প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকের ৫ বছর পর যোগদান

শরীয়তপুর: ৩ দিনের ছুটির কথা কথা বলে ৫ বছর ইতালী থেকে প্রবাস জীবন কাটিয়ে এসে বিদ্যালয়ে যোগদান করেছেন শরীয়তপুরের নড়িয়ার ৬৯ নং নলতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষক।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জেবুন নেছা ওই শিক্ষকের অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি প্রতি মাসে রিটার্ন মিটিংয়ে মৌখিক ও লিখিতি অভিযোগ করলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। ৫ বছর অনুপস্থিত থেকে বিদ্যালয়ে যোগদান করায় অভিভাবক, শিক্ষকসহ স্থানীয় জনমনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নাসির সরদার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছেন।
নড়িয়ার ৬৯ নং নলতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জেবুন নেছা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার ৬৯ নং নলতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মো. দেলোয়ার হোসেন সহকারী শিক্ষক হিসেবে ঐ বিদ্যালয়ে চাকুরী করে আসছেন। তিনি গত ২০১২ সালের মার্চ মাসের ২১ তারিখ থেকে ২০১৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন। ঐ বছর ২৯ ডিসেম্বর বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। এরপর তিনি ৪ মাস ৮ দিন কর্মরত থেকে ৩ দিনের ছুটি নিয়ে ইতালী চলে যান। ২০১৪ সালের মে মাসে সহকারী শিক্ষক মো. দেলোয়ার হোসেন পুনরায় ইতালী চলে যান।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জেবুন নেছা কর্তৃপক্ষ বরাবর যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য লিখিত অভিযোগ করেন। লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ওই শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলে কোন জবাব দেননি তিনি। ২০১৭ সালের ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত এবং বিদ্যালয়ে যোগদানের জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবুল কালামের বরাবরে আবেদন করেন।
জেলা শিক্ষা অফিসার মো. আবুল কালাম ২৮ অক্টোবর বিদ্যালয়ে যোগদানের অনুমতি প্রদান করেন। ৫ বছর অনুপস্থিত থেকে বিদ্যালয়ে যোগদান করায় অভিভাবক, শিক্ষক ও জনমনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সহকারী শিক্ষক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী ছুটি নিয়ে নিতিমালা অনুযায়ী বিদ্যালয়ে যোগদান করেছি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জেবুন্নেছা বলেন, বিদ্যালয়ে ৩ দিনের ছুটির আবেদন করে চলে যায়। এরপর দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিল। এ বিষয়ে আমি একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কোন সুরাহা হয়নি। পরে শুনেছি সহকারী শিক্ষক ইতালী গিয়েছেন। গত ২৮ অক্টোবর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে অনুমতি নিয়ে বিদ্যালয়ে যোগদান করেন।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. নাসির উদ্দিন সরদার বলেন, একজন শিক্ষক ৫ বছর ইতালী থেকে দেশে ফিরে কিভাবে বিদ্যালয় যোগদান করেছে তা আমার জানা নেই। তবে এটা জালিয়াতি ছাড়া কোন ভাবেই সম্ভব নয়। আমাদের এলাকার অধিকাংশ লোকজনই জানেন সহকারী শিক্ষক ৫ বছর ইতালীতে কাটিয়েছে।
নড়িয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. তাজুল ইসলাম বলেন, আমি শুনেছি জেলা শিক্ষা অফিসে যথাযথ কাগজপত্র দেখিয়ে সহকারী শিক্ষক মো. দেলোয়ার হোসেন বিদ্যালয়ে যোগদান করেছেন।
এ বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, কোন শিক্ষক ৫ বছরের কম সময় অনুপস্থিত থেকে বিদ্যালয়ে যোগদান করতে চাইলে সে যোগদান করতে পারবে। কিন্তু সে যদি অন্যত্র চাকুরী করে থাকে এমন অভিযোগ পাওয়া গেলে তার চাকুরী চলে যাবে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে এবং বিভাগীয় মামলা হয়েছে।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।