প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দূর করার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি কর্মচারীদের জন্য অষ্টম বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের পর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতনে সৃষ্ট বৈষম্য দূর করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠকে সমিতির নেতারা এ দাবি জানান।

বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী বলেন, আজকের বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল সমস্যাটা বোঝা। তা সফল হয়েছে। সমাধান আজই পাচ্ছেন না। আমরা এটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখব। এটার জন্য একটা কমিটিও আছে।আমরা এই বিষয়টা সেখানে বিবেচনা করব।

বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, অর্থ সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোহাম্মদ আসিফ-উজ-জামান উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাহী সভাপতি ওয়েজ আহমেদ চৌধুরী ২০১৪ সালের ৯ মার্চ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের কথা উল্লেখ করেন।

যেখানে বলা হয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন প্রধান শিক্ষকদের পদমর্যাদা তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করে বেতন স্কেল ১২ নম্বর গ্রেড ও ১১ নম্বর গ্রেডে উন্নীত করা হলো। একইসঙ্গে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল যথাক্রমে ১৪ ও ১৫ নম্বর গ্রেডে উন্নীত করা হলো।

ওয়েজ আহমেদ চৌধুরী বলেন, ২০১৪ বছরের ২৭ নভেম্বরের অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেয়া অন্য একটি চিঠির ফলে আমরা পূর্বের ওই চিঠির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এরপর থেকেই জটিলতা শুরু। নতুন বেতন স্কেলেও তা সমাধান করা হয়নি। সুতরাং নতুন বেতন স্কেলে জ্যেষ্ঠ প্রধান শিক্ষকদের এতদিনের সিনিয়রিটি বা চাকরিকালীন টাইম স্কেল যুক্ত করে বেতন নির্ধারণ করলে সমস্যার সমাধান হবে।

বৈঠকে কেস স্টাডি হিসাবে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দুই শিক্ষকের বেতন কাঠামো উপস্থাপন করা হয়। যেখানে প্রজেশ চন্দ্র দাস ১৯৯৯ সালের ৫ ডিসেম্বর ১৯৭৫ টাকা বেতন স্কেলে প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগ দিয়েছেন। অন্যদিকে মো. ছয়ফুল ইসলাম একই বছর ৬ এপ্রিল ১৮৭৫ টাকা বেতন স্কেলে সহকারী শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন।

২০১৪ সালে প্রধান শিক্ষক ১১তম গ্রেডে এবং সহকারী শিক্ষকরা ১৪তম গ্রেডে অন্তর্ভুক্ত হন। অষ্টম বেতন কাঠামো কার্যকরের পরও প্রধান শিক্ষকদের বেতনে টাইম স্কেল যুক্ত হয়নি। অন্যদিকে সহকারী শিক্ষকদের বেতনে যুক্ত করা হয় তিনটি টাইম স্কেল, যা যুক্ত করে তাদের বেতন চূড়ান্ত করা হয়। যেখানে উভয় পদের বেতন ১৫ হাজার ৯৮০ টাকা হয়ে যায়।

বৈষম্যের চিত্র হিসেবে বৈঠকে অর্থমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা বিবরণীতে বলা হয়, সরকারী শিক্ষকের তুলনায় প্রধান শিক্ষক এক ধাপ উপরের স্কেলে নিয়োগ পেলেও ১৫ বছর পর প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের বেতন স্কেল ও মূল বেতন সমান। সরকারী শিক্ষকের তুলনায় প্রধান শিক্ষক পদ ২০০৬ সালে দুই ধাপ এবং ২০১৪ সালে তিন ধাপ উপরের স্কেলে উন্নীত হলেও বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন নেই। ২০১৪ সালের ৯ মার্চ প্রধান শিক্ষকদের উন্নীত বেতনে টাইম স্কেল যুক্ত করে নির্ধারণ না করায় প্রধান শিক্ষকরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

এই বিবরণীর ব্যাখ্যায় সমিতির মৌলভীবাজার জেলার সভাপতি মঞ্জুলাল দে বলেন, প্রধান শিক্ষকদের টাইম স্কেল দেয়া হলে তারা এখন ৮ নম্বর গ্রেডে চলে যেতেন।

সমিতির যুগ্ম সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০১৪ সালে আমাদের তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই ঘোষণা অনুসারে গেজেট হয়নি। রেট্রোসপেকটিভ ইফেক্ট দিয়ে সেই গেজেট হলেও এই সমস্যা থাকে না।

বৈঠকে সমিতির সভাপতি মো. আব্দুল আউয়াল তালুকদার বলেন, এ বৈষম্যের ফলে অনেক স্থানে প্রকৃত বেতন ও স্কেল উভয় দিক থেকে সহকারী শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষকদের উপরে চলে গেছেন।

বৈঠকে শিক্ষকদের পক্ষে অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন সমিতির নির্বাহী সভাপতি ওয়েছ আহমেদ চৌধুরী, মহাসম্পাদক আমিনুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।