ব্যাংক ঋণে বিদ্যমান ৯ শতাংশ সুদহারের সীমা তুলে দিয়ে নতুন ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ১ জুলাই থেকে যা কার্যকর হবে। এর ফলে সুদহার কিছুটা বাড়বে। নতুন সুদহার শুধু নতুন ঋণে কার্যকর হবে তেমন নয়, চলমান ঋণেও গুনতে হবে বাড়তি সুদ। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরবর্তী মুদ্রানীতিতে নতুন সুদহার ব্যবস্থার কথা জানানো হবে।
আরো পড়ুন: বুটেক্সে রেকর্ড সর্বনিম্ন পরীক্ষার্থী নিয়ে হতে যাচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা
আগামী রোববার নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করার তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। এবার মুদ্রানীতির কাঠামোতে বেশ পরিবর্তন আনা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি কমাতে ঋণ সংকোচনমূলক নীতির দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণ প্রবাহে বাড়তি সতর্কতা থাকবে এবং সুদহার বাড়ানোর কৌশল থাকবে নতুন মুদ্রানীতিতে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন সুদহার ব্যবস্থা হলো ‘স্মার্ট’ তথা শর্ট টার্ম মুভিং এভারেজ রেট। ১৮২ দিন মেয়াদি সরকারি ট্রেজারি বিলের ৬ মাসের গড় সুদের সঙ্গে আপাতত সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ করিডোর বা সীমা দেওয়া থাকবে। বর্তমানে ট্রেজারি বিলের গড় সুদহার ৭ শতাংশের নিচে রয়েছে। এর মানে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের সুদহার হবে ১০ শতাংশের মতো। আর ট্রেজারি বিলের সুদহার বাড়লেই গ্রাহক পর্যায়ে সুদ বেড়ে যাবে তেমন না। আবার কমলেই কমবে না। কেননা আপাতত ৩ শতাংশ করিডোর দেওয়া হলেও এটা বাড়বে বা কমবে। জানা গেছে, সুদহার ১০ শতাংশের আশপাশে রাখতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঋণের সুদহার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক হচ্ছে না। একটা নতুন পদ্ধতি চালু হচ্ছে। বাংলাদেশের বাস্তবতায় সুদহার পুরো বাজারভিত্তিক করলে তার সম্ভাব্য চাপের বিষয়টি আইএমএফকে বলা হয়েছে।
আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের প্রথম কিস্তি পেয়েছে বাংলাদেশ। মোট ৭ কিস্তির মধ্যে দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের সম্ভাব্য সময় আগামী নভেম্বর। সংস্থাটির ঋণের অন্যতম শর্ত সুদহার বাজারভিত্তিক করতে হবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেবে না। আবার এখনকার মতো নির্দিষ্ট সীমা রাখবে না। কেননা কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করলে সুদ অনেক বাড়বে। এর ফলে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ তৈরি হতে পারে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, আমানতের সুদহার বাড়লেও ৯ শতাংশ সীমার কারণে ঋণের সুদ বাড়ানো যাচ্ছে না। যে কারণে ব্যাংক খাতের ঋণ-আমানতের মধ্যকার সুদহারের ব্যবধান ৩ শতাংশের নিচে নেমেছে। এর মধ্যে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বাড়ছে। ব্যাংকের নিট সুদ আয় টেকসই করতে নতুন ব্যবস্থা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।
জানা গেছে, ছয় মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদহার প্রতি মাসের ১ তারিখে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেট ম্যানেজমেন্ট বিভাগ ওয়েবসাইটে ঘোষণা দেবে। আবার করিডোর রেটে কোনো পরিবর্তন এলে তাও ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। এর আলোকে ব্যাংকগুলো গ্রাহক পর্যায়ে সর্বোচ্চ সুদহার নির্ধারণ করতে পারবে। অবশ্য সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা বাড়লে সবার ঋণের খরচ নাও বাড়তে পারে। কেননা কোনো ব্যাংক ওই সীমা অতিক্রম করতে পারবে না। তবে চাইলে নিচে থাকতে পারবে। সাধারণভাবে বড় গ্রাহকরা সর্বোচ্চ সীমার অনেক কমে ঋণ পান। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছোটদের জন্য সর্বোচ্চ সীমা প্রযোজ্য হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ২০২০ সালে সুদহারে সর্বোচ্চ সীমা ৯ শতাংশ নির্ধারণের সময় বিদ্যমান ঋণেও তা কার্যকর করতে বলা হয়েছিল। এবারও বিদ্যমান ঋণসহ সব ক্ষেত্রে নতুন সুদহার ব্যবস্থা কার্যকর হবে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, কোনো গ্রাহক ৫ বছর মেয়াদি একটি ঋণ নিয়েছেন। গত তিন বছর ধরে তিনি হয়তো ৯ শতাংশ হারে কিস্তি দিয়ে আসছেন। এখন দুই বছরের কিস্তি নতুন সুদহার অনুযায়ী দিতে হবে। এর ফলে সুদহার সামান্য বাড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে নিয়ন্ত্রিত সুদহার ব্যবস্থা চালু হয়। এর আগে অনেক দিন ধরে রপ্তানি ও কৃষি খাত ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে সুদহার ছিল বাজারভিত্তিক। আইএমএফের পরামর্শে মুক্তবাজার অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ১৯৮৯ সাল সুদহার নির্ধারণের ক্ষমতা ব্যাংকগুলোর হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে বৈশ্বিক মন্দা-পরবর্তী ২০০৯ সালে সুদহারের সীমা আরোপ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মন্দা-পরবর্তী ২০১১ সালের মার্চে আংশিক সীমা প্রত্যাহার হয়। ২০১২ সালে প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ও কৃষি ছাড়া অন্য সব ঋণে সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেওয়া হয়। তারল্য সংকটের কারণে ২০২০ সালে শিল্প খাতেই সুদহার উঠে যায় ১৫ শতাংশ। এর পর বিভিন্ন উপায়ে সুদহার কমানোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত সার্কুলারের মাধ্যমে ৯ শতাংশ ঊর্ধ্বসীমা দেওয়া হয়।
আন্তঃব্যাংক লেনদেনেও করিডোর
আন্তঃব্যাংক লেনদেনে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ সীমা বা করিডোর দেওয়া হবে। নির্ধারিত করিডোরের বাইরে এক ব্যাংক আরেক ব্যাংক থেকে ধার নিতে পারবে না। আবার কোনো ব্যাংক সর্বনিম্ন সুদহারের নিচে নামতে পারবে না। সর্বনিম্ন রেটেও বাজারে ধার নেওয়ার মতো কোনো ব্যাংক না থাকলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নেবে।
সুত্র: সমকাল