জরাজীর্ণ ও ভূতুড়ে বাড়িগুলো একেকটি যেন মৃত্যুফাঁদ!

Image

ডেস্ক,২৬ অক্টোবর ২০২২: শাঁখাশিল্পীদের নামানুসারে শাঁখারী বাজারের উৎপত্তি। শাঁখারী বাজার মানেই দেব-দেবীর পূজা-অর্চনা ও পূজাপণ্যের হাট। যুগ যুগ ধরে এখানে বসবাস করে আসছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। তবে, জরাজীর্ণ ও ভূতুড়ে বাড়িগুলো একেকটি যেন মৃত্যুফাঁদ! বংশপরম্পরায় ঐতিহ্য রক্ষা এবং অর্থের অভাবে জীবনকে হাতে নিয়ে মৃত্যুর সঙ্গে খেলা করছেন এখানকার মানুষ। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনায় প্রাণ যেতে পারে তাদের।
dp old city 04 2022

রাজধানীর শাঁখারী বাজারের জরাজীর্ণ ভবনগুলো বিশ্ব ঐতিহ্য (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ) হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এ কারণে চাইলেই যে কেউ ভবনগুলো ভাঙতে পারবে না বা নতুন করে নির্মাণ করতে পারবে না। তবে, এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ সেখানকার বসবাসকারীরা। কেউ কেউ বলছেন, বিভিন্ন মাধ্যমে লেখালেখির কারণে ভবনগুলো হেরিটেজ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ফলে আজ তাদের এ বেহাল দশা। এছাড়া কিছুদিন পরপর থানা ও রাজউক থেকে লোকজন এসে তাদের হেনস্তা করে, টাকা দাবি করে।

শাঁখারী বাজারে মোট ভবন আছে ১৪২টি। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শতাধিক এমন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বসবাস করছেন ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ। এক-একটি ভবনে ১০টির অধিক পরিবারের বসবাস।

শাঁখারী বাজার নাগরিক কমিটির নেতা অমর সুর

ভবনগুলো এতটাই জরাজীর্ণ যে একটু আঘাত পেলেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়বে। সেখানে প্রবেশের রাস্তা অত্যন্ত সরু ও ঘুটঘুটে অন্ধকার। একটি মাত্র রান্নাঘরে চলে সব পরিবারের খাবারের আয়োজন। শোয়ার ঘরগুলো খুবই ছোট, থাকতে হয় গাদাগাদি করে। একই কক্ষে থাকা-খাওয়া-ঘুম, আসবাবপত্রও আছে। যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। কক্ষগুলোও বেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ, পাশ ও মাথার দিকটা অত্যন্ত সংকীর্ণ। এমন অনেক কক্ষ আছে যেখানে দাঁড়ালে আর চলাফেরা করা যায় না। বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তা যেন তাদের নিশ্বাস ফেলার জায়গা!

ভবনগুলো অধিকাংশই চারতলা। দুটি বাসার মধ্যবর্তী দেয়াল লাগোয়া, দরজা-জানালাবিহীন এবং মাঝে কোনো ফাঁকা জায়গা নেই। একতলার উপরের মধ্যবর্তী স্থান ছোট প্রাঙ্গণের ন্যায় খোলা।

শাঁখারী বাজারের ১১৩নং ভবনে ছয়টি পরিবারের বসবাস। সেখানকার বাসিন্দা গৃহিণী শ্রাবন্তী সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, এমন জরাজীর্ণ বাড়িতে থাকতে থাকতে অভ্যাস হয়ে গেছে। এখন আর ভয় লাগে না। সামর্থ্য নেই তা-ই ভালো বাড়িতে যেতে পারি না। বড় বিষয় হলো, এটা তো আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। আমাদের পূর্বপুরুষরা এখানে বসবাস করে গেছেন। তাদের ধারাবাহিকতা ও ঐতিহ্য হিসেবে আমরা এখানে বসবাস করছি। ভাঙা হোক, ঝুঁকিপূর্ণ হোক, নিজের বাড়ি তো!

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ১০ ও ১১নং ভবনের দুই বাসিন্দা বলেন, মোট ২২টি পরিবারের বসবাস এখানে। শতাধিকের ওপর সদস্য। সবাই আত্মীয়-স্বজন। সুখে-দুঃখে একসঙ্গে আছি— এটাই তো আনন্দ।

‘মৃত্যুর ভয় তো আছেই কিন্তু কী করব, সামর্থ্য নেই। যারা আছে, সবাই গরিব। যারা বসবাস করছে, সবাই স্থানীয়। তাই কেউ এ জায়গা ছেড়ে অন্যত্র যেতে চায় না’— বলেন পোড় খাওয়া ওই দুই বাসিন্দা। তারা হাতজোড় করে বলেন, ‘আমাদের জীবন নিয়ে…, এখানে আমাদের থাকতে দিন। আমাদের ডিস্টার্ব করিয়েন না। আপনারা সাংবাদিক, নিউজ করে আমাদের ক্ষতি করেন। কিছুদিন আগে হেরিটেজ হিসেবে চিহ্নিত করে বাড়িগুলো আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়।’

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।