ঘূণিঝড় মোখার প্রভাবে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত জারি করেছে আবহাওয়া অধিদফতর। এ কারণে কক্সবাজার আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় দুই লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
শনিবার (১৩ মে) রাত ৯টা পর্যন্ত কক্সবাজারের নাজিরারটেক, সমিতিপাড়া, মহেশখালীর ধলঘাটা, সোনাদিয়া, ঘড়িভাঙ্গা ও কুতুবজোম, টেকনাফ বাহারছড়া ও সেন্টমার্টিনদ্বীপ থেকে তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে এসেছে স্থানীয় প্রশাসন।
আরো পড়ুন: স্বাস্থ্য বিভাগের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিভীষণ কান্তি দাশ জানিয়েছেন, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ থেকে রক্ষা পেতে শনিবার দুপুর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ৬৩৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে দুই লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। সকাল থেকে আমরা আশ্রয়কেন্দ্রগুলো খুলে দিয়েছি। এতে করে উপকূলের মানুষ আসতে শুরু করেছে।
তিনি জানান, রাতের মধ্যেই তিন লাখ মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হবে। প্রয়োজনে ঝুকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের জোর করে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হবে।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছেন, ঘুর্ণিঝড় মোখা যেহেতু কক্সবাজারের টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন্স দ্বীপের পাশ ঘেঁষে যাবে সে জন্য সেন্টমার্টিন্স দ্বীপের জন্য সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সেন্টমার্টিন্স দ্বীপের সাড়ে তিন হাজার মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের জন টেকনাফে চলে এসেছে। এ ছাড়া দ্বীপের ৩৮টি হোটেল রিসোর্টে সাড়ে চার হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এই দ্বীপে ১০ হাজার মানুষের বসবাস।
তিনি উল্লেখ করেন কক্সবাজারের ৬৬টি হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করেছে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতি।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি মো: আবুল কাসেম জানিয়েছেন, কক্সবাজারে দুর্যোগপূর্ণ সময়ের কথা বিবেচনা করে আমরা ৬৬টি হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউস আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা দিয়েছি। এতে করে অন্তত অর্ধলাখ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে।
এর আগে শুক্রবার দুপুর থেকে বৃষ্টি শুরু হয়ে থেমে থেমে রাত ১টা পর্যন্ত চলে। শনিবার সকাল থেকে মোখার প্রভাবে আবারো থেমে থেমে বৃষ্টি ও ধমকা হাওয়া চলছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের প্রধান আবহাওয়াবিদ মো: আব্দুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। আগামীকাল রোববার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সেন্টমার্টিনের দুই দিক থেকে যেহেতু খোলা রয়েছে এবং পানি চলাচলের সুবিধা আছে, তাই বড় ধরনের কোনো ক্ষতির আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে না। কারণ ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ওই অঞ্চলে পানি জমে থাকবে না। আবহাওয়া অফিস থেকে প্রতি মুহূর্তে ঘূর্ণিঝড় মোখার সকল আপডেট জানিয়ে দেয়া হবে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো: মাহফুজুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি থানায় আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। দুর্যোগকালীন প্রতিটি মানুষকে সহযোগিতা করা হবে। লোকজনকে সহযোগিতার মাধ্যমে মানবিকতার পরিচয় দিতে হবে।
এদিকে জেলা প্রশাসন কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার জেলায় সিসিপির আট হাজার ৬০০ জন এবং রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির দুই হাজার ২০০ জন স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। সেন্টমার্টিনে নেভি, কোস্টগার্ড, পুলিশসহ ৩৭টি সরকারি স্থাপনা রয়েছে। তাই সেখানে সরকারি স্থাপনাগুলো সাইক্লোন শেল্টার হিসেবে ব্যবহারের জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া দুর্যোগকালীন সময়ের জন্য ২০ লাখ নগদ টাকা রাখা হয়েছে, যার মধ্যে ১০ লাখ টাকা উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। একইসাথে পাঁচ দশমিক ৯০ টন চাল, তিন দশমিক পাঁচ টন টোস্ট বিস্কুট, তিন দশমিক চার মেট্রিক টন শুকনা কেক, ১৯৪ বান্ডিল ঢেউটিন, ২০ হাজার প্যাকেট ওরস্যালাইন ও ৪০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মজুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র। জেলায় যে ৬৩৬টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে সেগুলোতে পাঁচ লাখ পাঁচ হাজার ৯৯০ জন মানুষ থাকতে পারবে।
শনিবার সকাল থেকে মেডিক্যাল দল, কোস্টগার্ড, নৌ-বাহিনী, পুলিশ, নৌ-পুলিশ, জেলা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবক দল, স্কাউট দল, আনসার বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট অন্য সংস্থাকে সর্বোচ্চ প্রস্তুত গ্রহণ করার জন্য বলা হয়েছে।