দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর ফলে দেশে-বিদেশে বসবাসরত ১৮ বছরের বেশি বয়সী যেকোনও বাংলাদেশি পেনশনের আওতায় আসার সুযোগ পেলেন। সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের কথা বিবেচনা করে প্রাথমিকভাবে ৪ ধরনের পেনশন কর্মসূচি চালু হলো। সেগুলো হলো-প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা ও প্রবাসী।
বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) বেলা ১১টা ১০ মিনিটে গণভবনে এই কর্মসূচি উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কারা করতে পারবেন?
এই কর্মসূচির আওতায় ১৮ থেকে ৫০ বছরের বেশি বয়সিদের জন্য পেনশনের ব্যবস্থা থাকবে। মাসিক চাঁদা হবে সর্বনিম্ন এক হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা। সর্বনিম্ন এক হাজার টাকার মধ্যে পাঁচশ টাকা সরকার প্রদান করবে। পেনশনব্যবস্থায় নগদ টাকায় কোনো লেনদেন হবে না। সব কর্মকাণ্ড হবে অনলাইনে।আর ৬০ বছর বয়স থেকে আজীবন পেনশন পাবেন তারা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালে দেশে ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষ ছিলেন ১ কোটি ২০ লাখ। ২০৪১ সালে যে সংখ্যা হবে ৩ কোটি ১০ লাখ। পেনশন কর্তৃপক্ষ বলছে, মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে। সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা। পাশাপাশি তাদের নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে। মূলত এই কারণেই সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু হলো।
ইতোমধ্যে পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইট চালু হয়েছে। যার ঠিকানা www.upension.gov.bd। এতে বলা হয়েছে, সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ করে আপনার ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।ওয়েবসাইটের ঠিকানায় পেনশন স্কিমগুলো সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য উল্লেখ করা আছে।
সর্বজনীন পেনশন রেজিস্ট্রেশন করবেন যেভাবে
প্রথমে আপনাকে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে যেতে হবে। তারপর সবার ডান পাশের বাটন পেনশনার রেজিস্ট্রেশনে ক্লিক করতে হবে। অথবা সরাসরি এখানে ক্লিক করুন।
এরপর রেজিস্ট্রেশন ফরমে আমি সম্মত আছি বাটনে ক্লিক করে প্যাকেজ/স্কিম নির্বাচন করতে হবে; এনআইডির নম্বর দিতে হবে; জন্ম তারিখ নির্বাচন করতে হবে; মোবাইল নম্বর দিতে হবে; ইমেইল আইডিও দিতে হবে। তারপর ক্যাপচা প্রদান করে পরবর্তী পেজে যেতে হবে।
আরো পড়ুন: সর্বজনীন পেনশন : প্রথম দিন ৮ হাজার নিবন্ধন, চাঁদা পরিশোধ ১ হাজার ৭০০ জনের
এরপর আপনার মোবাইলে একটি ওটিপি যাবে। সেটি প্রদান করতে হবে। এরপর পরবর্তী পেজে চলে যাবে। সেখানে আপনার এনআইডির ছবিসহ যাবতীয় তথ্য চলে আসবে। এই পেজে আপনাকে বিভাগ, জেলা, উপজেলা, বার্ষিক আয় উল্লেখ করে পেশা সিলেক্ট করতে হবে।
এরপর পরবর্তী পেজে মাসিক চাঁদার পরিমাণ সিলেক্ট করতে হবে এবং চাঁদা পরিশোধের ধরন সিলেক্ট করতে হবে। অর্থাৎ আপনি মাসিক, ত্রৈমাসিক নাকি বার্ষিকভাবে চাঁদা পরিশোধ করবেন। এরপর পরবর্তী বাটনে ক্লিক করতে হবে। এই পেজে ব্যাংক একাউন্ট নম্বর, হিসাবের ধরন, রাউটিং নম্বর, ব্যাংকের নাম, ব্যাংকের শাখা উল্লেখ করতে হবে।
আরো পড়ুন: যেভাবে সর্বজনীন পেনশনে অংশ নিবেন
এরপর পরবর্তী বাটনে ক্লিক করলে নমিনির পেজ আসবে। সেখানে নমিনির আইডির ধরন সিলেক্ট করতে হবে। এখানে জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন ও পাসপোর্ট আছে। জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও জন্মতারিখ দিতে হবে। এরপর নমিনি সিলেক্ট করুন বাটনে ক্লিক করলে নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য চলে আসবে। সেখানে সম্পর্কের ঘরে সম্পর্ক সিলেক্ট করতে হবে, নমিনির প্রাপ্যতার হার দিতে হবে। নমিনি আরও যুক্ত করা যাবে।
এরপর পরবর্তী পেজে চলে গেলে সেখানে সম্পূর্ণ ফর্মটি দেখাবে। এখান থেকে আপনি সম্পূর্ণ আবেদনটি ডাউনলোড করতে পারবেন। সবার নিচে সম্মতি প্রদান চেক বক্সে টিক দিয়ে আবেদন সম্পন্ন করতে হবে। এরপর পেমেন্ট করতে হবে। কিংবা আবেদন সংশোধনও করতে পারবেন।
প্যাকেজ/স্কিমসমূহের বিস্তারিত ধারণা পেতে এখানে দেখুন
উল্লেখ্য, এ কর্মসূচির আওতায় প্রবাসীদের জন্য ‘প্রবাস’, বেসরকারি কর্মচারীদের জন্য ‘প্রগতি’, স্বকর্মে নিয়োজিত (অনানুষ্ঠানিক খাত) ব্যক্তিদের জন্য ‘সুরক্ষা’ এবং অতিদরিদ্রদের জন্য ‘সমতা’ এ চারটি স্কিমের কথা উল্লেখ রয়েছে বিধিমালায়। এসব স্কিমে যুক্ত হয়ে বেসরকারি খাতের কর্মচারী বা প্রবাসীরা তাদের মোট চাঁদার চেয়ে সর্বনিম্ন ২ দশমিক ৩০ গুণ থেকে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৩১ গুণ অর্থ পেনশন হিসেবে পাবেন।