ঈদের ছুটির পর কঠোর আন্দোলনে শিক্ষকেরা

নিজস্বপ্রতিবেদক: অষ্টম বেতন স্কেলে বেতন ও পদমর্যাদা নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা নিরসন এবং পৃথক বেতনকাঠামোর দাবিতে আন্দোলনরত প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা ঈদের ছুটির পর আন্দোলন আরও জোরদার করবেন। তাঁরা ঈদের পর লাগাতার কর্মবিরতি ও পরীক্ষা বর্জনের মতো কর্মসূচি নিতে যাচ্ছেন।
বেতন ও পদমর্যাদা নিয়ে আন্দোলন

শিক্ষকদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ঈদপরবর্তী আন্দোলন পরিকল্পনার কথা জানা গেছে।
এদিকে শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে আগামী ৯ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নভেম্বর থেকে অনুষ্ঠেয় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষাও ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। এ ছাড়া বছরের শেষ সময়ে অন্যান্য পরীক্ষার প্রস্তুতিও বাধাগ্রস্ত হতে পারে। বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় চার লাখ।
পৃথক বেতনকাঠামো ও অষ্টম স্কেলে সৃষ্ট গ্রেড সমস্যা নিরসনের দাবিতে প্রায় চার মাস ধরে আন্দোলন করছেন ৩৭টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। তাঁরা সর্বশেষ ১৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের শীর্ষস্থানীয় একজন নেতা গতকাল বুধবার প্ বলেন, তাঁদের পরিকল্পনা হলো ঈদের ছুটির পর অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আবার আন্দোলন শুরু করা। প্রথমে দুদিনের কর্মবিরতি, পরে তিন দিনের কর্মবিরতি এবং তারপর লাগাতার কর্মবিরতি পালনের পরিকল্পনা করছেন তাঁরা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব এ এস এম মাকসুদ কামাল  বলেন, দাবি পূরণ ছাড়া তাঁরা কোনোভাবে সরে আসবেন না। আগামী ৪ বা ৫ অক্টোবর ফেডারেশনের সভা করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, এত দিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মোট অধ্যাপকের মধ্যে ২৫ শতাংশ সিলেকশন গ্রেড পেয়ে গ্রেড-১-এ (সচিবদের সমান) যাওয়ার সুযোগ পেতেন। কিন্তু অষ্টম বেতন স্কেলে সিলেকশন গ্রেড বাদ দেওয়ায় সেই সুযোগ বন্ধ হয়ে গেল। এ কারণে দলমত-নির্বিশেষে সব শিক্ষক আন্দোলনে নেমেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তথ্যানুযায়ী, দেশে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রয়েছেন ১২ হাজার ২৮১ জন।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের এ দাবির বিষয়টি কীভাবে নিরসন করা যায়, তা নিয়ে গত সোমবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বৈঠক করেছেন। তার আগে গত শনিবার শিক্ষামন্ত্রী তাঁর বাসায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষকনেতার সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ  বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা যাতে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তবে কলেজশিক্ষকদের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আলোচনার উদ্যোগ দেখা যায়নি। অষ্টম বেতন স্কেলে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বহাল রাখার এবং শিক্ষকদের পদমর্যাদা উন্নীতকরণের দাবিতে সব সরকারি কলেজের শিক্ষকেরা ইতিমধ্যে তিন দিন কর্মবিরতি পালন করেছেন।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির মহাসচিব আই কে সেলিম উল্লাহ খন্দকার গতকাল  বলেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। ১০ অক্টোবরের মধ্যে দাবি পূরণের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আশ্বাস না পেলে শিক্ষকেরা ১৩ ও ১৪ অক্টোবর ক্লাস বর্জন করবেন। ১৮ অক্টোবর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (শিক্ষা ভবন) সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন। দাবি পূরণ না হলে পরবর্তী সময়ে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
দেশে ৩০৫টি সরকারি কলেজ ও সমপর্যায়ের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আর শিক্ষা ক্যাডারে মোট কর্মকর্তা আছেন প্রায় ১৪ হাজার।
কয়েকটি দাবিতে আলাদাভাবে আন্দোলন করছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ১১টি সংগঠন। এর মধ্যে চারটি সংগঠন নিয়ে একটি ফেডারেশন, পাঁচটি সংগঠন নিয়ে একটি জোট ও দুটি সংগঠন পৃথকভাবে আন্দোলনে রয়েছে। সংগঠনগুলোর নেতারা গত মঙ্গলবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কিন্তু দাবি পূরণ না হওয়ায় ঈদের পর লাগাতার কর্মবিরতিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।
এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতি আন্দোলন করছে প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার পদমর্যাদা, জাতীয় বেতন স্কেলের দশম গ্রেডে অন্তর্ভুক্ত করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে। তারা এসব দাবি বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে।
সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম ছায়িদ উল্লা  বলেন, দাবি পূরণ না হলে ৩ অক্টোবর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত তিন ঘণ্টার কর্মবিরতি ও ৬ অক্টোবর থেকে লাগাতার পূর্ণদিবস কর্মবিরতিতে যাবেন তাঁরা।
অষ্টম বেতন স্কেলে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে অন্তর্ভুক্ত করা এবং টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বহাল রাখার দাবিতে আন্দোলন করছে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ফেডারেশন।
ফেডারেশনভুক্ত বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজের সভাপতি শাহিনুর আল আমীন বলেন, তাঁরা দাবি পূরণের জন্য ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছেন। দাবি পূরণ না হলে ১৫ অক্টোবর সারা দেশের শিক্ষকেরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনশন কর্মসূচি পালন করবেন। এরপরও দাবি পূরণ না হলে আগামী নভেম্বর থেকে অনুষ্ঠেয় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার দায়িত্ব বর্জন করবেন শিক্ষকেরা।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, প্রায় ৬৩ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় পৌনে চার লাখ শিক্ষক আছেন।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আলমগীর  বলেন, প্রাথমিক শিক্ষকদের এসব দাবি তিনি গতকাল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবকে জানিয়েছেন। আন্দোলনের কারণে শিক্ষার্থীদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মহাপরিচালক।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।