আমতলী সরকারী কলেজে শিক্ষকদের অভ্যন্তরিন দ্বন্ধে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত

নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী, বরগুনা ॥ বরগুনার আমতলী সরকারী কলেজে বে-সরকারী শিক্ষক দিয়ে চলছে পাঠদান। শিক্ষকদের অভ্যন্তরিন দ্বন্ধে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত। ভেঙ্গে পরেছে প্রশাসনিক কাঠামো। শিক্ষকরা দু’ভাগে বিভক্ত। যে কোন সময় ঘটে যেতে পারে দু’পক্ষের সহিংস ঘটনা।

জানাগেছে, ২০১৬ সালে ৭ এপ্রিল আমতলী ডিগ্রী কলেজ জাতীয়করণের প্রজ্ঞাপন জারি হয়। প্রজ্ঞাপনে কলেজ জাতীয়করণ হলেও ৫৪ শিক্ষক-কর্মচারী জাতীয়করণ হয়নি। ওই বছর ৩০ জুন চাখার শের-ই বাংলা মহা বিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাসুদ রেজাকে শিক্ষা মন্ত্রনালয় কলেজে অধ্যক্ষ হিসাবে প্রেষনে (সংযুক্ত) নিয়োগ দেয়। তিনি ১১ জুলাই কলেজে যোগদান করেছেন। এ অধ্যক্ষের (মাসুদ রেজা) পক্ষে দু’একজন শিক্ষক থাকলেও অধিকাংশ শিক্ষক তার বিপক্ষে অবস্থান নেয়। শুরু হয় শিক্ষকদের অভ্যন্তরিন দ্বন্ধ। ওই বছর ৬ সেপ্টেম্বর অধ্যক্ষ মজিবুর রহমান সংযুক্ত অধ্যক্ষ মাসুদ রেজার সংযুক্ত আদেশ বাতিল চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন (১১৭৪৯/২০১৬) দায়ের করেন। আদালত সংযুক্ত অধ্যক্ষ মাসুদ রেজার নিয়োগ আদেশ স্থগিত করে অধ্যক্ষ মজিবুর রহমানকে বৈধ অধ্যক্ষ বলে আদেশ দেয়। এদিকে ওই বছর ৮ সেপ্টেম্বর অধ্যক্ষ মোঃ মাসুদ রেজার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক আইডিতে প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, সরকার , রাষ্ট্র বিরোধী ও ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাতসহ বিভিন্ন উস্কানিমূলক অভিযোগ এনে কলেজের সহকারী অধ্যাপক আবুল হোসেন বিশ্বাস আমতলী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করে। আদালতের বিচারক মামলাটি তদন্তের জন্য গোয়েন্দা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। ২১ সেপ্টম্বর অধ্যক্ষ মাসুদ রেজা আবুল হোসেন বিশ্বাসকে অধ্যক্ষের চলতি দায়িত্ব দিয়ে কলেজ ত্যাগ করেন। আবুল হোসেন বিশ্বাস কলেজের দায়িত্ব নেয়ার পরে শিক্ষকদের অভ্যন্তরীন কোন্দল আরো ঘনিভুত হয়। শিক্ষকরা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পরে। এক পক্ষের নেতৃত্ব দেয় আবুল হোসেন বিশ্বাস এবং অপর পক্ষের নেতৃত্ব দেয় অধ্যক্ষ মজিবুর রহমান। দিন দিন শিক্ষকদের দ্বন্ধ চরম আকার ধারন করে। চার মাস অধ্যক্ষের চলতি দায়িত্ব পালন শেষে সহকারী অধ্যাপক আবুল হোসেন বিশ্বাস শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে ২০১৭ সালের ২১ জানুয়ারী মজিবুর রহমানকে কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়। এদিকে কলেজের শিক্ষক জাতীয়করনের জন্য আবুল হোসেন বিশ্বাসকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি শিক্ষক জাতীয়করন দ্রুত করার জন্য শিক্ষকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করেন। শিক্ষকদের অভিযোগ আদায়কৃত টাকা অধ্যক্ষ আত্মসাৎ করেছেন। এ ঘটনায় গত বছর ১২ ফেব্রুয়ারী কলেজের চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী (পিয়ন) মোঃ ইউসুফ মিয়া বাদী হয়ে অধ্যক্ষ মজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে জাতীয়করনের নামে ১৭ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় বর্তমানে অধ্যক্ষ মজিবুর রহমান জেল হাজতে রয়েছেন। দীর্ঘদিন কলেজের শিক্ষকদের অভ্যন্তরীন দ্বন্ধে তিন হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। ভেঙ্গে পরেছে প্রশাসনিক কাঠামো।

কলেজের দ্বাদশ শ্রেনীর ছাত্র আরিফুর রহমান, মিরাজ ও নাঈম জানান, শিক্ষকদের অভ্যন্তরীন দ্বন্ধে ঠিকমত পাঠদান হচ্ছে না। তারা আরও জানান, শিক্ষার্থীরা কলেজে এসে যে যার মত চলে যায় কোন তদারিক নেই।

কলেজের একাদ্বশ শ্রেনীর ছাত্র আতিক, আল আমিন ও বায়েজিদ জানান, প্রকাশ্যে এক শিক্ষক অন্য শিক্ষকের বিরুদ্ধে অযাচিত ও অশ্লীল মন্তব্য করছে। নিজেদের দ্বন্ধে শিক্ষকরা ঠিকমত পাঠদান করাচ্ছেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের কয়েকজন শিক্ষক অভ্যন্তরীন দ্বন্ধের কথা স্বীকার করে বলেন, শিক্ষকরা দু’ভাগে বিভক্ত।এক পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন অধ্যক্ষ মজিবুর রহমান, অপরপক্ষে নেতৃত্ব নিচ্ছেন আবুল হোসেন বিশ্বাস। দু’পক্ষের কেউ কাউকে ছাড়তে নারাজ। দিন দিন শিক্ষকদের অভ্যন্তরীন দ্বন্ধ চরম আকার ধারন করেছে। এ অভ্যন্তরীন দ্বন্ধে কলেজের প্রশাসনিক কাঠামো ও শিক্ষা পাঠদান ব্যহত হচ্ছে। কলেজের সহকারী অধ্যপক আবুল হোসেন বিশ্বাস শিক্ষকদের অভ্যন্তরীন দ্বন্ধের কথা অস্বীকার করে বলেন, অধ্যক্ষ মজিবুর রহমান শিক্ষক জাতীয়করনে কিছু শিক্ষকের কাগজপত্র মন্ত্রনালয়ে পাঠাতে গড়িমসি করছে। তিনি ওই শিক্ষকদের কাগজপত্র দ্রুত মন্ত্রনালয়ে পাঠালে তার (অধ্যক্ষ) সকল কাজে আমরা সহযোগীতা করবে। তিনি আরও বলেন, অধ্যক্ষ জেল হাজতে থাকায় প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙ্গে পরেছে এবং পাঠদান ব্যহত হচ্ছে।

চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম তালুকদার শিক্ষকদের অভ্যন্তরীন কোন্দলের কথা অস্বীকার করে বলেন, শিক্ষক জাতীয়করনের সকল কাগজপত্র সহকারী অধ্যাপক হোসেন আহম্মেদ’র কাছে জমা দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন,প্রশাসনিক কার্যক্রম ও পাঠদান ঠিকমত চলছে।

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।