দেশের মাদ্রাসাগুলোতে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) আওতাবহির্ভূত পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। আর এর ফলে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তিতেও ভোগান্তিতে পড়তে হতো।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুনির্দিষ্ট কোনও নির্দেশনা না থাকায় দেশের মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দুর্নীতিমুক্ত করা যাচ্ছিল না। এই পরিস্থিতি নিরসনে নিয়োগ ও নিয়োগ প্রক্রিয়া বদলে ফেলা হয়েছে।
আরো পড়ুন: চুয়াডাঙ্গার সেই রাঙা ভাবির শাস্তি চান শিক্ষকরা
এর ফলে মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে কোনও ভিন্নতা থাকবে না, আরও স্বচ্ছতাও আসবে। একই সঙ্গে তাদের এমপিওভুক্তিও সহজ হবে।
জানতে চাইলে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের উপপরিচালক (প্রশাসন) মো. জাকির হোসাইন বলেন, মাদ্রাসায় নিয়োগের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনও নির্দেশনা না থাকায় প্রতিষ্ঠান ভেদে ভিন্নতা দেখা যেতো। তাছাড়া নিয়োগের পদভিত্তিক নম্বর বণ্টনসহ নানা বিষয়ে অস্পষ্টতা ছিল, যেমন- নিকটাত্মীয় থাকলে নিয়োগ কমিটিতে থাকা যাবে কিনা? এরকম নানা অস্পষ্টতার সমাধানে এবং এনটিআরসিএ আওতাবহির্ভূত পদে প্রতিষ্ঠান ভেদে নিয়োগে অভিন্নতা ও স্বচ্ছতা আনতে একটি নির্দেশমালা জারি করেছে অধিদফতর।
তিনি জানান, মাদ্রাসার নিয়োগ প্রক্রিয়ার শুরু তথা পদের শূন্যতা নির্ধারণের রেজুলেশন থেকে নিয়োগের সুপারিশের রেজুলেশন পর্যন্ত একটি পূর্ণাঙ্গ প্রক্রিয়া এই নির্দেশমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ নির্দেশমালা জারির ফলে একদিকে নিয়োগ প্রক্রিয়া ও এমপিও পাওয়া সহজ হবে, অন্যদিকে নিয়োগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে। এমনকি নিয়োগ কমিটি সুপারিশ করা প্রার্থীকে পরবর্তী সময়ে নিয়োগপত্র দেওয়া না হলে প্রতিষ্ঠান প্রধান ও পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
গত ৬ জুনের মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর থেকে জারি হওয়া নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বেসরকারি মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যায়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) আওতাবহির্ভূত পদে (কর্মচারী ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পদ) মাদ্রাসা কমিটির নিয়োগ কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডি নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকে। কিন্তু ২০১৮ সালের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদ্রাসা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা (সংশোধিত ২০২০) ও সর্বশেষ পরিমার্জন অনুযায়ী এ ধরনের নিয়োগ করা শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির জন্য অনলাইনে পাওয়া আবেদন পর্যালোচনা করে প্রতীয়মান হয় যে, প্রতিষ্ঠান ভেদে ভিন্নতা রয়েছে।
পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, প্রাপ্ত আবেদন যাচাই-বাছাই, নিয়োগ কমিটি গঠন, পরীক্ষার নম্বর বণ্টনে লিখিত পরীক্ষা, ব্যবহারিক পরীক্ষা, মৌখিক পরীক্ষা, সনদ পরীক্ষার সময়, মূল্যায়ন, ফলাফল বিবরণী, সুপারিশ প্রতিষ্ঠান ভেদে ভিন্নতা রয়েছে।
ফলে নিয়োগ করা শিক্ষক কর্মচারীদের এমপিওভুক্তিতে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মাদ্রাসায় এনটিআরসিএ‘র আওতাবহির্ভূত পদে নিয়োগ কার্যক্রমে অভিন্নতা ও স্বচ্ছতা আনতে নির্দেশমালা জারি করা হলো।
শূন্য পদের চাহিদা
জনবল কাঠামো ও সর্বশেষ পরিমার্জন অনুযায়ী যাচাই-বাছাই করে শূন্য পদ ও নতুন তৈরি পদের প্রাপ্যতা নিরূপণ করে চাহিদাপত্র পাঠাতে হবে। নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডি না থাকলে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। অর্থাৎ অ্যাডহক কমিটি এ সংক্রান্ত কোনও পদক্ষেপ নিতে পারবে না। প্রাপ্যতাবিহীন পদে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ করা শিক্ষক-কর্মচারীর এমপিও প্রস্তাব পাঠানো যাবে না। এমপিও প্রস্তাব পাঠালে প্রতিষ্ঠান প্রধান ও পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রাপ্যতাবিহীন পদে মহাপরিচালকের প্রতিনিধি মনোনয়ন চাওয়াও যাবে না।
শূন্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বিদ্যমান জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ও সর্বশেষ পরিমার্জন অনুযায়ী এমপিও এবং নন-এমপিও পদ উল্লেখ করে শূন্য পদের বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে।
নিয়োগ আবেদন যাচাই-বাছাই
প্রত্যেকটি পদে নিয়োগ যোগ্যতার শর্ত মানতে হবে। প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্ট যাচাই করে বৈধ প্রার্থীর তালিকা চূড়ান্ত করতে হবে।
স্বচ্ছ নিয়োগ কমিটি
নিয়োগ কমিটির কোনও নিকটাত্মীয়, স্বামী, স্ত্রী, ভাই-বোন, পুত্র-কন্যা, জামাতা বা পুত্রবধূ, পিতা-মাতা, ভাই-বোনের স্বামী বা স্ত্রী ও পুত্রকন্যা কিংবা স্বামী স্ত্রীর ভাই-বোন প্রার্থী থাকলে নিয়োগ কমিটিতে থাকতে পারবেন না। মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ, সহকারী সুপার বা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, ভারপ্রাপ্ত সুপার কিংবা একই মাদ্রাসার শিক্ষক কর্মচারী প্রার্থী থাকলে যাচাই-বাছাই কমিটি এবং নিয়োগ কমিটিসহ নিয়োগ সংক্রান্ত কোনও কমিটিতে মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ, সহকারী সুপার বা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, ভারপ্রাপ্ত সুপার থাকতে পারবেন না।
এছাড়া নিয়োগ পরীক্ষাগ্রহণসহ নিয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন ধাপে স্বচ্ছতা তৈরি বিধান রাখা হয়েছে নির্দেশমালায়।