ঢাকা,১০ ফেব্রুয়ারী: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেডে এবং সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১১ তম গ্রেডে উন্নীত করার দাবিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। আন্দোলনের অংশ হিসেবে তাঁরা ঢাকায় সমাবেশ করে আসন্ন প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বর্জনেরও হুমকি দিয়েছিলেন। অবশ্য পরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করার পর শিক্ষকেরা পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।
রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মনোয়ারা ইশরাত স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতিবাচক ও নেতিবাচক অনেক মন্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। যার প্রেক্ষিতে শিক্ষকদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত বছরের ৭ নভেম্বর অর্থ বিভাগের সম্মতিক্রমে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মাঠপর্যায়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতনস্কেল ১৪ থেকে ১৩তম গ্রেডে উন্নীতকরণ করা হলো।
বলা হয়েছে, নির্দেশনার ফলে এখন থেকে সহকারী শিক্ষকরা যোগদানের পরই ১৩তম গ্রেডে মূল বেতন ১১ হাজার টাকা সুবিধা পাবেন। আগে এ স্তরের শিক্ষকরা ১৫তম গ্রেডে যোগদানের পর প্রশিক্ষণবিহীন অবস্থায় ৯ হাজার ৭০০ টাকা মূল বেতন পেতেন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হওয়ার পর ১৪তম গ্রেড উন্নীত হয়ে ১০ হাজার ২০০ টাকা বেতন পেতেন।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়, নতুন বেতন গ্রেড যোগ্যতা-অভিজ্ঞতা অনুযায়ী কার্যকর করা হবে। এ বিষয়ে বিদ্যমান সকল বিধি-বিধান ও আনুষ্ঠানিকতা যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। এ-সংক্রান্ত ব্যয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের বেতন-ভাতা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে সমন্বয় করা হবে।
এর আগে প্রাথমিকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা এতদিন চতুর্দশ (১০,২০০–২৪,৬৮০ টাকা) এবং প্রশিক্ষণবিহীনরা পঞ্চদশ গ্রেডে (৯,৭০০ – ২৩,৪৯০ টাকা) বেতন পেয়ে আসছিলেন। এখন থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষকদের সবার বেতন ত্রয়োদশ গ্রেডে (১১,০০০ – ২৬,৫৯০ টাকা) শুরু হবে। সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড উন্নীত করা হলেও প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড আগের মতই রাখা হয়েছে।
এদিকে ১৩ গ্রেড নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শিক্ষকদের দাবি তাদের ৯৫ শতাংশ শিক্ষকই এই গ্রেডের সঙ্গে একমত না। এনিয়ে তাদের করা বেশ কিছু মন্তব্য তুলে সোনালীনিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলে।
রাকিব হাসান বলেছেন, যদি ডিগ্রী থাকে কমবে না বরং বাড়বে, ডিগ্রি না থাকলে অপরিবর্তিত থাকবে।
মো. আকবর হোসেন (Md Akbar Hosen) নামে একজন লিখেছেন- রিট ছাড়া ফিট হবেনা।
মাওলানা মামুনুর রশিদ নামে একজন লিখেছেন-(Mawlana Mamunur Rashid) আর প্যাচাল বাড়াইয়েন না স্যার। আপনাদের দলাদলি তথা ফুঙ্গাফুঙ্গির কারণে সমস্যা দিনকে দিন বাড়ছে বৈ কমছে না।
১৩ গ্রেড নিয়ে কবিতার পোস্ট করে তারেক আল মামুন (তরুন)
তার পোস্টে মন্তব্য করে শান্ত আহমেদ (Shanto Ahamed) সুন্দর লিখেছেন। কিন্তু স্যার ৫ পার্সেন্ট শিক্ষকও খুশি নয় এই ১৩ তে।। ৯৫ ভাগ সদস্যদের অসন্তুষ্ট রেখে এতটা আত্নতৃপ্তিতে ভোগাটা কেমন কেমন লাগে।
আনোয়ার হোসেন (Anwar Hossain) নামে একজন মন্তব্য করেছেন, আপনার কবিতা অতি চমৎকার কিন্তু বেশিরভাগ শিক্ষক ১৩ তে অমৎকার!
কবিতার নিচে ‘রিমা রিমা’ মন্তব্যে লিখেন, বিবেকের দরজা বন্ধ হয়ে গেলে বিবেক শিখানো যায়না।আমাদের দেশের সরকারের বিবেক মরে গেছে.. প্রতিবাদ করবেন,,,সব পন্থাই উনাদের কাছে আছে।
২০১৯ পূর্বতন সহকারী (HSC) যদি ১৩তম না পায়! তবে ২০১৯ পূর্বতন প্রশি (Hsc) কেনো ১১তম পাবে? মামলা হবে না কেন???
মনির হোসেন Monir Hossain তার ফেসবুকে লিখেছেন, প্রথমতঃ ১৩ তম আমাদের দাবি ছিল না৷ দ্বিতীয়তঃ শর্তারোপে স্নাতক বিহীন অনেক সহকারি শিক্ষক ভাই/বোনদের বঞ্চিত করা হয়েছে৷ সর্বোপরিঃ শিক্ষাগত যোগ্যতাভিত্তিক বেতনস্কেল যদি দিতেই হয় অন্যান্য সেক্টরে স্নাতকধারীদের যে বেতনস্কেল বিদ্যমান আছে তার সাথে মিল রেখে বেতন স্কেল নির্ধারণ করুন৷
অনুতাপঃ এদেশে শিক্ষকদের মর্যাদা দেওয়ার মত কেউ নেই!
মনির হোসেনের এই পোস্টে মন্তব্য করে Chaina Das চায়না দাস লিখেছেন, নিয়োগের সময় তো স্নাতক উল্লেখ ছিল না। সমপরিমান কাজ করে বেতন বৈষম্য! আসলে এটা খুবই দুঃখ জনক বিষয়।
রেজাউল করিম (Razaul Karim) নামে একজন লিখেছেন, প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণ বিহীন একই গ্রেড!
তাহলে আমাদের (যারা DPEd করলাম এবং Certificate issue করতে দুটি ইনক্রিমেন্ট কমে গেলো) তাদের ইনক্রিমেন্ট দুটি ফেরত দেন।
আবু সাঈদ Abu Sayed লিখেছেন, প্রশিক্ষণ ছাড়া আর প্রশিক্ষণ করে যদি একই বেতন হয় তবে কি দরকার প্রশিক্ষণ নেয়ার। যে লাউ সেই কদুই আজব এক ডিপার্টমেন্ট।
ইসমাঈল হোসেন Ismail Hossain নামে লিখেছেন, সহকারী শিক্ষকদের জন্য ঘোষিত ১৩তম গ্রেড ও এর কিছু ইতিবাচক দিক….
# সদ্য ঘোষিত ১৩তম গ্রেড নিয়ে নানা জনে নানাভাবে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করলেও এটাকে আমি ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। কেননা – ১৩তম গ্রেডটি শর্তযুক্তভাবে শুধুমাত্র দ্বিতীয় বিভাগ প্রাপ্ত স্নাতকদের জন্য প্রযোজ্য করায় প্রাথমিক শিক্ষায় দীর্ঘদিনের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সূচিত হবে। একসময় এসএসসি ও এইচএসসি যোগ্যতার বদনাম ঘুচিয়ে ১০ম গ্রেড প্রাপ্তির দার উন্মোচিত হবে।
# যোগ্য ও মেধাবীরা হীনমন্যতার দুষ্টচক্র হতে বের হয়ে অদম্য মনোবলে শিক্ষাদানে আগ্রহী হবেন।
# অন্যান্য বিভাগের মতো দ্রুত পদোন্নতি পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।
# একটা সময় প্রাথমিক শিক্ষা মেধাবীদের দখলে চলে আসবে এবং শিক্ষার গুণগত মানের পরিবর্তন সূচিত হবে।
# সরকারের অন্যান্য বিভাগের কর্মচারীরা প্রাথমিক শিক্ষকদেরকে কখনো অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখার সাহস পাবে না।
# সর্বোপরি শর্তযুক্ত হলেও এটা সরকার ও শিক্ষক সমাজের জন্য একটি ইতিবাচক মাইলফলক সিদ্ধান্ত বলে বিবেচনা করছি।
# সরকারের বিভিন্ন বিভাগের স্নাতক ডিগ্রিধারীরা ১৪/১৫ গ্রেডে বেতনভুক্ত কর্মচারীরা শিক্ষকদের গ্রেড উন্নয়নের ধুয়ো তুলে স্বার্থ উদ্ধার করতে পারবে না। *** কথাগুলো একান্তই আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধি। কারো ভালো না লাগলে এড়িয়ে যেতে পারেন। কিন্ত দয়াকরে বাজে মন্তব্য করবেন না।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের নেতা Zakir Hossain লিখেছেন, কোন আন্দোলনই বৃথা যায় না। ২০২০ সালে বিদ্যালয়ের সময়সূচীতে সংশোধন এসেছে। সময় কমেছে, তবে সাময়িক সময়ে শিক্ষক স্বল্পতা ও একাডেমিক সমস্যার কারণে সকল বিদ্যালয় এক শিফট চালু করা না গেলেও সকল বিদ্যালয় এক শিফটের আওতায় আসবে, এটি সময়ের ব্যবধান।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ১৫ তম গ্রেডে নিয়োগ পেত যা এখন পাবে ১৩ তম গ্রেড। প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষণ বিহীন গ্রেডের বিড়ম্বনা থাকছেনা। এখন থেকে সহকারী শিক্ষক পদন্নোতি পেয়ে সহপ্রধান শিক্ষক থেকে জেলা শিক্ষা অফিসার ও বিভাগীয় শিক্ষা অফিসার হতে নিয়োগ সংশোধিত হলো।
আগামী নিয়োগের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় শ্রেণীর স্নাতক ডিগ্রি ধারী হতে হবে, তবে চাকরির শিক্ষকদের জন্য ১৩ তম গ্রেড পেতে বাঁধা নয়।
যা ফিক্সেশন নীতিমালা মালা পেলেই ভাবনার সংকট দূরীভূত হয়ে নিশ্চয়ই। ফিক্সেশন নীতিমালায় নিম্নচাপ নয়, উচ্চ ধাপে হবে যা মাননীয় অর্থ সচিব মহোদয় কথা দিয়েছেন, এতে কারো বেতন কমার সুযোগ নাই। এটি একটি আন্দোলনের চরম পাওনা। সরাসরি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ থাকছে না।
যেহেতু আমার শিক্ষকেরা আপডেট পেতে খুব বেশি উৎসুক কিন্তু সব আপডেট জেনেও দেওয়া যায়না। তবে এতটুকু জেনে নিন প্রধান শিক্ষক ১০ম গ্রেড যখন পাবে, তখন তারই ধারাবাহিকতায় সহকারী প্রধান শিক্ষক ১১ ও সহকারী শিক্ষক ১২ তম গ্রেডে উন্নীত হবেন। এছাড়াও অতি অল্প সময়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি পেতে যাচ্ছি।
সুতরাং আমাদের আন্দোলন সার্থক হয়েছে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। তবে আমরা আমাদের কাঙ্খিত দাবী পেতে যেটুকু ব্যর্থ হয়েছি তার জন্য আমরা শিক্ষকেরাই দায়ী। দায়ী রাতারাতি গজে উঠা কিছু স্বার্থান্বেষী নেতারা।
যারা সকল ভালো কিছু পাওয়ার দাবীদার হতে চায় রাজনৈতিক বক্তব্যের মতো। তারা ভুলে যায় যে তারাই আজকের অনৈক্যের মূল চালিকা শক্তি।
পাশাপাশি কিছু শিক্ষক যারা নিজের বিবেক বুদ্ধিকে জাগ্রত না করে অন্ধ হয়ে তাদেরকেই নেতৃত্বের আসনে পূজা দিতে থাকে। বিবেচনা করতে জানে না শিক্ষকের স্বার্থে নেতৃত্বে এসেছেন তো ঐক্য থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছেন কেন?
আমি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ও সচিব মহোদয়কে ধন্যবাদ জানাচ্ছি যে, মহোদয় প্রাথমিক শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে আন্তরিক ভাবে কাজ করছেন। সেই সাথে অনুরোধ করছি আপনাদের সিদ্ধান্তগুলো বছর বছর সময় ক্ষেপণ না করে দ্রুততম সময়ে সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করতে। নিজেকে নেতৃত্বের সেরা অর্জনে নয়, শিক্ষকদের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকি। জয় নিশ্চিত হবে।