দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা গণিত বিষয়ে। প্রাথমিকে ভাগ অঙ্ক করতে পারে না ৯৫ শতাংশের বেশি শিশু। এর মধ্যে ছেলে শিক্ষার্থীরা ৯৫.৮৫ শতাংশ এবং মেয়ে শিক্ষার্থীদের ৯৭.২০ শতাংশ শিক্ষার্থী ভাগ করতে পারেন না।
বুধবার (১৪ জুন) রাজধানীতে জাতীয় শিক্ষা সংলাপে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়েবভ ফাউন্ডেশনসহ চারটি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত গবেষণায় এসব তথ্য উঠে আসে।
আরো পড়ুন: প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্রুতই চালু হবে ‘স্কুল ফিডিং প্রোগাম’
গবেষণা ফলাফলে জানানো হয়েছে, জরিপে ৫-১৬ বছর বয়সী রাজশাহী ও খুলনা অঞ্চলের ১৫৩৩ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। জরিপে তাদের খুব সাধারণ কিছু বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছে। যা তারা বিদ্যালয় এবং অন্যান্য শিখন কালে চর্চা করে থাকে।
এতে দেখা যায়, গণিতের একক অংক শনাক্ত করতে পারেনি তাদের ১৪ দশমিক ১৯ শতাংশ ছেলে শিক্ষার্থী এবং ১৩ দশমিক ০৬ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী। তবে, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বিয়োগ অংক করতে পেরেছে ১৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ ছেলে শিক্ষার্থী এবং ২২ দশমিক ২৪ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী।
আরো পড়ুন: প্রাথমিকে এক শিক্ষকের বিপরীতে শিক্ষার্থী ৩৪ জন
করোনাকে দোষ দিয়ে আসলে খুব বেশি লাভ নেই। আমাদের এখন শিক্ষার মান বাড়াতে কাজ করতে হবে। এখানে শিক্ষার পরিমান বা সংখ্যাগত অংশগ্রহণ বেড়েছে, এখন তাই মান বাড়াতে কাজ করতে হবে।
গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৮৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ ছেলে শিক্ষার্থী এবং ৮২ দশমিক ৮৬ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী ইংরেজিতে গল্প পড়তে পারেন না। এছাড়া ইংরেজি বর্ণ পড়তে পারেনি ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ ছেলে এবং ১৫ দশমিক ২২ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী। তবে, ইংরেজি শব্দ চিহ্নিত করতে পেরেছেন ২৪ দশমিক ১০ শতাংশ ছেলে এবং মেয়ে শিক্ষার্থীদের ২৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ ছেলে শিক্ষার্থী।
গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল বলছে, অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬১ দশমিক ৯৫ শতাংশ ছেলে এবং ৫৩ দশমিক ১৪ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী বাংলায় গল্প পড়তে পারেননি। আর বাংলা বর্ণ পড়তে পারেননি ১০ দশমিক ২৮ শতাংশ ছেলে এবং ৮ দশমিক ৭১ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী। তবে, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বাংলায় শব্দ চিহ্নিত করতে পেরেছেন ২১ দশমিক ০৯ শতাংশ ছেলে এবং ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী।
গবেষণার ভিত্তিতে প্রাপ্ত এ ফলাফল উপস্থাপনকালে সমস্যার সমাধানে চারটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব জানানো হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক সংখ্যা বাড়ানো, বাজেটে শিক্ষা খাতের বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং তার যথাযথ বাস্তবায়ন, শ্রেণির পড়া শ্রেণিতেই শেষ করা এবং শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার কথা জানানো হয়েছে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত ক্লাসরুম ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন তথা স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করার প্রস্তাবও জানানো হয়েছে জাতীয় শিক্ষা সংলাপে।
এ সময় সভাপতির বক্তব্যে রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, আমাদের এখন শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে কাজ করতে হবে। শুধুমাত্র আয় বাড়লে শিক্ষার উন্নতি হবে, তা নয়। তাহলে তো সিলেট সবচেয়ে এগিয়ে থাকার কথা। কিন্তু, তা হয়নি। এখানে গবেষণা ফলাফল তুলে ধরা হয়েছে। আমার আহবান, আগামীতে যেন গবেষণার পাশাপাশি সীমাবদ্ধতাগুলো তুলে ধরা হয়।