টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, তারপর পাকিস্তানের সাথে ঘরের মাঠে টি-টোয়েন্টি সিরিজের পর টেস্টেও ক্রিকেট, বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রথম ও প্রধান সমস্যার জায়গা হলো ওপেনিং। সাদমান ইসলাম, সাইফ হাসান আর নাজমুল হোসেন শান্ত- কারো ব্যাটই কথা বলছে না। সবাই যেন রান করতে ভুলে গেছেন।
চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টে টপ অর্ডারদের ব্যর্থতায় ভুগেছে দল। প্রথম ইনিংসে ৪৯ আর দ্বিতীয় ইনিংসে ২৫ রানে পতন ঘটেছে ৪ উইকেটের। টপ অর্ডারে কারো ব্যাট কথা না বলায় টিম ম্যানেজমেন্ট ও নির্বাচকরা বিকল্প পথে হেঁটেছেন। তারা ঢাকা টেস্টের আগে দলে ডেকেছেন টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট নাইম শেখকে।
নাইম শেখ অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পরও সংখ্যা তত্ত্বে ওপেনার গেছে কমে। সাইফ হাসান টাইফোয়েডে আক্রান্ত এবং ঢাকা টেস্ট তো বটেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২ টেস্টের সিরিজও মিস করবেন তিনি।
যদিও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট শুরু হবে আগামী ১ জানুয়ারি। তারপরও প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু জানিয়েছেন, ‘টাইফোয়েড থেকে সম্পূর্ণ সেরে উঠতেই প্রায় এক মাস লেগে যায়। তাই আমরা সাইফকে নিউজিল্যান্ড সফরে দলে নিতে পারছি না। তার বিকল্প নিতে হবে।’
প্রধান নির্বাচক আরও জানান, সাইফের বদলে আর একজন প্রথাগত ওপেনার নিতে চান তারা এবং আজ রাত ৮ টায় নির্বাচক ও কোচদের সাথে জুম কনফারেন্সে বসে সেই ওপেনার ঠিক করবেন। এখন ক্রিকেট পাড়ায় একটাই প্রশ্ন, সাইফের পরিবর্তে নিউজিল্যান্ড সফরে যাবেন কোন ওপেনার?
ক্রিকেট পাড়ায় অনেক নামই শোনা যাচ্ছে। যে যার মত করে এর ওর নাম বলছেন। ইমরুল কায়েস, ফজলে রাব্বি, সৌম্য সরকার- অনেক নামই উঠে আসছে।
নির্বাচকরা মুখ ফুটে এখন পর্যন্ত কারো নাম বলা দুরে থাক, আভাস-ইঙ্গিতও দেননি। তবে কথা বলে জানা গেছে তারা প্রথাগত বা স্পেশালিস্ট ওপেনারের খোঁজে এবং সাথে নিউজিল্যান্ডের প্রচন্ড শীত কনকনে বাতাস আর ফাস্ট ও বাউন্সি পিচে খেলার পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে এমন কাউকেই প্রধান্য দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।
এদিকে বাজারে জাতীয় লিগের টপ স্কোরার ফজলে রাব্বির নাম শোনা যাচ্ছে। তরুণ ওপেনার অমিত হাসানের কথাও নাকি ভাবছেন নির্বাচকরা। ওপেনারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি, ৬ ম্যাচে ২ সেঞ্চুরি আর ২ হাফ সেঞ্চুরিতে ৫৯০ রান করা অমিত হাসানের নামের পাশাপাশি জাতীয় লিগে ওপেসারদের ভিতরে দ্বিতীয় সর্বাধিক (৬ ম্যাচে ১ শতক ও ৪ অর্ধশতক সহ ৫২১) রান করা, আব্দুল মজিদের কথাও বলছেন কেউ কেউ।
আবার দুই পরীক্ষিত পারফরমার ইমরুল কায়েস ও সৌম্যর নামও উচ্চারিত হচ্ছ জোরেসোরে।
তার ব্যখ্যা, ফজলে রাব্বিতো জাতীয় লিগে ওপেন করেনি। মিডল অর্ডারে খেলেছে। আমরা চাচ্ছি একজন ওপেনার। যে ফাস্টক্লাসে নিয়মিত ওপেন করে।
ইমরুল কায়েসের কথা উঠতেও প্রধান নির্বাচকের মুখে প্রশ্ন, ‘আচ্ছা বলতে পারেন, ২০১৯ সালের নভেম্বরে কলকাতার ইডেন গার্ডেনে ভারতের বিপক্ষে শেষ টেস্ট খেলার পর ইমরুলও কী জাতীয় লিগ-বিসিএলে ওপেন করেছে? বেশির ভাগ ম্যাচেই তার ব্যাটিং পজিশন ছিল চার নম্বর। এবারই তিন না না হয় চারে ব্যাট করেছে।’
নান্নুর সোজা কথা, সাইফ তো ওপেনার। তার অসুস্থ্যতাজনিত বাদ পড়ায় আমাদের দরকার একজন ওপেনার। আমরা সেই ওপেনারের সন্ধান করছি। এখন নিজেরা বসে সেটা ঠিক করবো এবং আজ বৃহস্পতিবার রাতেই সেটা চূড়ান্ত হয়ে যাবে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, টেস্টে ওপেনার ইমরুল কায়েসের সামর্থ্য প্রমাণিত। এক সময় টেস্ট-ওয়ানডে দুই ফরম্যাটেই ছিলেন জাতীয় দলের অপরিহার্য্য ওপেনার। ৩৯ টেস্টে ৭৬ ইনিংসে ৩ সেঞ্চুরি ও ৪ হাফ সেঞ্চুরিসহ ইমরুলের স্কোর ১৭৯৭ রান।
বাঁ-হাতি ইমরুল শেষ টেস্ট খেলেছেন দুই বছর আগে কোলকাতায় ভারতের বিপক্ষে। সে তুলনায় বরং আরেক বাঁ-হাতি সৌম্য অনেকের চেয়ে এগিয়ে। ইতিহাস জানাচ্ছে, নিউজিল্যান্ডের সিমিং কন্ডিশনে বরাবরই টেস্টে সৌম্যর ট্র্যাক রেকর্ড ভাল। ১৬ টেস্টে ১ শতক ও ৪ অর্ধশতকসহ ৮৩১ রান করা সৌম্য শেষ টেস্ট খেলেছেন এবছর ফেব্রুয়ারি ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে।’
এ বাঁ-হাতি ওপেনারের একমাত্র টেস্ট শতকটি কিন্তু নিউজিল্যান্ডের মাটিতে; ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি হ্যামিল্টনে। অবশ্য সেটা ওপেনার হিসেবে নয়। ৫ নম্বরে নেমে। ঠিক সোয়া ৪ ঘন্টায়) ১৭১ বলে ২১টি বাউন্ডারি আর ৫ বিশাল ছক্কায় ১৪৯ রানের ‘বিগ হান্ড্রেড‘ হাঁকিয়েছিলেন সৌম্য।
তবে ওপেনার সৌম্যর ক্যারিয়ারের সেরা ও সবচেয়ে বড় ইনিংসটি কিন্তু নিউজিল্যান্ডের মাটিতে। সেটা ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে। ক্রাইস্টচার্চে ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি আর কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম ও ওয়েগনারের বিপক্ষে ১৫৭ মিনিটে ১০৪ বলে ১১ বাউন্ডারিতে ওই ইনিংসটি সাজিয়েছিলেন সৌম্য সরকার। দেখা যাক কার কপাল খোলে?
কে জানে বোল্ট, সাউদিদের বিপক্ষে শেষ পর্যন্ত না আবার সৌম্যকেই বেছে নেয় টিম ম্যানেজমেন্ট!