বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্ত মানেন না কুবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

Image

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচি থেকে শিক্ষকদের উপর হামলারও প্রতিবাদ জানানো হয়। এ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে একাত্মতা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তারা বলছেন, প্রশাসনের দেওয়া অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্ত তারা মানছেন না।

বুধবার (১ মে) বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নিয়ে শিক্ষকদের উপর হামলার বিচার দাবি করেন বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ক্লাস চালু করার দাবি জানান গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া এতে অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা আবাসিক হল ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দাবি তোলেন।

এসময় শিক্ষার্থীদের উপাচার্যকে কেন্দ্র করে স্লোগান দিতে শোনা যায়। “হল কারো বাপের না, হল আমরা ছাড়ছি না।, আমার অস্ত্র গেল কই, প্রশাসন জবাই চাই, আমার টাকা গেল কই, প্রশাসন জবাব চাই, শিক্ষার্থীদের অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন, স্বৈরাচারী আচরণ, মানি না মানব না” ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।

শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের অবৈধ সিদ্ধান্ত আমরা মানি না। অস্ত্র উপাচার্যের বাংলোতে আছে, অবৈধ টাকা তার বাংলোতে আছে। প্রয়োজনে ওখানে সামরিক অপারেশন করে উদ্ধার করুক। বাংলাদেশে নজিরবিহীন ঘটনা যেখানে ছাত্র ছত্রের কোনো সংঘর্ষ হয়নাই, তারা কোনো মারামারি ও করে নাই।

তিনি আরও বলেন, ছাত্ররা এবং ছাত্রলীগের সদস্যরা অনেক ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়েছে। এরই মধ্যে তিনি কিছু বহিরাগত এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা করে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়েছেন। সে আসলে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কাজ করছে। আজকের অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হলসমূহ বন্ধের সিদ্ধান্তকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে যে মানববন্ধন হবে সেই মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতির পূর্ণ সমর্থন থাকবে।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের এখানে দাঁড়ানোর উদ্দেশ্য ক্যাম্পাস খুলে দেওয়া হোক। আমরা টিউশনি করিয়ে ক্যাম্পাসে চলি। প্রশাসনের এমন স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত মানি না। উপাচার্য আপনার সমস্যা শিক্ষকদের সাথে, শিক্ষার্থীদের সাথে নয়। আমরা আন্দোলনে নামতে চাইনি, আপনি আমাদের আন্দোলনে নামতে বাধ্য করেছেন।

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত সোয়া ৯টা পর্যন্ত অনলাইনে অনুষ্ঠিত ৯২তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। একইসঙ্গে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ছাড়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও প্রশাসনের হল ছাড়ার নির্দেশনা শিক্ষার্থীরা প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে জানিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ায় রসায়ন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অমিত সরকার বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ শিক্ষকদের সমস্যা। আগে থেকে বাস বন্ধ করার কারণে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি শেষ নেই। এখন আবার বিশ্ববিদ্যালয় ও হলগুলো বন্ধ করে দিয়ে ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমরা এখন চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু এখন যদি এভাবে বাসায় চলে যেতে হয় তাহলে ধারাবাহিক পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটবে।’

মার্কেটিং বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মাসুম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই এসবের সাথে যুক্ত না। কোনো রাজনৈতিক সংগঠনও বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান সঙ্কটের সঙ্গে যুক্ত না। কিন্তু শিক্ষার্থীরাই এসব সঙ্কটের ভুক্তভোগী। আমরা হলে থাকতে চাই। আমরা শিক্ষার্থীদের এই অসুবিধার সমাধান চাই।’

ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন সিস্টেম (আইসিটি) ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী পারভেজ মোশারফ বলেন, ‘হল বন্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। সামনে আমাদের পরীক্ষা। এই সময় হলে থাকাটা জরুরি। কর্তৃপক্ষের দ্রুত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন চাই।’

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ১৪ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী রুবিনা আক্তার বলেন, এতদিন পর্যন্ত আমাদের ক্লাস পরীক্ষা বাতিল হয়েছে, আমরা কিছু বলি নাই এ আশায় যে, কয়েকদিনের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এখন হলো উল্টোটা। ক্লাস-পরীক্ষার পরে এবার হলগুলো বন্ধের ঘোষণা দিলো। এ অবস্থায় অবশ্যই শিক্ষার্থীদের এসব অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের অবস্থান নেবে।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।