ডেস্ক,২৩ মার্চ ২০২৩: রাজধানীর গুলশান-২ নম্বরে ‘সুলতান’স ডাইন’ নামের রেস্তোরাঁর কাচ্চি বিরিয়ানিতে খাসি ছাড়া অন্য কোনো প্রাণীর মাংস ব্যবহারের প্রমাণ পায়নি বলে জানিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
সুলতান’স ডাইনকে নিয়ে অভিযোগের তদন্তের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে এ কথা জানায় অধিদপ্তর, যেটি প্রকাশ হয় সোমবার।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘উপর্যুক্ত বিষয় ও সূত্রের আলোক জানানো যাচ্ছে যে, ৯ মার্চ ২০২৩ বিকাল আনুমানিক ৩.৪৫ থেকে ৪.৩০ ঘটিকা পর্যন্ত অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান সুলতান ডাইন’স, গুলশান-২ শাখা সরেজমিনে তদন্ত করা হয় এবং অদ্য ১৩ মার্চ ২০২৩ অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের পক্ষে জিএম, এজিএম এবং উক্ত শাখার ম্যানেজার শুনানিতে উপস্থিত হয়ে মৌখিক ও লিখিত বক্তব্য প্রদান করেন। সরেজমিনে তদন্ত এবং অভিযুক্তের মৌখিক ও লিখিত বক্তব্য পর্যালোচনান্তে নিম্নরূপ তথ্য পাওয়া যায়।
‘অভিযুক্ত মা-বাবার দোয়া গোশত বিতান, কাপ্তান বাজার নামক ভেন্ডরের মাধ্যমে খাসির গোশত সংগ্রহ করে থাকেন। কাপ্তান বাজারে খাসি জবাই করার সময় অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মাঝেমধ্যে উপস্থিত থাকেন। ভেন্ডর নিজ দায়িত্বে মাংস অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানে পৌঁছায়।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘৯ মার্চ ২০২৩ তারিখ অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মৌখিকভাবে ১৫০ কেজি খাসির মাংস সংগ্রহের কথা জানান, কিন্তু ভেন্ডর ১২৫ কেজি সরবরাহের কথা জানান। সন্দেহযুক্ত চিকন হাড়ের ব্যাপারে অভিযুক্ত জানান যে, ৭ থেকে ৯ কেজি ওজনের খাসির মাংস তারা ব্যবহার করেন এবং আকারে ছোট হওয়ায় এ সকল খাসির হাড় চিকন হয়।’
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘যে মোবাইল নম্বর (০১৭২৩৩০৯৯০২) থেকে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ দেয়া হয়েছিল, তা বন্ধ পাওয়া যায়। খাসি বাদে অন্য প্রাণীর মাংসের ব্যবহার নিঃসন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান সুলতান’স ডাইনকে অন্য প্রাণীর মাংস ব্যবহারের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া যেতে পারে।’
আলোচনার শুরু যেখান থেকে
গত ৮ মার্চ, বুধবার বিকেলের পর থেকেই সুলতান’স ডাইনের খাবার নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে অভিযোগ করতে থাকেন অনেকে। কনক রহমান খান নামের একজনের বরাতে একটি পেজে দেয়া হয় এ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য।
ওই পোস্টে প্লেট ও প্যাকেটে বিরিয়ানি রাখা দুটি ছবি দিয়ে লেখা হয়, ‘বৃহস্পতিবার সুলতান’স ডাইনের কাচ্চি আনা হয়েছিল ৭টা। খাবার সময় মাংসের হাড় দেখে সন্দেহ হলো যে, এটা তো মাটন না অবশ্যই। মাটনের হাড় এমন চিকন হয় না। তখন সুলতান’স ডাইনের গুলশান-২-এর নম্বরে কল দেই; জিগ্যেস করি এটা কী মাংস ছিল?
‘উনারা দুজনসহ আবার খাবার পাঠায়। সাথে উনাদের এজিএম আশরাফসহ আসে। নতুন খাবারের সাথে আগের প্যাকের খাবারের হাড়ের সাথে এবাবের মাংসের তুলনা করতে বলি। এজিএম আশরাফ মানতেই নারাজ, জেনেশুনে এমন মাংস দেয় না। তারা বলে, তাদেরকে যে ভেন্ডর মাংস দেয়, তারা আসলে কোনো কিছু করতে পারে।’
ওই পোস্টে লেখা হয়, ‘৯৯৯-এ কল দেই। ৯৯৯ বলে বিএসটিআইয়ের নম্বরে অভিযোগ করতে। ৯৯৯ থেকে গুলশানের ডিএমডি পুলিশের নম্বর দেয়া হয়, অভিযোগ জানাতে। এটাও করি। কাল এক সাংবাদিক ফোন করে আমায় থ্রেট করে। আসলে দেশে কি টাকা দিয়ে কুকুর বিড়াল খাওয়ালেই তারাই জিতে? মানবাধিকার কোথায়, খাদ্য নিরাপত্তা কোথায়?’
এর আগে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে রাজধানীর নিরব হোটেলে গরুর মাংসের নামে কুকুরের মাংস বিক্রির অভিযোগ করেছিলেন এক ব্যক্তি। ফেসবুকে তার পোস্ট ভাইরাল হলে তখন ৪৮ বছরের নাজিম উদ্দিন রোডের ঐতিহ্যবাহী হোটেলটির খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
ওই অভিযোগ অস্বীকার করে কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে নিরব হোটেলের পক্ষে চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয় তখন।
সাভারের আশুলিয়ায় ২০২২ সালের মে মাসে কুকুরের মাংস দিয়ে বিরিয়ানি বিক্রির অভিযোগ ওঠে ‘আল্লাহর দান বিরিয়ানি হাউজ’ নামের এক খাবারের দোকানের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় দোকানটির একজনকে আটকও করে পুলিশ।
পরে অবশ্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় রোগ অনুসন্ধান গবেষণাগারে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা পরীক্ষা শেষে রিপোর্ট দেন, ওই দোকানের বিরিয়ানিতে কুকুরের মাংস ছিল না।
কী বলেছিল সুলতান’স ডাইন
কাচ্চি বিরিয়ানিতে খাসির পরিবর্তে অন্য প্রাণীর মাংসের যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সত্য নয় বলে কাছে দাবি করেছিল রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক ক্রেতার অভিযোগ ছড়িয়ে পড়ার পর ৮ মার্চ রাতে কাছে এমন দাবি করেন রেস্তোরাঁটির গুলশান-২ শাখার মার্কেটিং কমিউনিকেশন অফিসার ববি রানি দাস।
তিনি বলেন, ‘এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। এটা অনেক বড় ব্র্যান্ড। এক ক্রেতা বিড়ালের মাংসের বিরিয়ানির যে অভিযোগ করেছেন, তা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।’
ববি রানি বলেন, ‘ওই ক্রেতা ফোনে অর্ডার দিয়ে চার-পাঁচ দিন আগে দুপুরে খাবার নিয়ে গেছেন। তারপর অভিযোগ করেছেন। আমাদের ম্যানেজার আশরাফ স্যার সেখানে অভিযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন।’