১৯৮৯ সাল থেকে কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিয়মিত বেতনভাতা প্রদান করলেও চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে বেতনাভাতা প্রদানে গড়িমসি শুরু করে দেশের অন্যতম মোবাইল অপারেটর কোম্পানি সিটিসেল। ভয়াবহ অর্থ সঙ্কটের কারণে গত এপ্রিল থেকে বেতনভাতা বন্ধ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে চরম হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের মধ্যে।
জানা গেছে, ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বেতন নিয়ে কোন সমস্যা হয়নি। তবে গত জানুয়ারি মাস থেকে হঠাৎ করে কর্মীদের বেতন বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসেও বেতন দেয়া হয়নি। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ৫৪৩ জন স্থায়ী কর্মী রয়েছেন। এর বাইরেও কিছু কর্মী চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিম্নমানের প্রযুক্তি, মানহীন গ্রাহক সেবা, দুর্নীতি-অনিয়ম, প্রতারণায় ডুবতে বসেছে কোম্পানিটি। এসব কারণে প্রতিদিনই কমছে সিটিসেলের গ্রাহক। ৫ বছরে সিটিসেল মোট ১০ লাখ গ্রাহক হারিয়েছে। ২০১০ সালের আগস্ট মাসে সিটিসেলের গ্রাহক সংখ্যা ছিল ২২ লাখ ৯৫ হাজার।
বিটিআরসির প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী মে মাসে তাদের গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৩৫ হাজারে। বর্তমানে সিটিসেলের মার্কেট শেয়ার ১ শতাংশের নিচে অস্থান করছে।
বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, নিয়মিত অর্থ পরিশোধ না করায় সিটিসেলের কাছে সরকারের পাওনাও দিনদিন বাড়ছে। গত বছরের নভেম্বর শেষে প্রতিষ্ঠানটির কাছে সরকারের পাওনা দাঁড়িয়েছে ২৮০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর মধ্যে টুজি লাইসেন্সের আওতায় তরঙ্গ বরাদ্দ ও নবায়ন ফি বাবদ পাওনার পরিমাণ ২২৯ কোটি টাকা। এছাড়া রাজস্ব ভাগাভাগি বাবদ পাওনা দাঁড়িয়েছে ১৯ কোটি ২০ লাখ টাকা, তরঙ্গ বরাদ্দ চার্জ বাবদ ১৯ কোটি ৭৫ লাখ, সামাজিক সুরক্ষা তহবিলের ৭ কোটি ৪৫ লাখ ও লাইসেন্স ফি বাবদ ৫ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে সিটিসেলের হেড অব মার্কেটিং তাসলিম আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোন কথা বলতে বাজি হননি।
উল্লেখ্য, বর্তমানে সিটিসেলের মার্কেট শেয়ার ১ শতাংশও নেই। ২০০৭ সালে সিটিসেলের মার্কেট শেয়ার ছিল ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ। ২০০৮ সালে সিটিসেলের মার্কেট শেয়ার ছিল ৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ। ২০০৯ সালে কিছুটা বাড়লেও ২০১০ সালে কমে দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৩১ শতাংশে। ২০১১ সালে হয় ২ দশমিক ২৬ শতাংশে আর ২০১২ সালে এসে দাঁড়ায় ২ দশমিক ০১ শতাংশে।
২০১৩ সালে সে মার্কেট শেয়ার ১ শতাংশের নিচে নেমে আসে। ২০১৪ সালের শেষ দিকে আরো অর্ধেকে নেমে আসে। ১৯৮৯ সালে বিটিআরসি থেকে টেলিযোগাযোগ সেবার লাইসেন্স পায় সিটিসেল।
যাত্রার সময় এটি ছিল দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম সেলফোন কোম্পানি। প্রথম থেকে সিটিসেল বাংলাদেশের একমাত্র সিডিএমএ মোবাইল অপারেটর হিসেবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। কোম্পানিটির বর্তমানে ৪৫ শতাংশ মালিকানা সিঙ্গাপুরভিত্তিক কোম্পানি সিংটেলের আর ৫৫ শতাংশ মালিকানা দেশীয় প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক গ্রুপ ও ফারইস্ট টেলিকমের।