ডেস্ক রিপোর্ট : পাবলিক পরীক্ষা ব্যবস্থা সংস্কার করার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। শ্রেণীকক্ষে পাঠদানের সময় বাঁচাতে এবং শিক্ষা বোর্ডগুলোর কাজের চাপ কমাতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে পাবলিক পরীক্ষার সময়সূচি কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আগামীতে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সময় একদিন কিংবা সর্বোচ্চ দুই দিন ফাঁক বা গ্যাপ রাখা হবে। প্রয়োজনে একদিনে দুটি করে পরীক্ষাও নেয়ার চিন্তাভাবনা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই দুই স্তর থেকে অপ্রয়োজনীয় বা কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো (সাবজেক্ট) বাদ দেয়া কিংবা একশ নম্বর থেকে কমিয়ে ৫০ নম্বরের পরীক্ষা নেয়া যায় কিনা তা নিয়েও চিন্তাভাবনা চলছে।
আগে এসএসসি ও একাদশ শ্রেণীর এইচএসসি- এই দুটি পাবলিক পরীক্ষা নেয়া হতো। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই দুই পরীক্ষার সঙ্গে যোগ হয়েছে পঞ্চম শ্রেণীর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী এবং অষ্টম শ্রেণীর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট বা জেএসসি পরীক্ষা। এতে ছাত্রছাত্রীদের ঘাঁড়ে পরীক্ষার বোঝা যেমন বেড়েছে, তেমনি খাতা মূল্যায়নে নাকাল হচ্ছেন পরীক্ষকরা। কাজের চাপ বেড়েছে শিক্ষা বোর্ডগুলোর। এছাড়া ঘন ঘন পাবলিক পরীক্ষার কারণে ছাত্রছাত্রীদের যেমন মানসিক চাপে থাকতে হচ্ছে, তেমনি এই সময়ে স্কুলও বন্ধ থাকছে। এতে অন্য শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা শ্রেণী কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়েই অভিভাবকরা সন্তানদের প্রাইভেট কোচিংয়ে পাঠাচ্ছে। ফলে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ বাড়ছে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সম্প্রতি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘আমাদের পাবলিক পরীক্ষা পদ্ধতি খুবই খারাপ। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হতে দেড় মাস করে সময় লাগে। এরপর আছে জেএসসি ও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা। এসব পরীক্ষা সম্পন্ন করতে অনেক সময় লাগে’।
তিনি বলেন, ‘রাতারাতি এ পরীক্ষার পদ্ধতি পরিবর্তন সম্ভবও নয়। এরপরও বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। তাছাড়া শিক্ষকরাও অনেক ক্ষেত্রেই ক্লাসে তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী পড়ান না। অথচ একই শিক্ষক কোচিং সেন্টারে গিয়ে ক্লাসের চেয়ে ভালোভাবে পড়ান। এটা খুবই হতাশাজনক’।
এ বিষয়ে আন্ত:শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাবকমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তাসলিমা বেগম বলেছেন, ‘চারটি পাবলিক পরীক্ষা নিতেই বছরের প্রায় ছয় মাস চলে যায়। এই সময়ে স্কুল-কলেজের শ্রেণী কার্যক্রম প্রায় বন্ধই থাকে। তাই দীর্ঘ সময়ে পরীক্ষা না নিয়ে অল্প দিনে কীভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করা যায় সে বিষয়টি বিবেচনায় নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনা দিয়েছি’।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সময় সকাল-বিকাল পরীক্ষা হতো। এখন দুই পরীক্ষার মাঝে কয়েকদিনের বন্ধ না দিলে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা আন্দোলন শুরু করে। এতো পরীক্ষার কারণে স্কুল-কলেজগুলোতে ঠিকমতো ক্লাস নেয়া যাচ্ছে না’।
চেয়ারম্যান জানান, ‘সময়সূচি কমানোর পাশাপাশি প্রতি উপজেলায় একটি করে মাল্টিপারপাস হল প্রতিষ্ঠারও প্রস্তাব করেছি, যাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের পরীক্ষার্থীরা এসব হলে পরীক্ষা দিতে পারে’।
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও মিরপুর বাঙলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ বদরউদ্দীন হাওলার বলেন, ‘আমরা যখন এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি, তখন টানা পরীক্ষা নিয়ে মাত্র ১৫/২০ দিনেই সব পরীক্ষা শেষ করা হতো। রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা কারণে এখন এই পরীক্ষা শেষ করতে সময় লাগছে দুই/তিন মাস। তবে হঠাৎ করে আগের অবস্থায় গিয়ে টানা পরীক্ষা নেয়া হলে অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে। বিষয়টি রাজনৈতিক ইস্যুতেও পরিণত হতে পারে’।
২০১৪ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা গত ৯ জানুয়ারি শুরু হয়েছে। এ পরীক্ষা শেষ হবে আগামী ২৭ মার্চ। এই সময়ে বড় ধরনের কোন কর্মসূচি না থাকলেও দু’পর্বে বিশ্ব এজতেমা এবং স্থানীয় নির্বাচনের কারণে এই পরীক্ষা গ্রহণে প্রায় দুই মাস সময় লাগছে। এর আগে বিএনপি-জামায়াত জোটের ঘন ঘন হরতাল ও লাগাতার অবরোধের কারণে গত বছর এসএসসি ও এইচএসসির ২৬টি বিষয়ের পরীক্ষা পেছাতে হয়েছিল। আর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও জেএসসি পরীক্ষার সময়ও ছিল একই কর্মসূচি। ধ্বংসাত্মক রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে অনেক স্কুল বার্ষিক পরীক্ষাও পুরোপুরি শেষ করতে পারেনি।
এছাড়াও পরীক্ষাকালীন ছুটি ছাড়াও স্কুল কলেজগুলোতে বছরে ৫২ দিন রয়েছে সাপ্তাহিক ছুটি। অন্য ছুটি রয়েছে প্রায় ৮৫ দিনের। সবমিলিয়ে বছরের আট মাস কোন না কোন কারণে স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। এতে পুরো সিলেবাস শেষ করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের ছুটতে হয় কোচিংয়ের পেছনে।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ুয়া এক ছাত্রীর অভিভাবক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘পরীক্ষার চাপে শ্রেণী কার্যক্রম হয় না বললেই চলে। কোচিং সেন্টার আর প্রাইভেট টিউটরদের পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতেই মেয়ে ও মেয়ের মা’র জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে।’
২০১৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে আগামী ৩ এপ্রিল। চলবে ৫ জুন পর্যন্ত। এর ব্যবহারিক পরীক্ষা আগামী ৭ জুন শুরু হয়ে চলবে আগামী ১৬ জুন পর্যন্ত। এতো দীর্ঘদিন পরীক্ষা নেয়ার সময়সূচি ঘোষণার পরও সন্তুষ্ট নয় পরীক্ষার্থীরা। ওই পরীক্ষার রুটিন অনুযায়ী ২১ এপ্রিল পৌরনীতি দ্বিতীয়পত্র, ২২ এপ্রিল মনোবিজ্ঞান প্রথমপত্র, ২৩ এপ্রিল অর্থনীতি ও ২৪ এপ্রিল মনোবিজ্ঞান ২য়পত্রের পরীক্ষার সূচি থাকায় গত সপ্তাহে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে রাজধানীর বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। তারা প্রতিটি পরীক্ষার একদিন হলেও ছুটি রাখার দাবি জানান। সংবাদ