বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারী করে দেয়ার নামে প্রতারনা

ডেস্ক,২৮ সেপ্টেম্বর: বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারী করে দেয়ার নামে একটি চক্র দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আদায় করছে। এমন একাধিক অভিযোগের সত্যতাও পেয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এদিকে ‘পদ্মা সেতু’ উন্নয়নে প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৫ টাকা হারে চাঁদা আদায়ের নির্দেশ সংবলিত একটি ভুয়া বিজ্ঞপ্তি নিয়ে জনসাধারণকে সতর্ক করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

বুধবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারাদেশে সক্রিয় অসাধুচক্রের এসব কর্মকা-ে রীতিমতো বিব্রত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান এসব বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর অপরাধী চক্রের বিষয়ে জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, কিছুদিন ধরেই দেশের বিভিন্নস্থানে গড়ে তোলা বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারী করে দেয়ার নামে একটি চক্র দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এমন কিছু অভিযোগের সত্যতাও পেয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাই এই চক্রকে ঠেকাতে দেশের সব জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (বিদ্যালয়-১) পুলক রঞ্জন সাহা বলেছেন, একশ্রেণীর প্রতারক আমার স্বাক্ষর জাল করে সরকারীকরণের ভুয়া আদেশ সরবরাহ করে গরিব শিক্ষকের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা আদায় করেছে। ভুয়া ওই আদেশ পেয়ে সংশ্লিষ্ট একাধিক বিদ্যালয়ের কমিটি সরকারীকরণ সংক্রান্ত যাচাই-বাছাই কমিটিতে চিঠি পাঠায়। বিষয়টি জানার পর আমরা বিদ্যালয়গুলোকে প্রতারণার হাত থেকে বাঁচাতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সতর্ক করেছি।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারীকরণ সংক্রান্ত যাচাই-বাছাই কমিটিতে কয়েকটি বিদ্যালয়ের সরকারীকরণের ভুয়া আদেশের চিঠি উপস্থাপিত হলে মন্ত্রণালয় বিষয়টি জানতে পারে। এরপর মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দেশ পাঠানো হয় উপজেলা কর্মকর্তাদের কাছেও। তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে অপরাধীদের বিরুদ্ধে সকলকে সক্রিয় করতে হবে।

মন্ত্রণালয়ের ওই নির্দেশনায় বলা হয়, প্রায়ই প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারীকরণের নামে জেলা যাচাই-বাছাই কমিটির সভায় উপস্থাপনের জন্য কিছু অসাধু ব্যক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সই জাল অথবা স্ক্যান করে জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে চিঠি দিচ্ছেন। এর ফলে মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা ও বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। বেশকিছু জেলা থেকে এসব ভুয়া চিঠির সন্ধান পাওয়া গেছে।

নির্দেশনায় মন্ত্রণালয় বলেছে, এ অবস্থায় প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারীকরণ সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের জারি করা চিঠির মূল কপি ইমেলে অথবা ডাকযোগে না পেলে এই চিঠির কোন ফটোকপি কোন ধরনের কার্যক্রমে গ্রহণযোগ্য হবে না। বিদ্যালয় সরকারীকরণের কোন চিঠি নিয়ে সন্দেহ হলে টেলিফোনে বা ইমেলে বিষয়টি নিশ্চিত হতেও অনুরোধ জানানো হয় ওই নির্দেশনায়। দেশের সব জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে এ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। বর্তমান সরকারের সময় নতুন করে সরকারী হয়েছে ২৫ হাজার ২৪০ প্রাথমিক বিদ্যালয়।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত একজন সচিব জনকণ্ঠকে বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে তারা কিছুৃদিন ধরেই জটিলতার মধ্যে আছেন। প্রায়ই এমন অভিযোগ আসছে মন্ত্রণালয়ে। বিভিন্ন এলাকায় একটি চক্র সক্রিয় হয়েছে যারা অলিতে-গলিতে গড়ে ওঠা নামসর্বস্ব বেসরকারী স্কুলের লোকজনকে বলছে যে তারা তাদের প্রতিষ্ঠান সরকারী করে দেবে। অনেক এলাকায় গিয়ে এরা মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে টাকা প্রয়োজন বলেও বলছেন। বেশ কিছু অভিযোগের তদন্ত করে টাকা হাতিয়ে নেয়ার তথ্যও পাওয়া গেছে বলে বলছেন মন্ত্রণালয়ের এ কর্মকর্তা।

এদিকে এ ঘটনা নিয়ে যখন মন্ত্রণালয় বিব্রত ঠিক তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্ত্রনালয়ের নামে ছড়িয়ে পড়া একটি ভুয়া বিজ্ঞপ্তি নিয়ে নতুন জটিলতায় পড়েছেন কর্মকর্তারা। জানা গেছে, ‘পদ্মা সেতু’ উন্নয়নে প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৫ টাকা হারে চাঁদা আদায়ের নির্দেশ দিয়ে একটি ভুয়া বিজ্ঞপ্তি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নামে সামাজিক যোগাযোগ প্রকাশ করা হয়েছে, যা রীতিমত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেট ও অডিট শাখার সহকারী সচিব স্বাক্ষরিত গত ১৯শে সেপ্টেম্বর একটি ভুয়া পত্র অনলাইনে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। যার স্মারক নম্বর ৩৮.০০.০০০০.০০০৬.২০.০১৩০.১৬-২৭১.২(ক)।

এ ধরনের কোন নির্দেশনা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রদান করা হয়নি বলে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব (বাজেট ও অডিট) রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট সবাইকে। মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয়ের নাম করে ‘পদ্মা সেতুর’ উন্নয়নের জন্য প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৫ টাকা হারে চাঁদা আদায় করার একটি ভুয়া বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে ঝঐঅঐ অখঅগ : ৭০১৭০১৫০৩৯৫৩০ নম্বরের ডাচ বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব নম্বর দিয়ে আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা অনুকূলে প্রেরণের জন্য সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেয়া হয়।

ভুয়া বিজ্ঞপ্তি অনুসারে কোন কার্যক্রম গ্রহণ না করার জন্য সংশ্লিষ্ট সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থানায় বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।