বিডি নিউজ,২৭ আগষ্ট ২০২১:
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার লক্ষ্যে চারটি সিদ্ধান্ত এসেছে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠক থেকে।
সরাসরি ক্লাস-পরীক্ষা শুরু করতে নানা মহলের চাপের মধ্যে বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল এই সভা হয়।
সভায় চলমান ছুটি ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হলেও কীভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা যাবে, তানিয়ে চারটি কাজ করার সিদ্ধান্ত হয়।
সভা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই বিষয়টি জানানো হয়।
এতদিন ধরে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে আসার জন্য অপেক্ষা করা হলেও এখন তা থেকে সরে এসেছে মন্ত্রণালয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সংক্রমণের হার ৫ শতাংশ বা তার কম থাকলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষার্থীদের শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্যের উপর দীর্ঘ ছুটির বিরূপ প্রতিক্রিয়াসহ সম্ভাব্য সব নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়ে সরকার ‘সম্পূর্ণ সচেতন’।
সেজন্য সংক্রমণের হার ৫ শতাংশ বা তার চেয়ে কিছুটা বেশি থাকলেও ঠিক কোন পর্যায়ে পৌঁছালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা যায়, সে বিষয়ে কোভিড বিষয়ক জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির পরামর্শ চাওয়া হবে।
তাদের সঙ্গে আগামী সপ্তাহে যৌথ বৈঠক করবে শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।
তদারকি
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় যে ‘স্কুল রিওপেনিং প্ল্যান’ তৈরি করেছে, তা বাস্তবায়ন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার বিষয়টি তদারক করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহায়তায় ‘চেকলিস্ট’ প্রণয়ন করা হবে।
আগামী সাত দিনের মধ্যে এই ‘চেক লিস্ট’ প্রণয়ন হবে বলে জানানো হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে টিকা দিয়ে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবিতে সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনে বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভিশিক্ষার্থীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে টিকা দিয়ে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবিতে সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনে বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী।
টিকা দিতে ইসির শরণ
বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থী এখনও টিকার জন্য নিবন্ধন করেনি, তাদের তালিকা আগামী সাত দিনের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হবে।
যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, কিন্তু বয়স ১৮ পেরিয়ে গেছে তাদের তালিকা তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের দ্রুততম সময়ে জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে নির্বাচন কমিশনের সহযোগিতা চাইবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টিকাদান কেন্দ্র স্থাপন
যেসব শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারীর এখনও টিকা নেওয়া বাকি, তাদের টিকাদান সহজ করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকাদান কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার কথা ভাবা হচ্ছে।
প্রয়োজনে সব জেলায় এক বা একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কারিগরি সহায়তায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে শুধু শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারীদের জন্য টিকাদান কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনারও ব্যবস্থা করা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
মহামারীর বছর গড়ানোর পর গত মার্চে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মন্ত্রণালয়। কিন্তু ডেল্ট ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণে পরিস্থিতি নাজুক হয়ে উঠলে পিছু হটতে হয়। ফলে ছুটি বাড়তে থাকে।
শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের জীবন ঝুঁকিতে ঠেলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবেন না বলে শিক্ষামন্ত্রী এতদিন বলে এলেও এখন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন এবং শিক্ষকদের মধ্য থেকেও খুলে দেওয়ার চাপ আসছে।
দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার তাগিদ দিয়ে মঙ্গলবার ইউনিসেফও এক প্রতিবেদনে বলেছে, দীর্ঘ ছুটির হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় দেশ।
এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি, সব বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, দপ্তর ও সংগঠনের দায়িত্বশীলদের ভার্চুয়াল সভায় ডাকেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ও নাসিমা আক্তার, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম খান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম, কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এই বৈঠকে ছিলেন।
এছাড়া যুক্ত ছিলেণ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কাজী শহীদুল্লাহসহ কমিশনের অন্য সদস্যরা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের অধ্যক্ষরা, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি এবং সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা।