পারে।

পুলিশ সূত্রে জানায়, গত ১ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর বনানী কাঁচাবাজার এলাকায় নর্দান ইউনিভার্সিটির পাশের একটি রেস্তোরাঁয় সাফায়েত ও পাভেল একসঙ্গে খাবার খায়। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় অন্য বন্ধু সুজন। এর কিছুক্ষণ পর তারা একসঙ্গে রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে যায়। এরপর থেকে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই ঘটনার পর জানা যায়, তাদের সঙ্গে মেহেদী নামে আরও এক বন্ধুও নিখোঁজ হয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, চার তরুণের এক সঙ্গে নিখোঁজ হওয়া নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের কেউ অপহরণ করলে পরিবারের কাছে মুক্তিপণের টাকা চাইতো। কিন্তু নিখোঁজ হওয়ার তিন দিন পরও পরিবারের সদস্যদের কেউ ফোন দেয়নি। পরিবারের সদস্য ও পুলিশ কর্মকর্তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সংস্থায় খোঁজ নিয়েছেন। এই চারজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করেছে বলেও কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মোস্তাক আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ ঘটনায় একটি জিডি হয়েছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। কেউ তাদের তুলে নিয়ে গেছে, নাকি তারা স্বেচ্ছায় নিখোঁজ হয়েছে, এসব বিষয় সামনে রেখেই তদন্ত চলছে।’

বনানী থানার উপ-পরিদর্শক এসআই সোহেল রানা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সবগুলো বিষয় সামনে রেখেই অনুসন্ধান করছি। তাদের কেউ তুলে নিয়ে গেছে, নাকি স্বেচ্ছায় ঘর ছেড়ে চলে গেছে, তা জানার চেষ্টা চলছে।’

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, নিখোঁজ চার তরুণের মধ্যে পাভেল নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স বিভাগের শিক্ষার্থী। সাফায়েতও এ-লেভেল এবং ও-লেভেল সম্পন্ন করে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়েছিল সে। বর্তমানে বাবা আলী হোসেনের সঙ্গে পুরান ঢাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মাঝে মধ্যে বসতো।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সাফায়েতের প্রোফাইল ঘেঁটে দেখা যায়, সে নিয়মিত ধর্মীয় নানা বিষয়ে পোস্ট দিতো। বিতর্কিত ইসলামি চিন্তাবিদ আবু আমিনাহ বিলাল ফিলিপস, মোটিভেশনাল মুসলিমস, দাওয়াহ দুনিয়া, সৌদিভিত্তিক ইসলামি চিন্তাবিদ অসিম আল হাকিমসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও গ্রুপের ধর্মীয় পোস্ট নিয়মিত শেয়ার দিতো। চার তরুণের তিন জনের ফেসবুক প্রোফাইল ঘেঁটে দেখা গেছে, তিন জনের একজন ২০ নভেম্বর, একজন ২৩ নভেম্বর ও অন্যজন ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত ফেসবুকে সক্রিয় ছিল। ১ ডিসেম্বর থেকে নিখোঁজ হলেও এর আগে ফেসবুকে তাদের আর কোনও পোস্ট দেখা যায়নি।

সাফায়েতের এক স্বজন জানান, ‘সাফায়েত নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো। এমনকি তাহাজ্জুদের নামাজও আদায় করতো। নিখোঁজ চার জনের মধ্যে তিন জনেরই দাঁড়ি রয়েছে। জায়েন হোসেন খান পাভেলও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতো। সাফায়েত ও পাভেল ছোটবেলা থেকেই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আর পাভেলের মাধ্যমে সুজন ও মেহেদীর সঙ্গে সাফায়েতের পরিচয় হয়। পরবর্তী সময়ে চার জনই ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে যায়।

জানা গেছে, নিখোঁজ সাফায়েতের বাবার নাম আলী হোসেন। জায়েন হাসান খান পাভেলের বাবার নাম রাসেল খান ও সুজনের বাবার নাম আনিসুর রহমান।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা জানান, ‘উগ্র-জঙ্গিবাদে জড়িয়ে যারা ঘর ছেড়েছেন তাদের বেশিরভাগই মাসের শুরুতে অথবা শেষে বাসা থেকে বেড়িয়ে যান। বনানীর নিখোঁজ হওয়ার চার তরুণও ১ ডিসেম্বর নিখোঁজ হন। এ কারণে তাদের উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়ার সন্দেহ ঘনিভূত হচ্ছে। এমনকি নিখোঁজ হওয়ার আগের দৈনন্দিন কার্যক্রম সেই সন্দেহ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

ওই কর্মকর্তা জানান, ‘গুলশানসহ অন্যান্য জঙ্গি আস্তানায় নিহত জঙ্গিদের সবাই স্বেচ্ছায় ঘর ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল। তাওসিফ ও নিবরাস ৩ ফেব্রুয়ারি একসঙ্গে ঘর ছাড়ে। ২৯ ফেব্রুয়ারি ঘর ছাড়ে মীর সামিহ মোবাশ্বের। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর ঘর ছেড়েছিল রোহান ইমতিয়াজ।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।