ছোট বেলায় শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে স্কুলে ভর্তি নেয়নি স্কুল কর্তৃপক্ষরা। পরে এক নিকটাত্মীয়ের সহযোগিতায় ভর্তি হয়েছেন পাশের আরেক স্কুলে। এর পর নিজের অদম্য চেষ্টা ও মায়ের সহযোগিতায় মায়ের কোলে কোলেই শেষ করেছেন প্রাইমারি ও হাইস্কুল লেভেল।
এবার সেই মায়ের কাঁধে ভার রেখেই স্বপ্ন দেখেন উচ্চ শিক্ষার। বলছিলাম ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের গুচ্ছ ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়(ইবি) কেন্দ্রে অংশগ্রহণ করা প্রতিবন্ধী মেধাবী শিক্ষার্থী মাহফুজা আক্তার মীমের কথা।
জানা যায়, দুই ভাইবোনের সংসারে বড় মেয়ে মীম। তার বাবার নাম মঞ্জু হোসেন পেশায় ফার্নিচার মিস্ত্রী আর মায়ের নাম সাহেরা বেগম। মীম বাহাদুরপুর পন্ডিত কাজী আবুল হোসেন কলেজ থেকে ২০২৩ সালে এইচএসসি পাশ করেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে নিজ এলাকার বাইরে গিয়ে পড়া সম্ভব না মীমের। তাই গুচ্ছে যদি চান্সও হয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে গিয়ে পড়তে চান না তিনি।
আরও পড়ুন:ছাত্রীকে নিয়ে শিক্ষিকা উধাও
ভর্তি পরীক্ষা শেষে কথা হয় মীমের সাথে। তিনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ পরীক্ষা ভালো হয়েছে। জন্মগতভাবে আমি শারীরিক অসুস্থ, আমার লেখাপড়ার পুরোটাই আম্মু পাশে ছিলো, আমার এ পর্যন্ত শিক্ষাজীবন আম্মুর কোলে বসেই। ছোটোবেলায় আমি যখন স্কুলে ভর্তি হতে যাই সাধারণ বাচ্চাদের মতো আমাকে ভর্তি নিতে চায়নি।
স্কুল থেকে বলা হয়েছিলো আমি হয়তো পড়তে পারবেনা অন্য বাচ্চাদের সমস্যা হবে। আম্মুর অনুরোধে শিক্ষকরা আমাকে ভর্তি নেয়। ভর্তি নিলেও আমার রোল নির্ধারণ হয় সবার পরে। পরবর্তীতে বার্ষিক পরীক্ষার পর যখন আমি ক্লাসে প্রথম স্থান অধিকার করি তখন শিক্ষকরা আমাকে নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে। এরপর থেকে নিজের চেষ্টায় ভালো ফলাফল ধরে রেখেছি। আজ জীবনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা দিয়েছি ।
পরীক্ষা সম্পর্কে মীম বলেন, প্রশ্ন তুলনামূলক সহজ ছিলো, তবে আমার হাতে সমস্যা থাকার কারণে আমি এক্সট্রা সময় পাইনি। আমার খাতাই আগে নিয়েছে বরং।নিজের স্বপ্নের কথা বলতে গিয়ে মীম বলেন, মার স্বপ্নই আমার স্বপ্ন।
আরও পড়ুন: গুচ্ছের ফল: আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ফল
মীমের মা সাহেরা বেগম বলেন, কোন মা যেন তার সন্তানকে না বলে যে আমার সন্তান পড়তে চায় না। সকল পিতা মাতার উদ্দেশ্যে আমার একটাই উক্তি চেষ্টা করবেন, আমি আমার অসুস্থ সন্তানকে নিয়ে এতো দূর আসতে পারলে আপনি আপনার সুস্থ সন্তানকে নিয়ে অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারবেন। শিক্ষা ছাড়া কোনো উপায় নেই, আমি বিশ্বাস করি আমার মেয়ে যদি শিক্ষিত হয় আমি মারা গেলে আমার মেয়ে তার বাবার বোঝা হবেনা। সেজন্য আমি এতোদূর তাকে এনেছি।