ঢাকাঃ পরিবেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ নদী। অতিরিক্ত দূষণ, নদীভাঙন, নদীদখল, নাব্য সংকট প্রভৃতি কারণে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ছে জনজীবনে। নদ-নদী সুরক্ষায় জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে পাঠ্যপুস্তকে নদী সংশ্লিষ্ট পাঠ্য বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তৃতীয় থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষাক্রমে বিষয়টি যুক্ত করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) পাঠানো হয়েছে নির্দেশনা।
আরো পড়ুন: অষ্টম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন কার্ড বিতরণ শুরু
সংশ্লিষ্ট মাধ্যমে জানা যায়, নদ-নদী সুরক্ষায় জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধি ও জনসচেতনতা তৈরিতে তৃতীয়-দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তকে বিষয় অন্তর্ভুক্তকরণে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন থেকে সুপারিশ করা হয়। বিষয়টি দফায় দফায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এনসিটিবিতে একটি নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। এর আলোকে আগামী বছরের পাঠ্যবইতে নদী ও পরিবেশ সংক্রান্ত আরও কী কী বিষয় যুক্ত করা যায় সেটি পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে এনসিটিবি।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, দেশের অনেক নদী এখন মানুষের দখলে চলে গেছে। তার ওপর নদীর নাব্য ও দূষণ রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। একদিকে আমরা উদ্যোগ নিয়ে দূষণমুক্ত করার চেষ্টা করছি, অন্যদিকে প্রতিনিয়ত নদীর পানিতে ময়লা-আর্বজনা ফেলে পানি নষ্ট করা হচ্ছে। এসব বিষয়ে মানুষকে আরও সচেতন করতে শিশুকাল থেকেই নদী ও পরিবেশ রক্ষায় সচেতন করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তৃতীয় থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের একটি অধ্যায়ে বিশদভাবে নদী রক্ষা ও পরিবেশ বিষয়ে পাঠ যুক্ত করতে সুপারিশ জানিয়ে আসছি। বর্তমানে এসব বিষয়ে যতটুকু পাঠ রয়েছে তা দিয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞানার্জন করা সম্ভব নয় বলে জানানো হয়েছে। শিশুকাল থেকে পরিবেশ রক্ষায় উদ্বুদ্ধ করতে পারলে পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব হবে।
সংশ্লিষ্টরা জনান, দেশের গুরুত্বপূর্ণ নদ-নদীর নাব্য ও নদীর গতিপ্রবাহ অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ, সুপারিশ প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে গঠিত টাস্কফোর্স কমিটির চতুর্থ সভা অনুষ্ঠিত হয়। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ে একটি সভা হয়। সেখানে নদীর নাব্য বাড়াতে ও পানি দূষণমুক্ত করতে ১৫টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর মধ্যে ঢাকা শহরের খালগুলোর সঠিক তথ্য উদ্ঘাটনের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের নেতৃত্বে ঢাকা ওয়াসা, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, রাজউক, বিআইডাব্লিউটিএ, জেলা প্রশাসন ও ঢাকার প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি নৌ জরিপ টিম গঠন করা, ঢাকার চারপাশের নদী ও অভ্যন্তরীণ খালগুলো অবৈধ দখলমুক্ত এবং শিল্পবর্জ্য, ময়লা-আবর্জনা খাল ও নদীতে ফেলা বন্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া, সারাদেশের নদীগুলো থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা, ঢাকার খালগুলো সিএস দাগ অনুসারে চিহ্নিতকরণসহ অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করে খালগুলো পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থা নেওয়া।
অন্য সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে- তরল বর্জ্য হিসেবে ওয়াসার স্যুয়ারেজ ও সিটি করপোরেশনের ড্রেনেজ বর্জ্য ও কঠিন বর্জ্য হিসেবে গৃহস্থালি, ব্যবসায়িক, শিল্প, হাসপাতাল বর্জ্যসহ অন্য বর্জ্যের মাধ্যমে ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর দূষণ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া, তৃতীয় থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যসূচিতে নদী ও মাবনজীবন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া ইত্যাদি। এসব সিদ্ধান্তের আলোকে নদীরক্ষার বিষয় পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে সুপারিশ করা হয়। সেই সুপারিশের আলোকে এনসিটিবিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন বিষয় পাঠ্যপুস্তকে যুক্ত করতে সুপারিশ করা হয়। এর আলোকে নদীরক্ষা বিষয়েও পাঠ্যবইয়ে বিস্তারিত পাঠ যুক্ত করতে বলা হয়েছে। আমাদের বইতে এ বিষয়ে কী ধরনের পাঠ আছে সেটি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এরপর নতুন কী কী যুক্ত করা যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, পাঠ্যবই পড়ে শিক্ষার্থীরা সচেতন হয় না, বরং তাদের জ্ঞানার্জন হয়। সেটি মাথায় রেখে বইয়ের শিক্ষাক্রম বাছাই করা হয়। লিফলেট বিতরণ করে মানুষকে সচেতন করা যায়, পাঠ্যবই সেটি নয়। সেটি গুরুত্ব দিয়ে নতুন কিছু যুক্ত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।