পর্নোগ্রাফি নিয়ে নানা নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। বলা হয়ে থাকে, পর্নগ্রাফি ব্যক্তিকে যৌনতায় আগ্রাসী করে তোলে। এ ছাড়া যৌনতায় অতৃপ্তি, বিলম্বিত বীর্যপাত, অস্বাভাবিক যৌন আচরণ এবং শরীর সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়।
তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এসব ধারণার কোনো ভিত্তি পাওয়া যায়নি। গবেষকেরা বলছেন, সঙ্গমের সময় পুরুষাঙ্গের অঙ্গের উত্থানের সঙ্গে পর্ন আসক্তির সম্পর্ক নেই। যৌনতায় অতৃপ্তির পেছনেও পর্নগ্রাফির ভূমিকা নেই। মূলত বয়স বৃদ্ধি, উদ্বেগ, বিষণ্ণতা, হস্তমৈথুন, যৌনতায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলার মতো বেশকিছু কারণে এ সমস্যায় ভোগেন পুরুষ।
আমেরিকার মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ডেভিড রোল্যান্ড ও তার দল সাড়ে ৩ হাজারের বেশি পুরুষের ওপর জরিপ চালিয়ে এমন ফল পেয়েছেন। তাদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ইমপোটেন্স রিসার্চে।
পর্নোগ্রাফি নিয়ে নানা জনের নানা মত রয়েছে। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতায় মানুষ চাইলেই এখন পর্ন দেখতে পারে। যদিও পর্নোগ্রাফি নিয়ে সমাজে নানা নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। তবে পর্নগ্রাফিতে আসক্তির সঙ্গে পুরুষের যৌনাঙ্গ উত্থান সমস্যার কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি গবেষণায়।
এর আগে ইতালির অন্য এক দল গবেষকের গবেষণায় বলা হয়, পর্ন-আসক্তির কারণে অনেকে ইরেক্টাইল ডিসফাংশন বা লিঙ্গ উত্থান সমস্যায় ভোগেন। তবে এই দাবির সঙ্গে একমত নন অধ্যাপক ডেভিড রোল্যান্ড। তিনি মনে করছেন, ওই গবেষণায় পদ্ধতিগত কিছু ত্রুটি থাকায় আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার।
বিষয়টি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পেতে রোল্যান্ড ও তার সহকর্মীরা ইংরেজিভাষী দেশ এবং হাঙ্গেরি থেকে অনলাইন মাধ্যমে ৩ হাজার ৫৮৬ জন পুরুষকে বেছে নিয়ে তাদের ওপর জরিপ চালান।
উত্তরদাতাদের মধ্যে যারা সঙ্গীর সঙ্গে যৌনমিলন করেননি বা যাদের কখনও সঙ্গী ছিল না তাদের বক্তব্য বাদ দেয়া হয়। বাকিদের সামনে জনসংখ্যা সংক্রান্ত প্রশ্ন, উদ্বেগ বা বিষণ্নতা, চিকিৎসা পরিস্থিতি, যৌন মিলন, বর্তমান যৌন সঙ্গীর সংখ্যা, যৌনতায় আগ্রহ বা গুরুত্ব, সম্পর্ক, যৌন তৃপ্তি, হস্তমৈথুন, সঙ্গীর যৌনতা এবং পর্ন দেখার সময়সীমা নিয়ে প্রশ্ন রাখা হয়। তারা দ্রুত বা দেরিতে বীর্যপাত এবং লিঙ্গ উত্থানজনিত প্রশ্নগুলোরও উত্তর দেন।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের বক্তব্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, লিঙ্গ উত্থানে সমস্যার সঙ্গে পর্নগ্রাফির খুব একটা সম্পর্ক নেই। মূলত বয়স বৃদ্ধি, উদ্বেগ বা বিষণ্নতা, চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্যা, মাঝেমধ্যে যৌনমিলন, যৌনতায় কম গুরুত্ব দেয়া এবং যৌন ও সম্পর্কের তৃপ্তি কমে যাওয়ায় তারা এই সমস্যায় ভুগছেন।
জরিপে একইসঙ্গে উঠে এসেছে কেউ বেশি বেশি হস্তমৈথুনে আসক্ত থাকলে লিঙ্গ উত্থানজনিত সমস্যায় পড়তে পারেন।
গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক রোল্যান্ড বলেন, ‘পর্নগ্রাফি ও যৌন তৃপ্তি বিষয়ক আগের গবেষণায় পদ্ধতিগত বেশকিছু সমস্যা ছিল। এবারের গবেষণায় সেসব কাটিয়ে উঠতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়া হয়। তারপরও অনেক সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে।
‘জরিপটি অনলাইনে চালানো হয়েছে। অনেকেই হয়ত বিষয়টিকে গুরুত্বসহ নেননি বা অনেকে যেনতেনভাবে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। তাই এই জরিপ থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো ঠিক হবে না।
‘এছাড়া এই গবেষণা-জরিপে কেবল পশ্চিমা নাগরিকদের বক্তব্য ও অভিজ্ঞতা নেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এমন সম্প্রদায়গুলোকে এই কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করা যেতে পারে যারা যৌনতা নিয়ে কথা বলতে খুব বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। তাদের বক্তব্য পেলে এ বিষয়ে আরও পরিষ্কার ধারণা মিলবে।’