আটকে আছে ১,০৭২ প্রতিষ্ঠানের এমপিও

মাউসি

ঢাকা,১০ ফেব্রুয়ারী : গত চার মাসেও এমপিওভুক্তি কার্যক্রম চূড়ান্ত করতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৩ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে এমপিওভুক্তির আওতায় আনতে দুই হাজার ৭৩০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা করেন। কিন্তু মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত এক হাজার ৬৫৮ প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি চূড়ান্ত করেছে। বাকি সব আটকে আছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায়। ফলে এ জন্য বরাদ্দ অর্থ মন্ত্রণালয়ে পড়ে আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘ সাড়ে নয় বছর অপেক্ষার পর চার শর্তে এমপিও পাচ্ছে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

২০১৯-২০২০ অর্থবছরে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির লক্ষ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় ৮৬৫ পঁয়ষট্টি কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত এক হাজার ৬৫৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। এ বাবদ বার্ষিক ব্যয় প্রায় ৪৫৬ কোটি ৩২ লাখ ১৮ হাজার টাকা। কিন্তু সিদ্ধান্তহীনতায় আরো প্রায় এক হাজার প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ পড়ে আছে মন্ত্রণালয়ের হিসাবে।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, উক্ত ব্যয়ের পর আরো প্রায় ৪০৮ কোটি ৬৭ লাখ ৮১ হাজার টাকা অবশিষ্ট রয়েছে। কিন্তু এমপিওভুক্তির নীতিমালায় কিছুটা সংশোধনী আনা হচ্ছে। অবশিষ্ট অর্থ দিয়ে সংশোধিত নীতিমালার আলোকে যাচাই-বাছাই করে চলতি অর্থবছরে আরো প্রায় এক হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করার কথা।

কিন্তু গত অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে দুই হাজার ৭০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা করলেও এখনো সব চূড়ান্ত করা যায়নি।
নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, এসব প্রতিক্রিয়ার মধ্যেই বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিও নীতিমালায় সংশোধন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ নিয়ে সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়। সেখান থেকেও কিছু সংশোধনি প্রস্তাব করা হয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মতামত ও সুপারিশ এ নীতিমালায় অন্তর্ভুক্তি ও সংশোধন করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গত ২৩ অক্টোবর দুই হাজার ৭৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য এমপিও ঘোষণা করা হয়। গণভবনে অনুষ্ঠানে এমপিওভুক্তির এই ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঘোষণা অনুযায়ী গত ১ জুলাই থেকে অর্থাৎ অর্থবছরের শুরু থেকেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করার কথা।

সর্বশেষ ২০১০ সালে এক হাজার ৬২৬টি প্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে এমপিও দেওয়া হয়। এর পর থেকে এমপিওভুক্তির দাবিতে চলছিল শিক্ষকদের আন্দোলন। এমনকি জাতীয় সংসদেও এমপিরা এই দাবিতে ছিলেন সরব।

অবশ্য সরকার প্রধান হুশিয়ার করে বলেছেন, নতুন প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথ মান ধরে রাখতে হবে। কেউ যদি এটা ধরে রাখতে ব্যর্থ হন, সঙ্গে সঙ্গে তার এমপিও বাতিল হবে।

জানা যায়, এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে স্কুল ও কলেজের সংখ্যা এক হাজার ৬৫১টি, মাদরাসার সংখ্যা ৫৫৭টি এবং কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫২২টি। সম্পূর্ণ নতুন স্কুল-কলেজ এমপিওভুক্ত হচ্ছে ৬৮০টি এবং প্রতিষ্ঠানের নতুন স্তর এমপিওভুক্ত হচ্ছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৯৭১টি। নতুন এই এমপিওভুক্তির কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগে মোট ৮৬৫ কোটি টাকা ব্যয় বেড়েছে।

এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো-২০১৮ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের যোগ্যতা-অভিজ্ঞতা নিয়োগকালীন বিধি-বিধান ও সংশ্লিষ্ট পরিপত্র মোতাবেক প্রযোজ্য হবে। নিবন্ধন প্রথা চালু হওয়ার আগে বিধিসম্মতভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক ও কর্মচারীরা এমপিওভুক্তির সুযোগ পাবেন।

কিন্তু পরবর্তী সময়ে নিয়োগ প্রাপ্তদের অবশ্যই নিবন্ধন সনদ লাগবে। যেসব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য বিবেচিত হয়েছে তার মধ্যে কোনো প্রতিষ্ঠান নীতিমালা অনুযায়ী কাম্য যোগ্যতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হলে এমপিও স্থগিত করা হবে।

পরবর্তী সময়ে কাম্য যোগ্যতা অর্জন করলে এমপিও ফের অবমুক্ত করার বিষয়টি বিবেচিত হবে। যেসব তথ্যের আলোকে প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে, পরবর্তী সময়ে কোনো তথ্য ভুল বা মিথ্যা প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে জানানো হয়, বরাদ্দকৃত বাকি অর্থ দিয়ে নতুন প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করা যাবে। তবে সেটি কবে নাগাদ তা বলেনি মন্ত্রণালয়।


Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।