প্রাথমিকে বদলি বন্ধ দুই বছর

Image

নিজস্ব প্রতিবেদক,৫ ডিসেম্বর ২০২১ঃ
অনলাইনে বদলি ব্যবস্থা চালুর কথা বললেও এখনো সেটি আলোর মুখ দেখেনি। প্রাথমিকে বদলি বন্ধ দুই বছর ধরে।

ফলে বিড়ম্বনায় পড়েছেন ৬৬ হাজার সরকারি প্রাথমিকের প্রায় সাড়ে তিন লাখ শিক্ষক। শিক্ষকরা বলছেন, এর আগে অধিদপ্তর থেকে এ বিষয়ে গণমাধ্যমে একাধিক বক্তব্য দেয়া হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

আরো খবর

এমপিও জালিয়াতি: প্রধান শিক্ষক কারাগারে

জানা যায়, শিক্ষকদের হয়রানি ও বদলি কার্যক্রম দুর্নীতিমুক্ত করতে গত বছর অক্টোবর থেকে অনলাইনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি শুরু করার ছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে তা পিছিয়ে দেয়া হয়। এরপর ২০২১ সাল থেকে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষক বদলি শুরু করতে গত ২৪ নভেম্বর শিক্ষকদের আন্তঃবদলিসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব ধরনের তথ্য চায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। কিন্তু অজানা কোনো কারণে এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মাথা ব্যথা হলে মাথা তো আর কেটে ফেলা যায় না। বদলিতে অনিয়ম দুর্নীতি হয় ঠিক আছে। কিন্তু অনলাইনের মুলা ঝুলিয়ে পুরো কার্যক্রম বন্ধ রাখা যায় না। প্রাথমিক অধিদপ্তর কার্যত কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে মোটা দাগে বলতে গেলে মাথা কেটে ফেলার মত কাজই করছে।

এ বিষয়ে মাঠ প্রশাসনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘ দুই বছরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর দৃশ্যমান কী কাজ করেছে, তা নিয়ে অনেকের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের মেয়াদ আছে আর মাত্র ১০ মাস। আমাদের শঙ্কা এ ১০ মাসেও প্রাথমিকের নিয়োগ ও বদলি প্রক্রিয়া হয় কিনা।

এর আগে সেপ্টেম্বরের শেষে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেছিলেন, প্রাথমিকের অনলাইন বদলির সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে শিক্ষক প্রশিক্ষণ দেয়া যাচ্ছিল না। আগামী অক্টোবরে কালিয়াকৈর উপজেলায় পাইলটিং শুরু হবে। পাইলটিং শেষ হলে পর্যায়ক্রমে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষক বদলি শুরু হবে।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, গাজিপুর জেলার কালিয়াকৈর এলাকার একটি বিদ্যালয়ে পাইলটিং বদলি প্রক্রিয়া চালুর ঘোষণা দেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। অক্টোবর থেকে শুরুর কথা থাকলেও ডিসেম্বরের পাইলটিং প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি।

গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন এ বিষয়ে বলেন, কালিয়াকৈর উপজেলার পাইলট প্রকল্পের বিষয়ে কোনো তথ্য আমার হাতে নেই।

অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাই বলছেন বদলি বাণিজ্য ঠেকাতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এ উদ্যোগ নিয়েছে। তবে দীর্ঘ সময়ে এ প্রক্রিয়া শুরু না করায় শিক্ষকদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ।

রংপুরের একটি প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক আয়রা মাহমুদ বলেন, আমার সঙ্গে আমার স্বামীর বিচ্ছেদ হয়েছে। এরপরও শ্বশুরবাড়ির এলাকায় আমাকে থেকে বিদ্যালয়ে ক্লাস নিতে হচ্ছে। যা শুধু অস্বস্তিকর নয়, বিড়ম্বনারও বটে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অন্য এক শিক্ষিকা বলেন, আমার ৮ মাস বিয়ে হয়েছে। স্বামী ঢাকায় চাকরি করেন। কিন্তু আমি পড়ে আছি নেত্রকোণার একটি উপজেলায়। বদলি না হওয়ার কারণে নানা সমস্যায় আছি। পরিস্থিতি এমন যে, হয় এখন আমাকে চাকরি ছাড়তে হবে, না হয় সংসার।

শিক্ষক নেতা মাহবুবর রহমান বলেন, আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শুধু শিক্ষকদের অভিভাবকই নয়; তিনি নিজেও শিক্ষকের সন্তান। উচ্চতর গ্রেড নিয়ে শিক্ষকদের দীর্ঘ দিনের দাবি আজও বাস্তবায়ন হয়নি। ১৩ত গ্রেডের সুবিধা থেকেও বঞ্চিত শতভাগ শিক্ষক। এসব বিষয়ের দ্রুত সমাধান হলে শিক্ষকদের কর্মক্ষেত্রে গতি আসতো বলে মনে করেন তিনি।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহাম্মদ মনসুরুল আলম এ বিষয়ে বলেন, সফটওয়ারটি উদ্বোধন হয়ে গেছে। মন্ত্রী মহোদয় এটি উদ্বোধন করেছেন। তবে অ্যানালগ সিস্টেম থেকে ডিজিটাল সিস্টেমে আসতে আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে একটি নীতিগত অনুমতি লাগবে। সেটি পেলে আমরা কার্যক্রম শুরু করতে পারবো।

কীভাবে শুরু করা হবে এ বিষয়ে তিনি বলেন, প্রথমে উপজেলা, আন্তঃউপজেলা, আন্তঃজেলা পরে আন্তঃবিভাগ হবে। তিনি আশা করেন উপজেলা বদলি কার্যক্রম শুরু করা হলে ৬০ ভাগ সমস্যা সমাধান হবে।

কবে শুরু হবে জানতে চাইলে আলমগীর মুহাম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, আমাদের ইচ্ছা আছে জানুয়ারি থেকে শুরু করার। যেহেতু আমাদের একটা নীতিমালাও জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত। আমরা এ সময়েই করতে চাই। এছাড়াও স্কুলের বাচ্চাদের এখন অ্যাসেসমেন্ট চলছে এখন বদলির কার্যক্রম শুরু হলে এসব কাজ বাধাগ্রস্ত হবে।

এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো উত্তর মেলেনি। পরে তাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
সুত্রঃ বাংলাদেশ জার্নাল

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।