ডেস্ক: অবশেষে বাড়ছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসরে যাওয়ার বয়সসীমা। সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের নভেম্বর বা ডিসেম্বরে এ সংক্রান্ত ঘোষণা আসতে পারে। তার আগেই এ সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে জানা গেছে। আপাতত অবসর গ্রহণের এ বয়সসীমা বাড়বে একবছর। পরবর্তী সময়ে আরও কয়েকটি ধাপে এই বয়সসীমা বাড়বে বলে জানা গেছে। বিষয়টি নিয়ে অনেকদিন ধরে সরকারের ওপর মহলে আলোচনা চললেও নানা কারণে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করা হচ্ছিল। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের আগ্রহকেই প্রাধান্য দিয়েছেন বলে জানা গেছে। বর্তমানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসরে যাওয়ার বয়সসীমা রয়েছে ৫৯ বছর এবং মুক্তিযোদ্ধা কর্মচারীদের অবসরের বয়স রয়েছে ৬০ বছর। একবছর বাড়লে সাধারণ গণকর্মচারীর জন্য হবে ৬০ বছর আর মুক্তিযোদ্ধা গণকর্মচারীর বয়স হবে ৬১ বছর।
সূত্র জানায়, বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়ে ৭১ বছর অতিক্রম করেছে। একইসঙ্গে মানুষের সক্ষমতা ও দক্ষতা বেড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই চাকরির বয়স বাড়তে পারে, বাড়ানো উচিত বলে মনে করছেন অর্থমন্ত্রী।
তিনি বলেছেন, মানুষের দক্ষতা বেড়েছে। মানুষের সক্ষমতা বেড়েছে। বেড়েছে মানুষের গড় আয়ু। এগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। না হলে একসঙ্গে মেধা, দক্ষতা, সক্ষমতা চলে গেলে প্রশাসন চালানো তো কঠিন হয়ে উঠবে। এ ছাড়া অবসরে যাওয়ার বয়স না বাড়ালে অদূর ভবিষ্যতে অবসরপ্রাপ্ত একটি বিশাল জনগোষ্ঠী সমাজে বিচরণ করবে। যা কারও কাম্য নয়।
এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকারের বর্তমান পলিসি হচ্ছে, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগকে নিরুৎসাহিত করা। এতে স্বাভাবিক পদোন্নতি কার্যক্রম বাঁধাগ্রস্ত হয়। একদিকে আমরা তাদের প্রাপ্য পদন্নোতি দিতে চাই, অন্যদিকে দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের অভিজ্ঞতাও কাজে লাগাতে চাই। সেক্ষেত্রে অবসরের বয়স না বাড়ানোর বিকল্প নেই। আমরা কাউকেই আটকে রাখতে চাই না। তাই বয়স বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, যেভাবে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে, সেই দিক বিবেচনায় নিলে একসঙ্গে ৪/৫ বছর বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু তা তো হবে না। একসঙ্গে এত বাড়ানো ঠিক হবে না। ধাপে ধাপে বাড়ানো যেতে পারে। তাই আপাতত অবসরে যাওয়ার ক্ষেত্রে বয়সসীমা বছরখানেক বাড়বে। পরবর্তী সময়ে আবার বাড়বে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানো হবে না। এ ক্ষেত্রে বয়স বাড়ানোর কোনও যুক্তি নেই।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা সরকারি চাকরিজীবীদের অবসরে যাওয়ার বয়স ৬২ বছর আর সাধারণ গণকর্মচারীর অবসরের বয়স ৬১ বছর করার বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনাধীন থাকলেও নানা কারণে তা বাস্তবে রূপ পাচ্ছে না। এর আগে গণকর্মচারীদের অবসরের বয়স প্রথমবার বাড়ানো হয় ২০০৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর। এ সময় ১৯৭৪ সালের গণকর্মচারী অবসর আইন সংশোধন করে মুক্তিযোদ্ধা গণকর্মচারীদের অবসরের বয়স ৫৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ৫৯ বছর করা হয়।
সর্বশেষ ২০১১ সালের ৩ ফেরুয়ারি আলোচ্য আইন পুনরায় সংশোধন করে সব ধরনের গণকর্মচারীর অবসরের বয়স ৫৯ বছর করা হয় আর মুক্তিযোদ্ধা গণকর্মচারীর অবসরের বয়স করা হয় ৬০ বছর।
প্রসঙ্গত, দেশে সরকারি চাকরিজীবীর সংখ্যা প্রায় ২১ লাখ। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা গণকর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার।
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মুক্তিযোদ্ধা গণকর্মচারীদের অবসরের বয়স ৬৫ বছর করাবিষয়ক একটি প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় উত্থাপনের নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রস্তাবটি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ২০১২ সালের ১৫ জানুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। বিধান অনুযায়ী এটি কার্যকর করতে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি ও মন্ত্রিসভার অনুমোদনেরও প্রয়োজন। কিন্তু দীর্ঘদিন এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে কোনও উদ্যোগ না নেওয়ায় সংক্ষুব্ধরা আদালতের শরণাপন্ন হন। প্রথমে হাইকোর্ট পরে আপিল বিভাগ একই নির্দেশনা দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাবটি মন্ত্রিসভায় উত্থাপনের আদেশ দেন। তবে আদালত মুক্তিযোদ্ধা গণকর্মচারীদের আবেদন বিবেচনার ক্ষেত্রে কোনও বাধ্যবাধকতা জারি করেননি। এ ক্ষেত্রে মন্ত্রিসভাকেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৪ জানুয়ারি মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় উত্থাপনের জন্য আদেশ দেন হাইর্কোট। সর্বশেষ গত ১৬ নভেম্বর সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগও হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন। অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারি চাকরি থেকে অবসরের বয়সসীমা ৬০ থেকে ৬৫ বছর করার প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করতে হাইর্কোট যে আদেশ দিয়েছেন, তা বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এ সংক্রান্ত লিভ টু আপিলের নিষ্পত্তি করে এ আদেশ দিয়েছিলেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বয়স বাড়ানোর ক্ষেত্রে আদালতেরও একটি নির্দেশনা রয়েছে। বয়স বাড়ানো হলে পদোন্নতির সুযোগ খুব কাছে থাকলেও তা পিছিয়ে যায়। তাই বয়স বাড়ানোর প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকেই আপত্তি করছেন। এদিকে সর্বোচ্চ আদালতরে আদেশ প্রতিপালনে বাধ্য আমরা। তবে একসঙ্গে চাকরি বয়স ৬৫ বছরে উন্নীত করলে নানা রকম জটিলতা সৃষ্টি হবে প্রশাসনে। খুব সহজে এই জটিলতা কাটিয়ে ওঠা সহজ হবে না। এজন্য আপাতত সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি সম্মান রেখে সরকারি চাকরিজীবীদের বয়স বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।