এস কে দাস: স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাদ ব্যবহার করে সৌরবিদ্যুত উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে সরকার। প্রাথমিকভাবে দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং বিশ্বব্যালয়ের ছাদে সৌর প্যানেল বসানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গ্রিড এবং অফগ্রিডের দুটি উপজেলা এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাইলট প্রকল্পের কাজ শুরু হবে শীঘ্রই। সরকারী বিনিয়োগ ছাড়াও উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে বিনিয়োগ আহ্বান করা হবে।
দেশের মোট বিদ্যুতের অন্তত ১০ ভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদন করা হবে। এই পরিকল্পনার আওতায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রেলস্টেশন এবং বাড়ির ছাদে সৌরবিদ্যুত উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ছাদে সৌর প্যানেল স্থাপনের আগ্রহ দেখায় বিদ্যুত বিভাগ। তাদের কাছে অনুমতি চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, প্রথমেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাদকে এ কাজে ব্যবহার করা যায়। পর্যায়ক্রমে কলেজ এবং স্কুলের ছাদে যা সম্প্রসারণ করা সম্ভব। অন্যদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদে সৌর প্যানেল স্থাপন করা যাবে। তবে এক বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ক্রমান্বয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়ছে। এজন্য কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সম্প্রসারণ প্রয়োজন। তবে আগামী পাঁচ থেকে ছয় বছরের মধ্যে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সম্প্রসারণ হবে না বলে মনে করা হচ্ছে সেখানে সৌর প্যানেল বসানো যেতে পারে।
বিদ্যুত বিভাগ সূত্র বলছে, প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদে এক হাজার ২০০ স্কয়ারফিট জায়গা রয়েছে। এই হিসাবে বিদ্যালয়ে ১৫ কিলোওয়াটের সোলার প্যানেল বসানো সম্ভব। যতগুলো প্রাথমিক বিদ্যালয় পাওয়া যাবে ততগুলোতেই সৌর প্যানেল বসাতে চায় বিদ্যুত বিভাগ। যেসব যায়গায় গ্রিডলাইন রয়েছে সেখানের উৎপাদিত বিদ্যুত সরাসরি গ্রিডে চলে যাবে। যেখানে গ্রিড নেই সেখানের বিদ্যুত স্কুলেই ব্যবহার করবে। সরকার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম করার চিন্তাভাবনা করছে, এর জন্য বিদ্যুতের প্রয়োজন। এছাড়া গ্রীষ্মে শ্রেণীকক্ষে বৈদ্যুতিক পাখা চালানোর জন্য বিদ্যুত প্রয়োজন। যদিও এখনও দেশের বেশিরভাগ গ্রামের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিদ্যুত সংযোগই নেই।
বিদ্যুত বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, প্রথমেই সারাদেশে একসঙ্গে কাজ শুরু না করে গ্রিড এবং অফগ্রিডের দুটি উপজেলাকে নির্বাচন করা হবে। এর ছাদগুলোতে সৌর প্যানেল স্থাপন করা হবে। এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সারাদেশের স্কুলগুলোতে সৌর প্যানেল স্থাপনের কাজ করা হবে।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে নোয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম সৌর প্যানেল স্থাপনের জন্য প্রকল্প তৈরি করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি নতুন স্থাপিত হওয়ায় তাদের কিছু ভবন সম্প্রসারণ প্রয়োজন রয়েছে। তবে যেসব ভবনের কাজ শেষ তার সবগুলোর ছাদেই সৌর প্যানেল বসানো হবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক পরিত্যক্ত জমি থাকে সেখানেও সৌর প্যানেল স্থাপন করা যায় কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিদ্যুত বিভাগ বলছে, আমরা চাচ্ছি বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য যে বিদ্যুত প্রয়োজন তার পুরোটাাই গ্রীন এনার্জি দিয়ে উৎপাদন করতে। এতে সারাবিশ্বে একটি উদাহরণ তৈরি হবে যে, এই বিশ্বদ্যিালয়টি গ্রীন এনার্জিতে চলছে।
সরকারের পক্ষে পাওয়ারসেল এসব কাজের সমন্বয় করছে। ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পাওয়ারসেল বৈঠক করেছে। দুই মন্ত্রণালয়ই সৌরবিদ্যুত উৎপাদনে বিদ্যুত বিভাগের এই কার্যক্রমে উৎসাহ দেখিয়েছে।
পাওয়ারসেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, সৌরবিদ্যুত উৎপাদনের সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে জমির প্রাপ্যতা। এই সঙ্কট দূর করতে সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাদগুলো আমরা ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছি। এক্ষেত্রে যত বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাদ পাওয়া যাবে তত বেশি সৌরবিদ্যুত উৎপাদন করা যাবে। দেশের মোট বিদ্যুত উৎপাদনের মধ্যে ১০ ভাগ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদন করা হবে। আর সৌরশক্তি ছাড়া আমাদের তেমন নবায়নযোগ্য জ্বালানিও নেই। এক্ষেত্রে কেউ আইপিপি ভিত্তিতে কাজ করতে চাইলেও আমরা সহায়তা করতে পারি বলে জানান তিনি।
সরকারের পরিকল্পনায় থাকা ৫০০ মেগাওয়াট সৌর প্যানেলে বিদ্যুত বিভাগ সহায়তা দেবে। তবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় তা বাস্তবায়ন করবে। কৃষি মন্ত্রণালয় সারাদেশে ৮০ মেগাওয়াট সোলার প্যানেল স্থাপন করবে। এর মাধ্যমে সেচ প্রকল্পে বিদ্যুতের সহায়তা দেয়া হবে। সারাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে সৌরচালিত সেচ পাম্প স্থাপন করা হবে। ইতোমধ্যে সোলার সেচ পাম্প জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সেচ ছাড়া অন্য সময়ে স্থানীয় গ্রিডে এখান থেকে বিদ্যুত সরবরাহ করা হতে পারে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৫০ মেগাওয়াটের সোলার প্যানেল স্থাপন করবে। সারাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ছোট ছোট সৌর প্যানেল স্থাপন করা হবে। এই পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, সারাদেশের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সোলার প্যানেল স্থাপন করা হবে। সম্মিলিতভাবে এর ক্ষমতা ধরা হয়েছে ৪০ মেগাওয়াট। এছাড়া সিটি কর্পোরেশন ৫০ মেগাওয়াট সোলার প্যানেল স্থাপন করতে পারবে বলে বিদ্যুত মন্ত্রণালয় মনে করছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনগুলো সড়কবাতিতে সৌরবিদ্যুত ব্যবহার করবে। তবে এখানের সড়কবাতি হিসেবে যেসব উচ্চ ক্ষমতার বাল্ব ব্যবহার করা হচ্ছে তার বদলে সৌরবিদ্যুতে এলইডি বাতি জ্বালানো হবে। কম বিদ্যুত খরচের কারণেই এলইডি ব্যবহার করা হবে। রেল মন্ত্রণালয় রেলস্টেশনের ছাদে সোলার প্যানেল স্থাপন করে ৫০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুত উৎপন্ন করবে। এক্ষেত্রে যেসব স্থানে রেলস্টেশন আছে কিন্তু বিদ্যুত নেই সেসব স্টেশনকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। ধর্ম মন্ত্রণালয় মসজিদ, মন্দির, গির্জার ছাদে ১০ মেগাওয়াট সোলার প্যানেল স্থাপন করবে। এছাড়া শিল্প মন্ত্রণালয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং পূর্ত মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সরকারী ভবনের ছাদে সৌর প্যানেল স্থাপন করবে।