প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোঠা বাতিল

শিশির দাস: প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিলের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। বুধবার (৩ অক্টোবর) মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।

এর আগে গত সোমবার (১৭ সেপ্টেম্বর) প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সব ধরনের কোটা তুলে দেওয়ার সুপারিশ করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল সরকার গঠিত সচিব কমিটি।

উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে বেতন কাঠামো অনুযায়ী মোট ২০টি গ্রেড রয়েছে। এর প্রথম গ্রেডে অবস্থান করেন সচিবরা। আর প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে যারা নিয়োগ পান তাদের শুরুটা হয় নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের মধ্যে। একজন গেজেটেড বা নন গেজেটেড প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা নবম গ্রেডে নিয়োগ পেয়ে থাকেন। এসব পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বর্তমানে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০ শতাংশ জেলা কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটা, ও শর্তসাপেক্ষে ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা অর্থাৎ মোট ৫৬ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের বিধান রেখেছে সরকার। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে এই ৫৬ শতাংশ কোটা তুলে দেওয়ার সুপারিশ করেছে সচিব কমিটি। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কোনও কোটা তুলে দেওয়ার ব্যাপারে সুপারিশ দেয়নি ওই কমিটি।

এ প্রতিবেদনে মুক্তিযোদ্ধা কোটা তুলে দেওয়ার সুপারিশ করা হলেও মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণের বিষয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ রয়েছে বলে এতদিন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে সরকার আদালতের পরামর্শ চাইবে এমন কথাও বলা হয়েছিল। সচিব কমিটির প্রতিবেদন দেওয়ার আগে এ বিষয়ে আদালতের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, এ বিষয়ে রাষ্ট্রের আইন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এর আগে বলেছেন, পিছিয়ে পড়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা উনি রাখবেন। প্রতিবেদনে এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সচিব কমিটি ব্যাপকভাবে পর্যবেক্ষণ ও বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখেছে, এখন আর পিছিয়ে পড়া কোনও জনগোষ্ঠী নেই। সবাই এগিয়ে গেছে। তাই তাদের জন্য কোনও কোটা রাখার সুপারিশ করা হয়নি।
কীভাবে ও কবে এ প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই প্রতিবেদন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হয়ে আবার প্রধানমন্ত্রীর দফতরে অনুমোদনের জন্য যাবে। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অনুমোদন পাওয়ার পর তা মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনুমোদন পাওয়ার পর এ প্রজ্ঞাপন জারি হবে।
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহের মন্ত্রিসভার বৈঠকে এটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে।’

উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবি বা সংস্কার নিয়ে চাকরি প্রত্যাশীদের অসন্তোষ দীর্ঘদিন থেকেই। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এ অসন্তোষ আন্দোলনে রূপ নিলে তা সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে। এ ঘটনায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও আটকের ঘটনা ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে গত ১১ এপ্রিল সংসদে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল বা সংস্কারের প্রয়োজন আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে সচিব কমিটি গঠন করে সরকার।
তবে এই কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ রাখা না রাখা বা পরিমার্জন, পরিবর্ধন করার এখতিয়ার সরকারের।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।