এস কে দাস: ২৫ মার্চের মধ্যরাত। দিনের ক্লান্তি শেষে গভীর ঘুমে নিমগ্ন ঢাকার মানুষ। ঠিক সেই সময় সেনানিবাস থেকে বেরিয়ে পড়ল ট্যাংক আর সাঁজোয়া যান। নির্মম হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠল পাকিস্তানি বাহিনী। বাঙালির জীবনে নেমে এল চরম এক বিভীষিকা। একাত্তরের সে ঘটনা চিহ্নিত হয়ে আছে কালরাত হিসেবে। নির্মম সেই হত্যাযজ্ঞের আজ ৪৩তম বছর।
পরিকল্পিত এ হত্যাকা-ের পোশাকি নাম ‘অপারেশন সার্চলাইট’। পাকিস্তানি বাহিনী এ রাতে তৎকালীন ইকবাল হল (বর্তমানে জহুরুল হক হল), জগন্নাথ হলসহ পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আক্রমণ চালায়। নির্বিচারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারী ও সাধারণ মানুষকে। এমনকি ছাত্রীনিবাস রোকেয়া হলও এ নির্মমতা থেকে রক্ষা পায়নি। কামান দেগে গোটা এলাকা মাটিতে মিশিয়ে দেয়ার এক পাশবিক উন্মত্ততায় ফুটতে থাকে পাকিস্তানি বাহিনী।
বাঙালির প্রতিরোধ ব্যবস্থা একেবারে গুঁড়িয়ে দিতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনও আক্রমণ করে তারা। অতর্কিত হামলায় হতবিহ্বল পুলিশ সদস্যরা পরে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। কিন্তু এ আক্রমণ এমন আকস্মিক ও নির্মম ছিল যে, এক রাতেই ঘটে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু। পাকিস্তানি বাহিনীর এ বর্বর মৃত্যুময় বিভীষিকায় ভারী হয়ে ওঠে বাংলাদেশের বাতাস।
পাকিস্তানি বাহিনীর সম্ভাব্য আক্রমণের গুঞ্জন কয়েক দিন ধরে বাতাসে ভাসতে থাকলেও ভয়াল সেই রাতের আকস্মিক আক্রমণে এ দেশের মানুষ যেন এক অন্ধকার গহ্বরে পতিত হয়। আবার একই সঙ্গে জ্বলে ওঠার প্রেরণাও পায়, শাণিত হয় প্রতিশোধস্পৃহা।
পশ্চিম পাকিস্তানের পরিকল্পিত এ হত্যাকা-ের মূল উদ্ধেশ্য ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদকে দমন করা। এ দমনের প্রথম পদক্ষেপ ২৫ মার্চের রাত। পরবর্তী নয় মাস ধরে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের এ নির্মমতা চালিয়ে যায়। নির্বিচারে মানুষ হত্যা ও ধ্বংসের তা-বলীলা চলতে থাকে। কিন্তু হাত গুটিয়ে বসে থাকেনি স্বাধীনতার আকাক্সক্ষায় ফুঁসতে থাকা সাত কোটি বাঙালি।
২৫ মার্চ রাতের সেই গণহত্যার পর স্বাধীনতার ঘোষণা যে উজ্জীবনের বার্তা ছড়িয়ে দেয়, পরবর্তী সময়ে তা প্রতিরোধের সাহসী উচ্চারণে রূপ নেয়। প্রতিরোধযুদ্ধে যোগ দেয় কোটি বাঙালি। সঞ্চিত শক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে শত্রুবাহিনীর ওপর। তারই ধারাবাহিকতায় ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বাঙালি পায় একটি স্বাধীন দেশ।
প্রতি বছরের মতো এবারো চরম ঘৃণা, বেদনাময় স্মৃতি আর গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে বাঙালি জাতি স্মরণ করবে দিনটি। আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও রাতে মোমবাতি প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে দিনটি স্মরণ করা হবে।