চলতি বছর সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস কোর্সের বিতর্কহীন ভর্তি পরীক্ষা ছিল স্বাস্থ্য সেক্টরের বড় সফলতা। বিগত বছরগুলোতে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ নানা অভিযোগ উঠলেও এবারের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে বিতর্ক ছাড়া।
তবে সফলতার কথা প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের বর্তমান ও সাবেক শীর্ষ একাধিক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বিতর্কহীন ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ স্বাস্থ্য সেক্টরের বড় চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেন।
গত ৭ অক্টোবর রাজধানীসহ সারাদেশের ১৮ মেডিকেল কলেজে ৩৭টি কেন্দ্রে চলতি বছরের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় ৮৬ হাজার ৫৯৮ পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। এবারই প্রথম কোনো বিতর্ক ছাড়া পরীক্ষা সম্পন্ন হয়।
জানা গেছে, এ সাফল্যের নেপথ্যের প্রধান কারণ ছিল ডিজিটাল চমক। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, প্রশ্ন ছাপা, বিশেষ ডিভাইস লাগিয়ে প্রশ্নপত্র ট্রাকযোগে পরীক্ষা কেন্দ্রে পাঠানো এবং ওএমআর শিট সম্বলিত উত্তরপত্র স্বাস্থ্য অধিদফতরে নিয়ে আসা- সব ধাপে ছিল প্রযুক্তির চমক।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রশ্নপত্র বহনকালে যেখানেই গাড়ি থেমেছে সেখানেই লাল বাতি জ্বলেছে। প্রতি ৫ সেকেন্ড পর পর প্রশ্নপত্র বহনকারী ট্রাকের অবস্থান জানাতো ডিভাইস। শুধু তাই নয়, গাড়িটি কোথায় অবস্থান করছে, কোন পথ দিয়ে যাচ্ছে, কোন স্থানে কতটুকু দেরি করছে তাও মনিটরিং করা হয়।
ম্যাজিস্ট্রেট ও সংশ্লিষ্ট সরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও তাদের প্রতিনিধি ছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন করে কর্মকর্তা প্রতিটি গাড়িতে ছিলেন। প্রতিটি গাড়িতে একটি করে স্মার্ট ফোন দেয়া হয়। ইমো ও ভাইবারের মাধ্যমে গাড়িতে অবস্থানকারীরা সড়কে তাদের অবস্থান জানাতেন।
স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পরীক্ষা গ্রহণের সাফল্য সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, সবার সদিচ্ছা, সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারই ছিল সাফল্যের মূল কারণ।
তিনি আরো বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নির্দেশনায় এবার ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের আগে থেকেই স্বাস্থ্য সেক্টরের সৎ, দক্ষ ও অভিজ্ঞ অধ্যাপকদের সমন্বয়ে প্রশ্নপত্র প্রণয়নে মডারেটর নিয়োগ দেয়া হয়। সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে বিএমডিসি ও বিসিপিএসের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত হয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটি। এছাড়া দেশের খ্যাতনামা লেখক, সাংবাদিক, চিকিৎসক নেতাসহ সবার সমন্বয়ে ওভারসাইট কমিটি গঠিত হয়।
শুধু তাই নয়, সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, মডারেটর ও ওভারসাইট কমিটির সদস্যদের সমন্বয়ে পৃথক চার স্তরের পরীক্ষা কেন্দ্র তদারকি কমিটি গঠন করা হয়। প্রতিটি টিম সরেজমিন পৃথকভাবে পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করে।
বিগত বছরগুলোতে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি সংঘবদ্ধ চক্র প্রশ্ন ফাঁসের গুজব ও প্রশ্নপত্র বিক্রির অফার দিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রলুব্ধ করতো। এবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নজরদারি রাখেন। এছাড়া অধিদফতর থেকে এ ধরনের খবর পেলে অবহিত করতে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে টেলিফোন ও মোবাইল নম্বর দেয়া হয়।
অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, এবার অধিদফতর, মন্ত্রণালয়, মডারেটর, ওভারসাইট কমিটি ছাড়াও শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরাও অনেক সচেতন ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগে নানা অফার সংক্রান্ত ব্যাপারে ২৬ অভিভাবক অধিদফতরে টেলিফোন ও মোবাইল করে তথ্য দেন। সে তথ্যের ভিত্তিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেয়।
এবার ভর্তি পরীক্ষার ওএমআর শিটও দুটি বিশেষজ্ঞ গ্রুপকে দিয়ে স্ক্যানিং করা হয়। দুটি গ্রুপের স্ক্যানিংয়ের ফল মিলে যাওয়ার পরই তা প্রকাশ করা হয়।