পৃথিবীর সকল জাতির উন্নতির মূল শক্তি হলো শিক্ষা। শিক্ষার মূল ভিত্তি হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা। প্রাথমিক শিক্ষাকে যদি শক্তিশালী করা না যায় তাহলে অন্য শিক্ষায় ফাঁক থেকে যায়। শিক্ষা স্তিমিত হয়ে পড়ে। জাতি পিছিয়ে পড়ে। একটি দেশ বা জাতি উন্নতির শিখরে পৌঁছতে হলে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। তাই প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা গেলে দেশে তথা সমগ্র জাতির উন্নয়ন সম্ভব। সরকার প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক ঘোষণা করেছেন। দেশের একটি শিশুও শিক্ষার আলো থেকে যেন বঞ্চিত না হয়। যদিও সরকার দেশের শিক্ষানীতিতে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাকে প্রাথমিক শিক্ষা স্তর বলছে। কিন্তু সেটি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে পঞ্চম শ্রেণি সমাপ্ত করে একজন শিক্ষার্থী চলে যায়। কিন্তু প্রথম শ্রেণিতে যতজন শিশু ভর্তি হয় পঞ্চম শ্রেণি সমাপ্ত করে ঠিক ততজন শিশু বের হয় না। নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তিকৃত ১০০% শিশু প্রাথমিক শিক্ষাচক্র অর্থাৎ ৫ম শ্রেণি সমাপ্ত করতে পারে না।
দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা অঞ্চলভেদে ভিন্ন। ভৌগলিক অবস্থাও ভিন্ন। দারিদ্রতা, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, দুর্গম এলাকা বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধাগ্রস্ত করছে। সরকার দারিদ্র এলাকার শিক্ষার্থীদের ড়িৎফ ভড়ড়ফ ঢ়ৎড়মৎধসব এর আওতায় শিক্ষার্থীদের বিস্কুট খাওয়াচ্ছে। সকল শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান করছে। শতচেষ্টা সত্ত্বেও ঝরে পড়ার হার নির্মূল করা যাচ্ছে না। তার মধ্যে বড় কারণ অভিভাবকদের সচেতনতা। বাংলাদেশ একটি কৃষিভিত্তিক দেশ হওয়ায় অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বসবাস করে। গ্রামের পুরুষ অভিভাবক সাধারণত ক্ষেত-খামারে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। সারাদিন কাজে ব্যস্ত থাকেন, তার ফলে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খোঁজ-খবর রাখতে পারেন না। ছেলেমেয়ে ঠিকমতো বিদ্যালয়ে যায় কিনা সে খবরও রাখতে পারেন না। এজন্য মহিলা অভিভাবকদের অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের মাকে বিদ্যালয়ের কার্যক্রমের সঙ্গে সংযুক্ত রাখতে হবে।
মায়ের সঙ্গে শিশুর সম্পর্ক খুবই গভীর। শিশুরা সাধারণত মায়ের কাছে থাকতে ভালোবাসে। তার মনের কথা, তার আবদার মায়ের কাছে পেশ করে। শিশুরা মায়ের সংস্পর্শে বেশি থাকে বলেই মায়ের উপদেশ শুনে থাকে। একজন ‘মা’ পারে তার সন্তানকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে। যেহেতু অধিকাংশ ‘মা’-ই কম শিক্ষিত কিংবা অক্ষরজ্ঞানহীন। তাই সকল মায়েদের বিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। অর্থাৎ তাদের বিদ্যালয়ে ডেকে আনতে হবে। তাদেরকে বোঝাতে হবে। তার সন্তান সর্ম্পকে খোঁজখবর রাখার জন্য পরামর্শ প্রদান করতে হবে। সন্তান যেন প্রতিদিন বিদ্যালয়ে আসে সে বিষয়ে তাকে নিশ্চিত করতে হবে। সন্তান নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসলে লেখাপড়া ভালো হবে সে বিষয়ে বোঝাতে হবে। লেখাপড়া ভালো করলে কি উপকার হবে সে সম্পর্কে মায়েদেরকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে হবে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এলাকার সকল শিশুর মায়েদের নিয়ে প্রতিমাসে একটি সভার আয়োজন করতে পারেন, তাহলে মায়েরা বেশি খুশি হবে, আনন্দিত হবে, উৎসাহিতও হবে। শিক্ষা বিষয়ক সচেতনা বাড়াতে হবে, গুরুত্ব বোঝাতে পারলে তা অনেক বেশি কার্যকর হবে শিশুর সুশিক্ষার জন্য। মা বুঝতে পারলে শিশুর সুশিক্ষিা পেতে সহজ হবে। সন্তানের লেখাপড়ার প্রতি যতœশীলও হবেন। মা নিজেই বিদ্যালয়ে এসে তার সন্তানের খোঁজ-খবর রাখতে শিখবেন। তাহলে আর কোনো শিশু ঝরে পড়বে না। সকল শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন সম্ভব হবে। নিরক্ষরমুক্ত ও শিক্ষিত জাতি গঠন সম্ভব হবে। মানসম্মত প্রাথমিক নিশ্চিত করণে মায়েদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
লেখক: উপজেলা শিক্ষা অফিসার, মোরেলগঞ্জ, বাগেরহাট