‘দক্ষ হ্যাকার তৈরির’ আপত্তিকর বিজ্ঞাপন দেওয়ায় সাইফুর’স কোচিং সেন্টারের তীব্র সমালোচনা করলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি সাইফুর’স কোচিং সেন্টারের প্রধানকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘যত বড় আইনি লড়াই হোক না কেন, এই ‘চোরের রাজা’র শেষ দেখে ছাড়ব।’
মঙ্গলবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘এডুটিউববিডি’ নামের শিক্ষাবিষয়ক অনলাইন কনটেন্ট শেয়ারিং পোর্টালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, সাইফুর’স কোচিং সেন্টারের ওই বিজ্ঞাপনে হ্যাকিংকে উৎসাহিত এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরিতে সম্পৃক্ত হ্যাকারদের পক্ষাবলম্বন করা হয়েছে। এ জন্য গত সোমবারই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে শিক্ষা সচিবকে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। একই সঙ্গে তিনি প্রতিষ্ঠানটির ক্ষেত্রে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে চিঠি দিতে শিক্ষা সচিবকে নির্দেশ দেন।
এথিক্স অ্যাডভান্সড টেকনোলজি লিমিটেড (ইএটিএল) আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে অবশ্য শিক্ষামন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই আমন্ত্রিত অতিথি ও শ্রোতাদের বলে রেখেছিলেন, তার বক্তব্যের শেষে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোকপাত করবেন। অবশেষে বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে সাইফুর’স কোচিং সেন্টারের উদাহরণ টানলেন শিক্ষামন্ত্রী। প্রতিষ্ঠানটির প্রধানকে উদ্দেশ করে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘তিনি (সাইফুর’স প্রধান) চরম বিতর্কিত বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। আমি বিস্মিত হলাম, দেশের জ্ঞানী-গুণী-বুদ্ধিজীবীরা বড় বেশি সোচ্চার হননি।’ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী কোচিং সেন্টারটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে নিজের মুখেই বিজ্ঞাপনটি পড়ে শোনান। মন্ত্রী বলেন, ‘তার মাথায় এত জ্ঞান…, সেই লোকটাকে আদর্শ হিসেবে ধরে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, গবেষক, হ্যাকার- সব এক মাপে নিয়ে বলেছেন, আমার কাছে আসো হ্যাকিং ভালো করে শিখে যাও!’
উপস্থিতদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এটা সমাজ! তিনি নাকি শিক্ষক ছিলেন, ব্যবসা করার জন্য ছেলেমেয়েদের প্রলোভন দেখাচ্ছেন, ভালো হ্যাকার হতে পারবে, ইংলিশ শিখলে আসো আমার কাছে, শেখো।’ মন্ত্রী জানান, আমরা মামলা করছি, আপনাদের প্রতিক্রিয়া সবার কাছে জানতে চাই। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত বিশেষ অতিথি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ উপস্থিত দর্শক সারিতে সবাই হাততালি দিয়ে মন্ত্রীকে সমর্থন জানান।
সাইফুর’স কোচিংয়ের প্রধানকে ‘চোরের রাজা’ আখ্যা দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আর এই চোরের রাজা, যিনি চোরামি শেখাতে চান, তার বিরুদ্ধে কী হবে- এ দেশের আইন কী বলে, আমরা শেষ পর্যন্ত দেখে ছাড়ব। তিনি নাকি বলে গেছেন, এটার জন্য আমার বিরুদ্ধে কত কোটি টাকা লাগবে খরচ করবেন। আমার তো এক পয়সাও নেই, বিনা পয়সায় জীবন কাটিয়ে এসেছি, আর মরবার সময় কোটি কোটি টাকার ভয়…।’ মন্ত্রী বলেন, ‘প্রলোভন দিয়ে যদি হ্যাকিং শিখি, এই যদি বিজ্ঞাপন দিতে পারে, কে বিজ্ঞাপন ছাপাল, কে প্রচার করল, মানুষ কেন প্রতিবাদ করল না?’
অনুষ্ঠানে এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক নীলুফার আহমেদ, এথিক্স অ্যাডভান্সড টেকনোলজি লিমিটেডের (ইএটিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ মুবিন খান উপস্থিত ছিলেন।
by 
