নিজস্ব প্রতিবেদক,২৪ সেপ্টেম্বর:
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য পৃথক দুটি নিয়োগ বিধিমালা তৈরির কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে। এরই মধ্যে তা প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে অনুমোদন হয়েছে। এতে প্রধান শিক্ষক থেকে সহকারী থানা/উপজেলা শিক্ষা অফিসার (এটিইও) পদে পদোন্নতির সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে, এটিইও পদে পদোন্নতির জন্য পরীক্ষায় বসতে প্রধান শিক্ষকের বয়স হবে সর্বোচ্চ ৪৫ বছর। এ ছাড়া কমপক্ষে তিন বছরের প্রধান শিক্ষক পদের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। প্রস্তাবিত এই ‘সমন্বিত নিয়োগ বিধিমালা’ নিয়ে ক্ষুব্ধ সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তারা বলছেন, এই বিধিমালায় প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতির সুযোগ রাখা হলেও শর্তের বেড়াজালে পদোন্নতি আটকে দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষকরা বলছেন, প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি পেতেই বয়স হয়ে যায় ৪৭-৪৮ বছর। আরও তিন বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হলে বয়স হবে কমপক্ষে ৫০-৫১ বছর। এতে প্রধান শিক্ষকদের আর কর্মকর্তা হওয়ার সুযোগ থাকবে না। প্রধান শিক্ষকদের একই পদে চাকরি করে অবসরে যেতে হবে। ব্লক পোস্টে পরিণত হবে প্রধান শিক্ষক পদটি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে শিক্ষকরা
সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। শিক্ষকদের পক্ষ থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে লিখিত আবেদন করা হয়েছে।
কয়েকজন প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গেজেটেড অফিসার ও নন-গেজেটেড কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৮৫-এর অধীনে প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতির বিধান ছিল। প্রধান শিক্ষকরা সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে পদোন্নতি পেতেন। কিন্তু ১৯৯৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর বিধিমালাটি সংশোধনের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতি রহিত করা হয়।
আরো পড়ুনঃ ঠাকুরগাঁওয়ে ৫ শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত, বন্ধ ক্লাস!
খুলনার দীঘলিয়া উপজেলার প্রতিভাময়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লিপি আফরিন সমকালকে জানান, ১৯৯৪ সালে একটি আইনের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকদের সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে পদোন্নতির পথ রুদ্ধ করে দিয়ে চালু করা হয়েছিল সরাসরি নিয়োগ পদ্ধতি। এর আগে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে সিনিয়র প্রধান শিক্ষকরা সরাসরি পদোন্নতি পেতেন। এখন প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতির পথ কৌশলে রুদ্ধ করে সরাসরি এটিইও নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
প্রধান শিক্ষকদের দাবি, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গেজেটেড অফিসার ও নন-গেজেটেড কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৮৫ (সংশোধনী ২০২১)-এ বিভাগীয় পদোন্নতি পুনর্বহাল করতে হবে। কারণ, এই বিধিমালা সংশোধন না করলে প্রধান শিক্ষকদের পরবর্তী আর কোনো পদে পদোন্নতি পাওয়া সম্ভব হবে না। ওপরের পদে সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা শিক্ষা অফিসারসহ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ), প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই), উপজেলা রিসোর্স সেন্টার (ইউআরসি), থানা রিসোর্স সেন্টারসহ বিভিন্ন দপ্তরের সংশ্নিষ্ট ঊর্ধ্বতন সব পদে প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতির ব্যবস্থা রাখতে হবে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র স্বরূপ দাস সমকালকে বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গেজেটেড অফিসার ও নন-গেজেটেড কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা ২০২১-এর খসড়ায় প্রধান শিক্ষকদের ঊর্ধ্বতন পরবর্তী পদে পদোন্নতি পেতে ৪৫ বছরের বয়সসীমার বাধ্যবাধকতাসহ প্রধান শিক্ষকদের মধ্য থেকে উন্মুক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে (৮০% বিভাগীয় প্রার্থীদের ক্ষেত্রে) ও (২০% উন্মুক্ত প্রার্থীদের মধ্যে) নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে। এটা প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতি না দেওয়ার অপকৌশল। তাদের দাবি, পরবর্তী ওপরের পদে প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতির মাধ্যমে শতভাগ পদ পূরণ করতে হবে। নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়সের কোনো সীমাবদ্ধতা রাখা যাবে না। তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকের যেসব পদে সরাসরি নিয়োগ চালু রয়েছে, সেসব পদে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে আবেদনের সুযোগ দিতে হবে। সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে পরীক্ষার মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগ নয়; বরং এই পদে শতভাগ পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
আরো পড়ুনঃ ২০২১ সালের দাখিল পরীক্ষা শুরু ১৪ নভেম্বর
বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি রিয়াজ পারভেজ সমকালকে বলেন, প্রধান শিক্ষক থেকে ঊর্ধ্বতন পদগুলো বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতির বিধান যুক্ত করতে হবে নীতিমালায়। তারা চান, অনূর্ধ্ব-৪৫ বছর বয়সের কোনো বাধা থাকবে না।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য :এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মুনসুরুল আলম সমকালকে বলেন, শিক্ষকদের নিয়োগ বিধিমালা এর আগেও দুবার (২০১৩ ও ২০১৯ সালে) সংশোধন করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক পদটি আগে থেকেই ব্লক পদ ছিল। আমরা এটাকে ব্লক পদ করিনি। একসময় তো বিভাগীয় প্রার্থিতারই সুযোগ তাদের ছিল না। বিভাগীয় প্রার্থী হতে বয়স একসময় ৪০ বছর ছিল, ১৯৯৪ সালে তা ৪৫ বছর করা হয়। বয়স বাড়ানোর বিষয়ে আমরা চেষ্টা করেছি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এতে সায় দেয়নি। তারা বলেছে, অন্যান্য সরকারি দপ্তরে বয়স এমনটাই নির্ধারিত আছে। তিনি বলেন, না বুঝেই প্রধান শিক্ষকরা নানা অভিযোগ করছেন।
সুত্রঃ দৈনিক সমকাল